শাস্ত্রীয় পরম্পরায় ধ্রুপদই একমাত্র প্রধান শৈলী যার প্রতি রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল সব চেয়ে বেশি। সেই ধ্রুপদ শৈলীর চব্বিশটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় ধ্রুপদ নিয়ে উৎসাহ উদ্ভাসের ‘ধ্রুবপদ আবর্ত-৩’ অনুষ্ঠিত হল জি ডি বিড়লা সভাঘরে। ইতিপূর্বে এই একই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দু’টি অনুষ্ঠান সংস্থার প্রযোজনায় প্রযোজিত হয়েছে বলেই এই অনুষ্ঠান ‘আবর্ত-৩’। শিল্পীদ্বয় ছিলেন রবীন্দ্রগানে রাহুল মিত্র ও শাস্ত্রীয় ধ্রুপদে উদয় ভাওয়ালকর।
রাহুল বরাবরের মতোই এ বারেও গান নির্বাচনের মধ্যে গভীর ব্যঞ্জনার কথা বলতে চেয়েছেন। যে সকল গান নির্বাচিত হয়েছিল তার মধ্যেই ফুটে উঠেছে অন্তরতমের অন্তরে থাকার আশ্চর্য অনুভূতির কথা। যে অনুভূতি অনন্যসুন্দর অনির্বচনীয় ভাবের। ‘পূর্ণ আনন্দ’, ‘আছো অন্তরে’, ‘সাধনধন’ প্রভৃতি চারটি শীর্ষকে দু’টি করে গানের চয়নে প্রতিটি অধ্যায়কে সাজিয়েছিলেন তিনি। গানগুলি প্রতিনিয়ত শোনা যায় না। |
প্রথম গান বিলাওল রাগাশ্রিত চৌতালে আধারিত ‘আজি হেরি সংসার’। তেমনই শেষ গান ‘শান্তি করো বরিষণ’। তবে ‘পেয়েছি সন্ধান তব’ গানটি থেকে রাহুল নিজস্ব মেজাজে গান শোনালেন এবং বাকি সব গানের গভীরতাকে স্পর্শ করলেন। এর মধ্যে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য ‘তুমি জাগিছো কে’, ‘নব নব পল্লবরাজি’, ‘মম অঙ্গনে স্বামী’, ‘শুভ্র আসনে বিরাজ’, ‘গভীর রজনী’ ও ‘সদা থাকো আনন্দে’ গানগুলি।
উদয় ভাওয়ালকর প্রথমে গাইলেন রাগ হংসধ্বনি, পরে তারানা। শেষ করলেন ভৈরবীতে নিবদ্ধ ‘ভবানি দয়ানি’ দিয়ে।
উদয়ের গানের অন্যতম বৈশিষ্ট হল ভাব ও সুরের গভীরতা। তাঁর নির্বাচন, গায়নশৈলী, স্পষ্ট মুক্তকণ্ঠ- সব মিলিয়ে তাঁর কণ্ঠে শাস্ত্রীয় ধ্রুপদ শোনা এক অভিজ্ঞতা। রাবীন্দ্রিক ধ্রুপদ ‘বাণী তব ধায়’ গানটি রচিত হয় আড়ানা রাগে। উদয় দীর্ঘ সময় নিয়ে মূল গানটি গেয়ে রীতিমতো আসর জমিয়ে দিলেন।
|
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে গুরু গিরিধারী নায়েকের পরিচালনায় ‘ওড়িশি আশ্রম’-এর নৃত্যানুষ্ঠানের শুরু ‘মঙ্গলাচরণ’ দিয়ে। এর পর ছিল বসন্ত পল্লবী, বটু, হরিরিয়া, মোহনার মতো শাস্ত্রীয় পদগুলি। নজর কাড়ে ওড়িশি আঙ্গিকে রবীন্দ্র-নজরুলগীতির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন। সুজাতা নায়েকের ‘শ্যামাতন্বী আমি’ মনে দাগ কাটে। সে দিন মূল আকর্ষণ ছিল নৃত্যনাটিকা ‘অষ্টনায়িকা’। মহাশ্বেতা দত্ত, চিত্রা মুখোপাধ্যায়, সুমেধা সেনগুপ্ত, সুজাতা নায়েক, অহনা বসু-সহ অন্যান্যদের নৃত্য পরিবেশন যথাযথ। |