|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
অপর্ণা সেন বললেন বাংলা রিডিং পড়ো |
‘ইতি মৃণালিনী’র অডিশন থেকে জিম করা, নাচ-গানের জন্য তৈরি হওয়া।
সাহেব ভট্টাচার্য। আড্ডা মারলেন দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী-র সঙ্গে |
পত্রিকা: পর পর বড় রিলিজ। ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘আমি সুভাষ বলছি’...
সাহেব: তা বলতে পারেন। আসলে বহু দিনের অপেক্ষা। কাজ চাওয়া। ঠিক কাজের জন্য অপেক্ষা করা। এই সব যে করেছি, সেটা এখন পর্দায় উঠে আসছে দেখে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে, আমার পরিশ্রম বৃথা যায়নি। এটাও মনে হচ্ছে যে আমি লাকি। আর আমার কাছে লাক হল পরিশ্রম আর সঠিক সময়ের মিশ্রণ। ঠিক সময়ে পরিশ্রম করে গেছি। ফলে এই ভাল ছবিগুলোতে আমায় দেখতে পাচ্ছেন।
পত্রিকা: আপনার কাছে বড় ব্যানারটাই কি বড় কথা?
সাহেব: সেটা একটা বড় কথা তো বটেই। কেন না আমি জানতাম অপর্ণা সেন, একটা সন্দীপ রায়ের ছবি করলেই লোকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে। লোকে কাজটা মনে রাখবে।
পত্রিকা: কিন্তু এই ছবিগুলোতে তো আপনি নায়ক নন। তার মানে বড় ব্যানার আর ভাল অভিনেতা এই ট্যাগটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ? নায়ক হওয়া নয়?
সাহেব: দেখুন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা সবাই পণ্য। নিজেকে বিক্রি করতে হয়। সেখানে এটা করব না, ওটা করব না বলার মানে হয় না। আর আমি ভাল অভিনয় করতে চাই মানে নায়ক হতে চাই না এটা কে বলল? তবে এটা ঠিক যে কাজের ব্যাপারে আমি খুব ‘চুজি’। অনেক অফারে না করে দিয়েছি। ভাল রোলের অপেক্ষায় থেকেছি।
পত্রিকা: বুঝলাম। কোন কোন পরিচালক বা প্রযোজককে না করেছেন?
সাহেব: অনেককে। সেই জন্য অনেকে ভুল বুঝেছেন। রাগ করেছেন। কিন্তু আমাকে কঠিন হতেই হয়েছে। যাদের না করেছি তারা ইন্ডাস্ট্রির খুব বড় বড় ব্যানার। কিন্তু তাদের ছবি করার মানসিকতার সঙ্গে আমারটা মেলেনি। তাই না করতে বাধ্য হয়েছি।
পত্রিকা: তাঁরা কারা? বা কোন ছবির জন্য অফার করেছিলেন?
সাহেব: ধুর! সেটা বলা যায় নাকি?
পত্রিকা: এটা কি বলা যায়, অভিনয়টাকে কেরিয়ার করবেন সেটা নিয়ে কবে থেকে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন?
সাহেব: (হেসে ফেলে) সেই ছোট্টবেলা থেকে। আমার তো মনে হয় এই যাঁরা বলেন ‘কখনও ভাবিনি যে অভিনেতা হব’ তাঁরা একদম মিথ্যা কথা বলছেন। এই দেশে লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে অভিনেতা হওয়ার জন্য মারামারি করছে আর এরা বলছে জাস্ট কোনও চেষ্টা না করেই অভিনেতা হয়ে গেছে। সেটা আবার হয় নাকি? আমি তো সেই যবে থেকে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করছি তবে থেকেই মনে মনে এই ভাবনাটা ভেবে নিয়েছি যে অভিনয়ই করব। |
|
ছবি: কৌশিক সরকার |
পত্রিকা: শিশুশিল্পী হিসেবে তো অনেক কাজ করেছেন। অঞ্জন চৌধুরী থেকে প্রভাত রায়। ‘লাঠি’ থেকে ‘আব্বাজান’। সব নামকরা ছবি। পরবর্তীতে এঁদের কাছে সাহায্য চাননি?
সাহেব: এঁদের কাছ থেকে আমি অনেক শিখেছি। আর কাজের ব্যাপারে আমি হাতে গোনা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছি। এক, হরনাথকাকু। হরনাথ চক্রবতীর্। উনি আমাকে সেই ছোট্টবেলা থেকে চেনেন। আর দুই, বিপ্লব জেঠু। বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। এ রকম কয়েক জন ছাড়া কাজ চাওয়া বা ওই জাতীয় কিছু কখনও করিনি।
পত্রিকা: বাবা ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। বিরাট নাম। তিনি কোনও ভাবে সাহায্য করেননি?
সাহেব: কাজের জন্য যখন প্রচুর চেষ্টা করছি, কিন্তু সে ভাবে কিছু হচ্ছে না, তখন এক-আধ জনের সঙ্গে খুব ক্যাজুয়ালি কথা বলে থাকবেন। তবে ওইটুকুই। বাবা খুব কড়া ধাতের মানুষ। বিখ্যাত বাবার ছেলে বলে আমি বেশি সুযোগ পাব এই যুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী। সেই ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখেছি একটা কথাই বলতে, “যা করবে ভাল করে করবে। মন দিয়ে করবে। ফাঁকি দিয়ে ভাল কাজ হয় না।” খালি বলতেন, বিখ্যাত বাবার ছেলে বলে অন্যদের তুলনায় কম পরিশ্রম করার প্রবণতা যেন আমার মধ্যে না আসে।
পত্রিকা: কাজের কথা যাঁদের সঙ্গে বলেছেন তাঁদের কী বলতেন? প্লিজ, একটা সুযোগ দিন?
সাহেব: না। বলতাম, আমার উপযোগী কোনও চরিত্র থাকলে অডিশনে ডাকুন। আমায় নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন।
পত্রিকা: অডিশনে ডাকার কথা বলতেন? মানে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করা?
সাহেব: হ্যাঁ, সেটাই আমার ভাল লাগে। আমাকে এমনি এমনি একটা সুযোগ কেন দেওয়া হবে যদি আমি যোগ্য না হই?
পত্রিকা: ‘ইতি মৃণালিনী’তে অপর্ণা সেনের কাছেও অডিশন দিয়েছিলেন?
সাহেব: ভেঙ্কটেশ ফিল্মস খবরটা দেয় যে, অপর্ণা সেন এই চরিত্রটার জন্য অভিনেতা খুঁজছেন। ওঁরা আমাকে অপর্ণা সেনের বাড়ি গিয়ে দেখা করতে বললেন। গেলাম।
পত্রিকা: এবং পরীক্ষা দিতে হল?
সাহেব: (হেসে ফেলে) খানিকটা। উনি আমায় একটা বাংলা কবিতা যেটা বেশ লম্বা, পড়ে শোনাতে বললেন। চরিত্রের খাতিরে সেটার দরকার ছিল। কিন্তু আমি তো ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া ছেলে। বাংলা রিডিং তাও আবার অপর্ণা সেনের সামনে তাঁরই ছবির জন্য...বুঝতেই পারছেন অবস্থাটা।
পত্রিকা: সামলালেন কী করে?
সাহেব: ওঁকে বললাম, ম্যাম, আপনি যদি এক বার পড়ে দেখিয়ে দেন। উনি গোটাটা নিজে পড়ে শোনালেন। আমি সেটা খুব মন দিয়ে ‘ফলো’ করলাম। মানে ওই উচ্চারণ ইত্যাদি। তার পর ওঁর পড়া শেষ হলে নিজে মনে মনে দু’বার পড়ে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। পড়া শেষ হতে উনি বললেন, আমাকে পরে জানাবেন।
এর কয়েক দিন বাদেই ফোন পেলাম যে আমি সিলেক্টেড। ওয়ার্কশপ করতে হবে।
পত্রিকা: তোপসের জন্য তো এ রকম কিছু করতে হয়নি?
সাহেব: একেবারে উল্টো অভিজ্ঞতা। কোনও ওয়ার্কশপ-টপ না। ‘গোরস্থানে..’র জন্য সন্দীপ রায় শুধু চিত্রনাট্যটা দিয়ে বলেছিলেন, এটা ভাল করে পড়ে নিয়ো। জানতে চেয়েছিলাম, ওয়ার্কশপ করতে হবে না? উনি অবাক হয়ে বললেন, কীসের ওয়ার্কশপ? চিত্রনাট্যটা পড়ো। যদি কোনও অসুবিধা মনে হয় সেটে আমি থাকব, বেণু থাকবে। আমাদের জিজ্ঞেস করে নিয়ো। তা হলেই হবে।
পত্রিকা: ভেঙ্কটেশ ফিল্মস নাকি আপনাকে লঞ্চ করার কথা ভাবছে অনেক দিন ধরেই?
সাহেব: আমি আগে ওদের অফার ফিরিয়ে দিয়েছি। তখন মনে হয়েছিল, আমি ওই ছবির জন্য প্রস্তুত নই...
পত্রিকা: মানে দেবের মতো নাচার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না?
সাহেব: ওই রকমই কিছু একটা। তবে পুরোপুরি মেনস্ট্রিম ছবিতে নায়ক তো অবশ্যই হতে চাইব কখনও না কখনও।
পত্রিকা: এই যে ভেঙ্কটেশকে না করেছিলেন, সে জন্য সম্পর্কটা তার মানে নষ্ট হয়নি?
সাহেব: না না, একদম না। আমার তো (হাসতে হাসতে) প্রায় সব ছবিই ওদের সঙ্গেই। ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘আমি সুভাষ বলছি’, ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। যে ছবিটা আমি করতে রাজি হইনি সেটা যখন সুপার ডুপার হিট করেছে, মণিদা কী বলেছিলেন জানেন, “দ্যাখ, এটা তুই করতে পারতিস।”
পত্রিকা: কোন ছবি সেটা?
সাহেব: এই রে! সেটা এখন বলা যায় নাকি?
পত্রিকা: নতুন কাজ নিয়ে কী ভাবছেন?
সাহেব: একদম অন্য রকম ভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে চাই এ বার। তার জন্য জিম করছি। নাচ-গানের জন্য নিজেকে তৈরি করছি।
পত্রিকা: তার মানে নায়ক সাহেব?
সাহেব: নয় কেন?
পত্রিকা: আর সেটা কি ভেঙ্কটেশের ব্যানারে?
সাহেব: (হেসে) এ সব নিয়ে এক্ষুনি কিছু বলছি না...
পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। জীবনটা নিশ্চয়ই পাল্টেছে বিখ্যাত হয়ে? মেয়েরা প্রপোজ-ট্রপোজ করছে...
সাহেব: ওরে বাবা! এ সব প্রশ্ন করবেন না। বাবা প্রচণ্ড রেগে যাবেন।
পত্রিকা: আপনি সিঙ্গল কি না সেটা তো বলুন! যাতে মেয়ে ফ্যানেরা জানতে পারে..
সাহেব: প্লিজ, প্লিজ এ সব নিয়ে কথা বলতে বলবেন না। বাবা আপনাদের কাগজ রোজ পড়েন, প্রচণ্ড বকাবকি করবেন। |
|
|
|
|
|