দক্ষিণ কলকাতা
নতুন ছাউনি
সাজছে শহর
বাস ধরার জন্য রোদে বা বৃষ্টিতে আর ছাতা মাথায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
টিনের কিংবা সিমেন্টের ভাঙাচোরা চেয়ারবিহীন বাসছাউনির বদলে শহরজুড়ে তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে অ্যালুমিনিয়ামের শেডওয়ালা পরিষ্কার বাসছাউনি। থাকছে বসার চেয়ার। সন্ধে হলেই বাসছাউনিগুলি আলোয় ঝলমল করে উঠবে। থাকছে বিভিন্ন মনীষীর ছবি, উদ্ধৃতি, কবিতাও। শহরের সৌন্দর্যায়নের অঙ্গ হিসেবে এ ভাবেই ফুটপাথের উপর নতুন আঙ্গিকের নতুন বাসছাউনি তৈরি করার নির্দেশ দিল কলকাতা পুরসভা। বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শহরের বাসছাউনিগুলি সুন্দর ভাবে তৈরি করার দায়িত্ব।
প্রাথমিক পর্যায়ে শহরজুড়ে ২৯১টি বাসছাউনি করা হচ্ছে বলে পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতর থেকে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, পুরসভা টেন্ডারের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংস্থাকে বাসছাউনি তৈরি করার অনুমতি দিয়েছে। পরে ওই সংস্থাগুলিই ছাউনিগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাস্তার বাসছাউনি নতুন করে তৈরিও হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য জায়গায় পুরনো ছাউনিগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। চলছে নতুন ছাউনি লাগিয়ে পিছনে এলইডি স্ক্রিন লাগানোর কাজ। পুরসভা-সূত্রে জানা গিয়েছে, পিছনে এক দিকে থাকবে বিভিন্ন মনীষীর ছবি-সহ কবিতা বা উদ্ধৃতি, আর এক পাশে বিজ্ঞাপন সংস্থার বিজ্ঞাপন। একটি ছাউনিতেই থাকবে দু’তিনটি করে চেয়ার। আপাতত যে মাপের বাসছাউনি তৈরি হচ্ছে তাতে দু’তিনটি চেয়ারই রাখার জায়গা পাওয়া যাবে। এর মধ্যে একটি থাকবে প্রতিবন্ধী যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত।
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ ট্রামডিপো, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি, নিউআলিপুরে সাহাপুর ক্যাম্প, টালিগঞ্জ থানা, হাজরা বসুশ্রী সিনেমার উল্টোদিকের বাসছাউনি, পূর্ণ সিনেমা স্টপ, এক্সাইড মোড়, রবীন্দ্রসদন, পি জি হাসপাতালের সামনে থেকে জীবনদীপ, কলকাতা পুরসভার প্রধান গেট, নীলরতন সরকার হাসপাতালের সামনে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর উপর মেডিক্যাল কলেজের সামনের স্টপেজের বিভিন্ন পুরনো ছাউনিগুলি খুলে ফেলা হয়েছে।
অন্য দিকে, রাসবিহারী অ্যাভিনিউর উপর দেশপ্রিয় পার্ক স্টপে রাস্তার দু’ধারে, নিউ আলিপুরে স্টেট ব্যাঙ্ক স্টপ, মৌলালি-সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোডের সংযোগস্থলে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর উপর মেডিক্যাল কলেজের সামনের বাসছাউনি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “কলকাতা পুরসভার প্রতিটি বাসছাউনিই নতুন আঙ্গিকে তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ছাউনি তৈরিও হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিও খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যাবে।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দফতর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থাকে ছাউনিগুলি তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছে। বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিই ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ করবে।” কিন্তু কলকাতার রাস্তায় সাধারণত দেখা যায় বাস স্টপ আর বাস ছাউনি এক জায়গায় নেই। সে ক্ষেত্রে নতুন বাস ছাউনিগুলি কি পুরনো জায়গাতেই তৈরি হবে নাকি পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে এক জায়গায় করা হবে? মেয়র বলেন, “নতুন বাস ছাউনিগুলি বাস স্টপেই তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।”
কলকাতা ডিসি ট্রাফিক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহরে কোথায় বাস ছাউনিগুলি হওয়া উচিত তা নিয়ে আগের বছরই পুরসভার কাছে আমরা তালিকা পাঠিয়েছিলাম। আবার নতুন করে পর্যালোচনা করে আমরা চিঠি পাঠাব। বাসস্টপ ও বাসছাউনি যাতে এক জায়গায় হয় তা পুলিশ দেখবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও বাসচালকদেরও সচেতন হতে হবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.