|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
দুর্ভোগ |
বন্ধ পরিষেবা |
জয়তী রাহা |
সোদপুর ঘোলার বাসিন্দা সমীর কুণ্ডু নিজের বাড়ির বাথরুম ব্যবহার করতে পারছেন না। কল্যাণগড়ের বৃদ্ধা রুমাদেবী বাড়ির বাথরুম ব্যবহার করতে না পারায় পাতুলিয়ায় মেয়ের বাড়িতে রয়েছেন। মনোরঞ্জন পাঁড়ুই নতুন করে সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি করাচ্ছেন। অভিযোগ, গত ছ’-সাত মাস সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পরিষেবা বন্ধ রয়েছে পানিহাটি পুর-এলাকায়। কারণ, ভাগাড় সংলগ্ন বাসিন্দাদের আপত্তিতে ভাগাড়ে বর্জ্য ফেলা বন্ধ রয়েছে। যদিও সম্প্রতি আলোচনার পরে আরও কয়েক মাস বর্জ্য ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
|
|
সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করানোর জন্য বাড়ির মালিককে সংশ্লিষ্ট পুরসভার বর্জ্য বিভাগে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। রুমাদেবী, সমীরবাবুরা সেই মতো আবেদনপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুরসভা সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার আপাতত বন্ধ রেখেছে। কারণ, সেই বর্জ্য ফেলার কোনও জায়গা নেই। পুরসভা সূত্রে খবর, ছ’-সাত মাস যাবৎ এই অবস্থা। ছ’শোর কাছাকাছি আবেদনপত্র জমা রয়েছে। ২৬ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আবেদনপত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
পুরসভা সূত্রে খবর, প্রায় একশো বছরের পুরনো রামচন্দ্রপুর ভাগাড়টিই পুরসভার ভরসা। আগে চার পাশে জনবসতি ছিল না। তাই আবর্জনা ফেলতে কোনও সমস্যা ছিল না। গত চল্লিশ বছর ধরে ভাগাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। ভাগাড়ের পাঁচিলের গা ঘেঁষেও উঠেছে বাড়ি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বর্ষায় ঘরে পোকা ঢুকেছে। ছোটদের নিয়ে বাস করা ক্রমেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রত্না সামন্তের দাবি, “গ্রীষ্মে অবস্থা অসহনীয় হয়ে ওঠে। বহু দূর পর্যন্ত তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কাছের বাড়িগুলিতে দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে হয়।”
|
|
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ দাস বলেন, “স্থানীয় মানুষের আপত্তিতে ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ থাকলেও নাইট সয়েল ফেলার কাজ চলছিল। কিন্তু প্রবল চাপে তা-ও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। টিটাগড় পুরসভার অনুমতিতে ওদের ভাগাড়
ব্যবহার করছিলাম। সম্প্রতি তারাও অনুমতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে।” তবে পুরসভা সূত্রে খবর, অতি সম্প্রতি আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী চার-পাঁচ মাস নাইট সয়েল ফেলতে পারবে পুরসভা। ‘রামচন্দ্রপুর ভাগাড় উচ্ছেদ কমিটি’র আহ্বায়ক শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরপ্রধান ও স্থানীয় বিধায়কের উপস্থিতিতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরসভা রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হচ্ছে। পুরপ্রধান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলছেন, “আপাতত তিন দিকে গার্ডওয়াল দেওয়ার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সেখানেই নাইট সয়েল ফেলা হবে। ভাগাড়ের সার্বিক আধুনিকীকরণের জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে যাব। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের কাছে পুরসভার জমিতে এর তুলনায় ছোট ভাগাড় গড়ে তোলার জন্য সরকারি সাহায্য চাইব।” শ্যামলবাবুর মতে, “আধুনিকীকরণ সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা না করে নতুন পরিকল্পনা নিলে, সেটাতে শুধু অর্থব্যয়ই হবে, সমাধান নয়।”
|
|
ভাগাড়কে ঘিরে বাড়ি তৈরির অনুমতি কেন দিয়েছে পুরসভা? চারণবাবু বলেন, “ভাগাড়ের সীমানার বাইরের জমি বিক্রি হয় রাজ্য সরকারের আইনানুসারে। পুরসভার কোনও ভূমিকাই থাকে না। জমি কেনার পর পুরসভায় তাঁর নাম নথিভুক্ত হওয়ার কথা। এর পর পুরসভা তাঁকে মিউটেশন দিতে বাধ্য।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য। |
|
|
|
|
|