দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
অভাব কর্মীর
ধুঁকছে স্বাস্থ্য
বেলা ১২টা। পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এলেন। জানালেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। কিন্তু একমাত্র চিকিৎসককে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যেতে হয়েছে। তাই ফিরে যাচ্ছেন। ছবিটি বাগেশ্বর গ্রামের আমগাছিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।
আমগাছিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক তলা বাড়িটি ঝাঁ চকচকে। সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাড়িটির চার পাশে কোনও পাঁচিল নেই। অভিযোগ, এখানে কার্যত কোনও পরিষেবাই পাওয়া যায় না। রোগী থাকলেও অধিকাংশ দিন ১২টার আগেই চিকিৎসক বেরিয়ে যান। তখন রোগীদের জুলপিয়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা বাঙুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির অধীন এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্বাধীনতার পরে তৈরি হয়। বাগেশ্বর, সজনেবেড়িয়া, আমগাছিয়া, নেপালগঞ্জ ও জুলপিয়া-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। ছিল প্রসূতি বিভাগও। পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ১৫টি শয্যারও ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টারও ছিল। তার পরে দীর্ঘ দিন এটির কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন তার ভগ্ন দশা। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নতুন এক তলা বাড়ি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সের অভাব রয়েছে।
এখন এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সোম থেকে শনিবার সকাল ন’টা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতি দিন এক জন ডাক্তার আসেন। তাঁকেও আবার নির্দিষ্ট সময়ের পরে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যেতে হয়। তা ছাড়া এখানে জ্বর আর পেটের অসুখ ছাড়া অন্য কোনও অসুখের চিকিৎসা হয় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটু বাড়াবাড়ি হলেই চিকিৎসক কলকাতার সরকারি হাসপাতালে রেফার করে দেন। এখান থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে বাঙুর হাসপাতাল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা করা হত। গ্রামের এক গৃহবধূ মিতালি মণ্ডল বললেন, “আগে শয্যা ছিল। ভর্তি করে চিকিৎসা হত। এখন কিছুই নেই।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, জ্বর, পেটের অসুখ ছাড়া এখানে আর কোনও ওষুধ নেই। রোগীর অবস্থা সামান্য খারাপ দেখলেই ডাক্তারবাবু ঝুঁকি না নিয়ে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও নেই। অরুণ মণ্ডল নামে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগী বললেন, “আগে ছোটখাটো অসুখে ভর্তি করে চিকিৎসা হত। তবে অস্ত্রোপচার হত না।” বাসিন্দাদের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সামনের খালি জায়গায় একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি করা হোক।

নতুন বাড়ি
বিষ্ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের দীপেন দাস বলেন, “ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ১০টি শয্যার ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু সমস্যা হল চিকিৎসক বা নার্স এখানে আসতে চাইছেন না।” এলাকার তৃণমূল বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল বললেন, “আমি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংক্রান্ত কাগজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব, যাতে নতুন করে পরিকাঠামো তৈরি করা যায়।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্বাস্থ্য অধিকর্তা শিখা মিত্র বলেন, “বিভিন্ন জায়গার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। উন্নত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসারও চেষ্টা চলছে। সমস্যা হল চিকিৎসক ও নার্সরা দূরে যেতে রাজি হন না। যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.