পূর্ব কলকাতা
সমাধানের আশ্বাস
যান-যন্ত্রণা
রাত বাড়লেই যান মেলে না। পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বিধাননগর উপনগরীর এই বদনাম আজও ঘুচল না। অভিযোগ, শুধু বাস নয়, কমে যায় অটো বা ট্যাক্সিও। তা ছাড়া কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিধাননগরে যেতে চান না অধিকাংশ ট্যাক্সিচালকই।
এখানেই শেষ নয়, রয়েছে অটো ও রিকশাতে বেশি ভাড়া চাওয়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগও। প্রথম বার পুরসভার ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল পুরবোর্ড পরিবহণ সংক্রান্ত এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতিই সার। কোনও কাজই হয়নি।
বিধাননগরের এক নম্বর সেক্টরের লাবণি, বিদ্যাসাগর আবাসন থেকে তিন নম্বর সেক্টরে ফাল্গুনী, ইএসআই, পূর্বাচল থেকে জিডি, এইচ এ, এইচ বি, জেসি, কেবি-কেসি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা পরিবহণ ব্যবস্থার এই সমস্যা ভোগ করছেন। সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু সমাধানের রাস্তা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেমন, বিধাননগরের বাসিন্দা সুতপা দাশশর্মা বলেন, “রাত হলে উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে অটোতে ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক। সেখান থেকে আবার রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরি। সরাসরি বাস বলতে মাত্র দু’টি রুটের। কিন্তু রাত বাড়লেই বাস উধাও হয়ে যায়।” আর এক বাসিন্দা পলাশ রায় বলেন, “সরাসরি ধর্মতলা যাওয়ার বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। রাতে কিছুই মেলে না। রাতে ধর্মতলা থেকে বিধাননগরের যাতায়াত করা মুশকিল। বাস, অটো বদল করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাতে অটো বা রিকশাতে ভাড়াও বেশি চাইছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনও হুঁশই নেই।”
শুধু রাতই নয়, অভিযোগ, দিনেও সমস্যা হয়। বিধাননগরের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের অভাব রয়েছে। বিশেষত সুকান্তনগর, সর্দারপাড়া, পোলেনাইট, মহিষবাথান থেকে এক নম্বর সেক্টরের স্কুলগুলিতে সরাসরি বাসের সংখ্যা কম। ফলে ছাত্রছাত্রীদের খুবই অসুবিধা হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, যান বদল করে যাতায়াত করতে খরচও বাড়ে। এই সব অঞ্চল থেকে রোগীদের বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে যাতায়াতেও সমস্যা হয়।
বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “এটা সত্যিই খুব সমস্যা। ধর্মতলা-সহ উত্তর-দক্ষিণ শহরতলিতে যাওয়ার বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি রুটের বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া বিধাননগরের ভিতরে একটি ইন্ট্রাসিটি বাস চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা হয়নি। অটো কিংবা রিকশা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অবিলম্বে সমস্যা মেটাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করছেন পুরকর্তৃপক্ষও। সদ্য চেয়ারপার্সন-সহ বিধাননগর চেয়ারম্যান পারিষদে রদবদল হয়েছে। নতুন বোর্ডও অনেকগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন, বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো বাসরুট চালু করার ভাবনা, অটো ও রিকশার স্ট্যান্ড, রুট ও ভাড়া নির্ধারণ। চেয়ারম্যান পারিষদ (পরিবহণ) অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিধাননগরে বেশ কয়েকটি রুটের বাস বন্ধ হয়েছে। সেগুলি চালু করতে পারলে সমস্যা অনেকটা মিটবে। এ ছাড়াও উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে বিধাননগরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত একটি রুট চালু করার প্রয়োজন। সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে বিধাননগরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব জানান, তাঁরাও সুষ্ঠু সমাধান চাইছেন। তবে অটো ও রিকশা নিয়ন্ত্রণে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সাফল্য যে মেলেনি তা স্বীকার করে অশেষবাবু বলেন, “যত্রতত্র রিকশা কিংবা অটো স্ট্যান্ড নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া কিংবা বেশি ভাড়া নিয়েও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চলেছি। এ বিষয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.