পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
শুকনো বাঙুর
সুচেতনার সুফল
প্লাস্টিক বর্জনের সুফল এ বার বর্ষায় টের পেলেন বাঙুরের বাসিন্দারা। টানা ভারি বর্ষণে বাঙুরের বাসিন্দাদের গোড়ালিও ডুবল না। বাসিন্দাদের দাবি, শুধু অতিরিক্ত পাম্প বসিয়ে জল জমার সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হত না। এলাকার বাসিন্দাদের প্লাস্টিক বর্জনের অভ্যাসের ফলেই বাঙুরের রাস্তা এই বর্ষাতে শুকনো।
অথচ যে কোনও মরসুমেই এক পশলা বৃষ্টিতে বাঙুরে জলে জমে যাওয়াটাই দস্তুর। এলাকার বাসিন্দারা রসিকতা করে বলেন, আকাশে মেঘ করলেই বাঙুরে জল জমে। আর বেশি বৃষ্টি হলে বাঙুরের আশপাশের দমদম পার্ক, লেকটাউনে যখন রাস্তায় জল জমতে শুরু করে তখন বাঙুরে বাড়ির একতলায় জল ঢুকে যায়।
বাসিন্দাদের দাবি, এ বার বর্ষাতেই ব্যতিক্রম। যখন দমদম পার্কের বিভিন্ন বাড়ির একতলায় জল ঢুকতে শুরু করেছে, রাস্তায় এক হাঁটু থেকে প্রায় এক কোমর অবধি জল, তখনও বাঙুরের রাস্তাঘাটে জল দাঁড়ায়নি। বাঙুরের নর্দমাগুলি দিয়েও জল বেরিয়ে গিয়েছে দ্রুত।
বাঙুর
অথচ এলাকার অবস্থানের দিক থেকে বাঙুরের অবস্থাই ওই এলাকার মধ্যে সবথেকে প্রতিকূল। এক দিকে ভিআইপি রোড অন্য দিকে যশোহর রোড। দুই রাস্তার মাঝখানে বাঙুরের অবস্থা অনেকটা গামলার মতো। পুরসভাসূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বর্ষাকালেই নয় সারা বছরই দৈনন্দিন জমা জল বের করতে পাম্প চালাতে হয় বাঙুরে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, দৈনন্দিন জল থেকে বর্ষার জলকে বের করার জন্য এলাকার নর্দমাগুলোও সাফ থাকা জরুরি। এই চিন্তা থেকেই বাঙুরে শুরু হয়েছিল প্লাস্টিক বর্জনের অভ্যাস। এলাকার কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “যতই আমরা অতিরিক্ত পাম্প চালাই না কেন, প্লাস্টিক বর্জন না হলে যে জল জমার পুরোপুরি সমাধান হবে না সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। নর্দমার মুখ বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক। মানুষ রাস্তায় যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলে দেন। সেই প্লাস্টিক জমা হয় নর্দমার মুখে। ফলে নর্দমা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় নর্দমার জল উপচে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়। তাই আমরা ঠিক করি বাজার থেকে শুরু করে শপিং মল সব জায়গাতেই প্লাস্টিক বন্ধ করতেই হবে।”
দমদম পার্ক
বাঙুরের সব্জি বাজার থেকে শুরু করে মাছের বাজার, মুদিখানা কোনও দোকানেই জিনিস প্লাস্টিকে দেওয়া হয় না। বাঙুরের সব্জি বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, “ছোটো ছোটো পাটের ব্যাগ অথবা মোটা কাগজের ব্যাগ দেওয়া হয় ক্রেতাদের। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হতো। কিন্তু এখন এটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বাঙুরের বাসিন্দাদের।” শুধু বাজার বা দোকানেই নয়, বহুজাতিক সংস্থার শপিং মলগুলোতেও ক্রেতাদের জন্য একই ব্যবস্থা।
এ বার বর্ষায় অতিরিক্ত একটি পাম্প চালানো হয়েছে বাঙুরে। পুরসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এ বার ভারী বর্ষণ যে দিন শুরু হয় সে দিন প্রথম থেকেই দুটো পাম্প টানা দিনরাত চালানো হয়েছে। ফলে রাস্তা বা নর্দমায় জল জমার সুযোগই হয়নি। তার উপর নর্দমা সাফ থাকায় জল দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছে।
বাঙুরে পরিস্থিতি পাল্টালেও বাঙুরের আশেপাশের এলাকা, যেমন দমদম পার্ক, বা লেকটাউনের অবস্থা একটুও পাল্টায়নি। জল জমেছে নিউটাউন, রাজারহাটের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও।
চিনার পার্ক
টানা বৃষ্টিতে দমদম পার্কে কোথাও এক কোমর জল তো কোথাও এক হাঁটু। দমদম পার্কের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঙুরের জল পাম্পের সাহায্যে দমদম পার্কে ফেলা হয়েছে। তার উপর দমদম পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাগজোলা খালের সংস্কার হচ্ছে না দীর্ঘ দিন। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই খাল উপচে জল দমদম পার্ক ও সংলগ্ন এলাকা ভাসিয়ে দিচ্ছে। তাই বাঙুরে জল না জমে জল বেশি জমছে দমদম পার্কে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “বাঙুরে অতিরিক্ত পাম্প চালানোর সঙ্গে এ বার নর্দমাটাও সারা বছর নিয়মিত সাফ করা হয়েছে। প্লাস্টিক ব্যবহার না করার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও বর্ষা কাটলেই বাগজোলার সংস্কার করা হবে।”


ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.