|
|
|
|
গ্রেগ একটা ডিনামাইট... যেখানে সেখানে ফাটে...
যাক, এখন বাড়িতে বিশ্রাম করুক |
গৌতম ভট্টাচার্য • লন্ডন |
গ্রেগ চ্যাপেল অস্ট্রেলিয়াতেও অপসারিত মাত্র কয়েক ঘণ্টা হল খবরটা ছড়িয়েছে। শুনে সৌরভের যেমন বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া,
মনে হল ওপরের নীল আকাশে কোথাও চ্যাপেলের সঙ্গে তাঁর অদৃশ্য ঘুড়ির প্যাঁচ চলছিল। এই মর্যাদার লড়াইয়ে ভো-কাট্টা
হয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয়! একান্ত সাক্ষাৎকারের বিষয় তাই: গ্রেগ চ্যাপেল! |
প্রশ্ন: গ্রেগ অস্ট্রেলিয়ায় বরখাস্ত হওয়ায় আপনি কি আশ্চর্য?
সৌরভ: আমি একটুও অবাক নই। লোকটা এ রকমই। আমি ২০০৫-এও ওকে একই জিনিস করতে দেখেছি। তখন ওরা বলেছিল সৌরভ ভুল বকছে। সৌরভ খারাপ।
আজ প্রমাণ হল কে ঠিক ছিল।
প্র: শেষ হাসি আপনার জন্য তোলা ছিল।
সৌরভ: শেষ হাসিটাসি এ সব বলব না। আমার আর কী আছে? আমার তো খেলার দিনই শেষ হয়ে গিয়েছে।
প্র: তবু এত কিছু যে অন্তরালে ঘটছিল, জেনে কী মনে হচ্ছে?
সৌরভ: জেনে মনে হচ্ছে গ্রেগ চ্যাপেল লোকটা স্টুপিড। পুরো স্টুপিড। আরে তুই হচ্ছিস গ্রেগ চ্যাপেল! একটা এত বড় ক্রিকেটার। কোথায় উঁচুতে তোর জায়গা। এত নাম তোর। এত খ্যাতি। যা করবি সুন্দর ভাবে কর। সৃষ্টিই যদি করতে হয়, পজিটিভ থেকে কর। নেগেটিভলি ক্রিয়েটিভ হতে চাস কেন? যখন বারবার দেখিস ওটাতে কাজ হয় না!
প্র: কোচ যে ভাবে ফল পাবে সেটাই তো মডেল করবে। নেগেটিভ হোক বা পজিটিভ।
সৌরভ: নেগেটিভ হয়ে ফল পাওয়া যায় না। এই যে ড্রেসিংরুমে গিয়ে নেগেটিভ কথা বলা। প্লেয়ারের মন ঘেঁটে দেওয়া। আমি দেখতাম গ্রেগ চ্যাপেলের আমলে ও প্যাড পরে বসে রয়েছে, সেই সময় কেউ যদি গিয়ে ওকে নেগেটিভ কথা বলে যেত ও ব্যাট করত কী করে? আমার সময়ে ওর এই সব কাণ্ডকারখানার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকে সরে যেতে হয়েছিল। আমার কেরিয়ারের ও একাই বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আজ সবাই বুঝছে লোকটা কী ধাতের! |
|
সম্পর্কে তখনও চিড় ধরেনি। চ্যাপেলের সঙ্গে পন্টিং।-ফাইল চিত্র |
প্র: অস্ট্রেলিয়া কিন্তু চ্যাপেলকে সরানো ছাড়াও আরও কিছু সুপারিশ কার্যকর করতে যাচ্ছে। যেমন জেনারেল ম্যানেজার, টিম পারফরম্যান্স পদ চালু করছে। অস্ট্রেলিয়া কমিটি নিয়োগ করেছিল কিন্তু অ্যাসেজে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পর।
ভারতও কি এ বারের ইংল্যান্ড ভরাডুবির পর এই পদে লোক নিয়োগ করার কথা ভাবতে পারে? জিএম-টিম পারফরম্যান্স? একই সঙ্গে কোনও কমিটিকে তো দায়িত্ব দিতে পারে বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের।
সৌরভ: জিএম-টিম পারফরম্যান্স চালু করাই যায়। এমন কেউ যে ফাস্ট বোলারদের ওপর সতর্ক নজর রাখবে। কে কোথায় কী ভাবে রয়েছে খোঁজ নেবে। পেসারদের ফিটনেস লেভেলের ওপর চোখ রাখা এই লোকটা বোর্ড-প্লেয়ার আর নির্বাচকদের মধ্যে একটা সেতুর কাজ করবে। নইলে বেচারি আরপি সিংহের মতো ঘটনা আরও হবে।
প্র: আরপি বেচারি? চূড়ান্ত আনফিটকে মায়া দেখাচ্ছেন কেন?
সৌরভ: ওর তো কোনও দোষ নেই। জানতই না ওকে ডাকা হতে পারে। হঠাৎ করে কন্ডিশনে না থেকে টেস্ট ক্রিকেটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
প্র: আর ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য কমিটি?
সৌরভ: কমিটি করলে ক্ষতি নেই। কিন্তু বুঝতে হবে কমিটি তো আর ম্যাচ জেতাবে না। এই যে অস্ট্রেলিয়ার কমিটি যা-ই বলে থাক, মাঠে জেতাতে হবে সেই প্লেয়ারদের। আমাদের যদি কমিটি করতেই হয়, যেন প্লেয়ার তোলার জন্য করা হয়।
প্র: ধোনিদের বিধ্বস্ত শিবিরে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য কি চ্যাপেলের মতো কড়া কোনও হেডমাস্টারমশাই দরকার নেই?
সৌরভ: চ্যাপেল...আবার চ্যাপেল...বলছেন কী!
প্র: চ্যাপেল টাইপের যিনি ফিটনেস নিয়ে আপস করবেন না। শৃঙ্খলা নিয়ে আপস করবেন না। এই টিমে তো সেগুলো করার খুব অভাব।
সৌরভ: এমন কারও দরকার আছে যিনি জেনারেল মেন্টেনেন্সটা ঠিক রাখবেন। পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য রাখবেন। কড়াও হবেন। কিন্তু সেটা ভদ্র ভাবে কড়া হওয়া। রাফ হয়ে, নেগেটিভ হয়ে নয়।
প্র: চ্যাপেল তাই করতেন?
সৌরভ: আবার কী! ভারতীয় প্লেয়ারদের মন কিন্তু এত রুক্ষ ভাবে পাওয়া যায় না। ভারতীয় প্লেয়ারদের সামলাতে হলে মিষ্টি করে কড়া হতে হবে।
প্র: কিন্তু চ্যাপেলের আমলে তো ইন্ডিয়া টানা ১৬-১৭টা ওয়ান ডে ম্যাচ জিতেছে। ব্যাটিং অর্ডার ফ্লেক্সিবল করা প্রথম দেখিয়েছে, যা ধোনির টিম এ বারের বিশ্বকাপেও ফলো করেছে।
সৌরভ: ছাড়ুন ছাড়ুন। একটা লোক পুরো বরবাদ করে দিয়ে গিয়েছে ইন্ডিয়ান ক্রিকেটকে।
প্র: আচ্ছা ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের চূড়ান্ত ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী? চ্যাপেল?
সৌরভ: আবার কে! একা দায়ী। কোনও প্লেয়ারকে কনফিডেন্স পেতে দেয়নি। ওয়ান ডে-তে আমি চিরকালের রেগুলার। শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত কোনও আন্দাজই দেয়নি যে, আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্লেনে উঠছি কি না। সবাইকে চালিয়েছে। সবাইকে। প্রথমে আমি মুখ খুলেছিলাম। পরে তো অনেকেই বলল। আর আজ তো দেখতেই পাচ্ছেন। ওর নিজের দেশ বলছে।
প্র: প্লেয়াররা মাঠে নেমে খেলেছিল। শোচনীয় হেরেছিল। দায়ী কেন চ্যাপেল একা হবেন?
সৌরভ: কারণ ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা ও পুরো ঘেঁটে রেখেছিল। যে-ই গ্রেগ চলে গেল, আমরা টানা জিততে শুরু করলাম। ক্রিকেট টিমকে ভাল করতে হলে ড্রেসিংরুমে স্টেবিলিটি চাই। শান্তি চাই। এই ইংল্যান্ড টিমটার মধ্যে যেটা আছে। প্রত্যেকে জানে কী হচ্ছে। ট্রেমলেট বাইরে। সবাই জানে চোট সারিয়ে ও কবে নাগাদ ফিরতে পারে। কোনও কিছুতে টেনশন নেই। অনিশ্চয়তা নেই।
আমি জানতাম অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেগকে নিয়ে ঝামেলা হবে। তবে এত বড় আকারে পৌঁছবে ভাবিনি। আমার ধারণা ছিল গ্রেগ নিজের ভুল থেকে শিখেছে। এখন দেখছি একেবারে ব্রেনলেস। এত বড় প্লেয়ার হয়েও ব্রেনলেস।
প্র: তাই?
সৌরভ: হ্যাঁ, গ্রেগ হল বোমা। একটা বোমা...নাকি ডিনামাইট...এখানে ফাটবে, ওখানে ফাটবে (হাসি), যাঃ বোস এখন, বাড়িতে বাকি জীবন আরাম কর।
প্র: কে বলছে এ সব? যে ভদ্রলোক সিডনি চলে গিয়েছিলেন কোনও এক গ্রেগ চ্যাপেলের কাছে ব্যক্তিগত ট্রেনিং নিতে!
সৌরভ: আমি একটা ভুল করেছিলাম। পরে শুধরে নিয়েছি (হাসি)। এ লোকটা তো আমার চেয়েও খারাপ। ভুল করেই চলেছে! |
|
|
|
|
|