|
|
|
|
ধোনিরা সেই অকুলপাথারে |
|
ওভালের স্কোরবোর্ড বাঁচাতে চাইছে
না ওভালের ঐতিহ্য যদি রক্ষা করে
গৌতম ভট্টাচার্য • লন্ডন |
|
জন মেজর যে অর্থে ক্রিকেটপ্রেমী ছিলেন, তিনি কখনও নন। ক্রিকেট মাঠে কচিৎ তাঁকে দেখা যায়। শুক্রবারের ওভাল সেই কচিৎ-এর ভেতর পড়ায় আশ্চর্যের কিছু নেই। পরিস্থিতি মাহাত্ম্যে ক্রিকেট অধুনা বহু বহু বছর পর ইংল্যান্ডের জাতীয় খেলা।
কোন সময় ইংল্যান্ডের জাতীয় খেলা ছিল? না, সেই তিরিশ ও চল্লিশের দশকে যখন ইংল্যান্ডেরই মরিস টেট একটা অনাকর্ষণীয় রেকর্ড করে বসেছিলেন। টানা ৯২৯টি বল করে টেস্ট ক্রিকেটে টেট উইকেট পাননি। শুক্রবার ওভালে বসে ইংরেজ প্রধানমন্ত্রী দেখলেন সেই অঈর্ষণীয় রেকর্ডকে কী ভাবে তাড়া করছেন অতিথি দেশের পেস বোলার। রুদ্রপ্রসাদ সিংহ পাঁচশোর ওপর বল করে ফেলেছেন। কোনও উইকেট পাননি। তাঁর বোলিংয়ের যা অবস্থা, মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ সমেত চিঠি ‘অ্যাটাচ’ করলে একমাত্র তা হলেই হয়তো বিপক্ষ ভাববে।
ডেভিড ক্যামেরন লাঞ্চ থেকে চাএই সময়টুকুর মধ্যে দেখলেন কী ভাবে চূড়ান্ত অপ্রস্তুত রুদ্রপ্রসাদ, সরি রুদ্রপ্রতাপ বল করলেন। আউটফিল্ডে পিটারসেনের ক্যাচের জন্য গেলেনই না। আর পায়ের তলা দিয়ে বল গলালেন। প্রেসবক্সের নীচের অভিজাত দর্শকমণ্ডলী থেকে চিৎকার উঠলওহে, হাতদুটো দিয়ে বল ধরা বেআইনি নয়।
কেভিন পিটারসেন আর ইয়ান বেল মনে হচ্ছিল অনন্তকাল খেলে যেতে পারেন। বোল্ড হওয়ার মতো বল হচ্ছে না। ব্যাটসম্যান ডিফেন্স করলে আউট হওয়ার গল্প নেই। আর ক্যাচ উঠলে ধরার লোক নেই। পিটারসেনের একটা ক্যাচ গৌতম গম্ভীরও ছাড়লেন। আউটফিল্ডে তখন সচিন তেন্ডুলকরও বল গলাচ্ছেন। দুটো বাউন্ডারি দিলেন। উইকেটের পিছনে ধোনি সহজ বলে বাই দিচ্ছেন। ধোনি কোনও দিন ক্ল্যাসিকাল কিপার হিসেবে গণ্য হন না। কিন্তু চলতি সফরের মতো এত খারাপ কিপিং করতে তাঁকে দেখা যায় না। হয় আঙুলে চোট রয়েছে, অথবা ঠান্ডার জন্য দুটো ইনার পরছেন। ইনার-টা কুঁচকে গিয়ে গ্লাভসে বল আটকাচ্ছে না। যে কোনও একটা। নইলে কারও টেস্ট কিপিং এই পর্যায়ে নামতে পারে না। |
|
সিরিজে ইশান্তদের চেনা ছবি ওভালেও চলছে। -এএফপি |
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে সময়টা মাঠে ছিলেন সেটা তাঁর দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উদ্দীপক সময়। ভারতীয় বোলিংকে নৃশংস ভাবে পুঁতে দিচ্ছেন পিটারসেন-বেল। তৃতীয় উইকেটে সাড়ে তিনশো রানে দু’দেশের ক্রিকেটে রেকর্ড হল। কিন্তু তার চেয়েও যেটা খারাপ, ডেভিড ক্যামেরন যে ভারতকে দেখে গেলেন তারা বল করতে পারে না ক্যাচ ধরতে পারে না কিপ করতে পারে না।
মনেই হচ্ছিল না বিশ্বের এক আর দু’নম্বর টিম নিজেদের মধ্যে খেলছে। জিওফ্রে বয়কট এই বোলিং লাইন আপকে আখ্যা দিয়েছেন লিস্টারশায়ার দ্বিতীয় একাদশ। কেউ কেউ আরও দয়াপরবশ হয়ে বলেছে বাংলাদেশ বোলিং। শুক্রবারের হত্যালীলার পর বলতে হবে অ্যাসোসিয়েট সদস্য দেশগুলোর পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল সদ্য এক নম্বর থেকে হড়কে যাওয়া টিমের বোলিং। শেষ চার ঘণ্টায় ভারত দিল ৩৩১ রান। আজকের ডিফেন্সিভ ফিল্ড প্লেসিং এবং রান বাঁচানোর জন্য আবিষ্কৃত নতুন নতুন ডেলিভারির যুগে এত একপেশে হয়ে পড়ছিল যে, সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়া উচিত ব্রিটিশ মিডিয়ার। ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, যতটা কৃতিত্ব ইংল্যান্ডকে দেওয়া হচ্ছে সেটা কি সত্যিই ওদের প্রাপ্য? এ রকম একটা লড়ঝড়ে টিমকে হারাতে আবার কৃতিত্বের কী আছে? এদের তো যে কেউ হারাতে পারবে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা কেউ কেউ যা শুনে যন্ত্রণাকাতর ভাবে বলেছেন, কেউ কেন বুঝছে না আমরা দারুণ খেলে ভারতকে মাথাচাড়া দিতে দিইনি। কেউ কেউ ফর্মুলা ওয়ানের প্রাক্তন সেই চ্যাম্পিয়নের তুলনা টেনেছেন। যিনি ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবে ও বারবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে’ এই কটাক্ষে উত্তেজিত ভাবে বলেছিলেন, “তা হলে কী চাইছেন? আমার গাড়িটা স্লো করে রেসটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করব?”
সত্যিই অভিশপ্ত সফর চলছে ধোনিদের। ’৭৪-এ অজিত ওয়াড়েকরের টিমেরও এত খারাপ সময় যায়নি যে, একপেশে হারিয়েও লোকে বুঝতে পারছে না ইংল্যান্ড টিমের যথেষ্ট কৃতিত্ব আছে কি না।
ওভালের স্কোরবোর্ড মোটেও সিরিজ ৩-১ হওয়ার দিকে ঝুঁকে নেই। বরঞ্চ সিরিজের অন্য প্লটগুলোর মতোই এগোচ্ছে, যার পরিণতি ০-৪। ভারতের ব্যাটসম্যানদের ওপর এখন খেলা। আর তার চেয়েও বেশি করে ওভালের গত বাহান্ন বছরের ঐতিহ্যের ওপর। বাকি তিন দিনের মধ্যে যদি এক দিন বৃষ্টি খেয়ে নিতে পারে তা হলে ঐতিহ্য তার নিজের প্রতি সুবিচার করবে।
কিন্তু যদি সুবিচারও করে অসম্মানের দগদগে ঘা-টা থেকেই যাবে। সবে বিশ্বসেরার মর্যাদা হারানো একটা দল। মাঠে, মাঠের বাইরে এত অসম্মানিত হবে কেন? সব দোষ বোর্ড কর্তাদের? বোর্ড বলেছিল আরপি সিংহকে এখানে খেলিয়ে কমেডি করতে? বরঞ্চ এখন বোর্ড যেটা পারে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যেমন অস্ট্রেলীয় মডেল অনুসৃত হয়, সে ভাবেই বোর্ড একটা আর্গাস কমিটি করতে পারে। যারা তদন্ত করবে ধোনির ড্রেসিংরুম থেকে জয়ের তুফান ওঠেনি কেন? কেন টিম টানা চার টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের এমন বিদ্ধ করে গেল?
|
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৭৫-০) |
স্ট্রস ক ধোনি বো শ্রীসন্থ ৪০
কুক ক সহবাগ বো ইশান্ত ৩৪
বেল ব্যাটিং ১৮১
পিটারসেন ক ও বো রায়না ১৭৫
অ্যান্ডারসন ব্যাটিং ৩
অতিরিক্ত ২৪
মোট ৪৫৭-৩
পতন: ৭৫, ৯৭, ৪৪৭
বোলিং: রুদ্রপ্রতাপ ৩০-৭-৯৬-০, ইশান্ত ২৭-৭-৮১-১, শ্রীসন্থ ২৩-২-৯৫-১,
রায়না ১২-১-৩৬-১, অমিত ২৯-২-১২৯-০, সচিন ২-০-১১-০। |
|
|
|
|
|
|
|