‘অনাস্থা’রও সম্ভাবনা কংগ্রেস-তৃণমূলে দূরত্ব খড়্গপুর পুরসভায়
দেড় বছর হল খড়্গপুর পুরবোর্ড চালাচ্ছে তৃণমূল। এরই মধ্যে উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নে জোটসঙ্গী কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের ‘বিরোধ’ দেখা দিয়েছে। দু’দলের মধ্যে ‘দূরত্ব’ এতটাই বেড়েছে যে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব আনার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে উঠেছে। বর্তমান পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে কংগ্রেস অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা পাশ করাতে তেমন সমস্যা হবে না বলে মনে করছে রেলশহরের রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দুই সিপিএম কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। অপ্রত্যাশিত কিছু না-হলে আগামী সোমবারই তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেবেন। এর ফলে রেলশহরে কংগ্রেসের ‘হাত’ আরও শক্ত হবে।
খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৫টি ওয়ার্ড। কংগ্রেসের দখলে ১২টি। বাকি ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে বামফ্রন্টের ৭ (সিপিএম ৩, সিপিআই ৩ ও বাম-সমর্থিত নির্দল ১) ও বিজেপি-র দখলে ১টি ওয়ার্ড রয়েছে। জোট-সম্পর্ক তুলে ধরতে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডকে এখন বাইরে থেকে সমর্থন করছে কংগ্রেস। দুই সিপিএম কাউন্সিলর দলবদল করলে কংগ্রেসের কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে হবে ১৪। অন্য দিকে, তৃণমূলের কয়েক জন কাউন্সিলরও ‘বিক্ষুব্ধ’। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদেরও কংগ্রেস শিবিরে যোগ দিতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে তৃণমূল। কংগ্রেসের পক্ষে তখন অনাস্থা এনে বর্তমান বোর্ড ফেলে দিয়ে ফের ক্ষমতা দখল আর অসম্ভব থাকবে না।
মূলত, উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নেই রেলশহরে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বিরোধ’ বেধেছে তৃণমূলের। আগে একটানা ১৫ বছর খড়্গপুর পুরবোর্ড ছিল কংগ্রেসেরই দখলে। ২০১০-এর ভোটে ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল। প্রথম থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে জটিলতা রয়েছে তৃণমূল বোর্ডের। কংগ্রেস বোর্ডে যোগও দেয়নি। বাইরে থেকে সমর্থনকারী কংগ্রেসের অভিযোগ, শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শহরবাসী পরিষেবা পাচ্ছেন না। সমস্যায় পড়ছেন। দলের শহর সভাপতি অমল দাসের কথায়, “বর্তমান পুরবোর্ডের কাছে শহরবাসীর যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি।” প্রায় একই বক্তব্য প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশংকর পাণ্ডের। তাঁর কথায়, “অর্থ রয়েছে। অথচ কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না। পরিকল্পনা নেই। উদ্যম নেই। ফলে শহরবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে।”
তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও বর্তমান বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার সম্ভাবনা অন্তত প্রকাশ্যে উড়িয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের শহর সভাপতির বক্তব্য, “উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তৃণমূল নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁদের বলেছি, শহরের সার্বিক উন্নয়ন যেন স্তব্ধ না-হয়। স্বাভাবিক গতিতে কাজ এগোতে হবে।” কিন্তু সূত্রের খবর, অনাস্থা এনে বোর্ড দখলের লক্ষ্যেই এগোচ্ছে কংগ্রেস। ভেঙ্কট রামন ও বি মুরালিধর রাও সিপিএমের এই দুই কাউন্সিলর (যথাক্রমে ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের) কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শহর কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের এক দফা আলোচনাও হয়েছে। যদিও ভেক্টর রামনের বক্তব্য, “প্রাথমিক কথা হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য জানাচ্ছেন, দলের দুই কাউন্সিলর যে কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন, সে খবর তাঁদের কাছেও রয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর অনিতবরণ মণ্ডলের কথায়, “শুনছি আমাদের দুই কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন।” তাঁরও অভিযোগ, বর্তমান পুরবোর্ড শহরের সার্বিক উন্নয়নে সে ভাবে পরিকল্পনাই করছে না। বিরোধী দলনেতার কথায়, “মিটিং হয়। সিদ্ধান্ত হয়। অথচ তা কার্যকর হয় না! এই হল পরিস্থিতি। আসলে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।”
এই প্রেক্ষিতেই সূত্রের খবর, সোমবারই দুই সিপিএম কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেবেন। তবে, এখনই তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে কি না, সে নিয়ে শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব কিছুটা দোলাচলে। দলের একাংশ ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে চাইছেন। আরও মাস দু’য়েক অপেক্ষার পক্ষপাতী ওই অংশ। এই সময়ের মধ্যে তৃণমূল নেতৃত্ব শহর উন্নয়নে পদক্ষেপ করলে ভাল, না-হলে পুজোর পরেই আনা হবে অনাস্থা। শহর কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার কথায়, “তড়িঘড়ি কিছু করব না। কিন্তু শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ হলে অনাস্থা আনা ছাড়া উপায়ই বা কী!”
পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা অকর্মণ্যতার অভিযোগ অবশ্য মানতে চাইছেন না তৃণমূল পুরপ্রধান জহরলাল পাল। তাঁর দাবি, “উন্নয়নের কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে। এখন বর্ষা চলছে। এই সময়ে রাস্তায় পিচের কাজের মতো কিছু কিছু কাজ করা যায় না। এখন কেউ যদি বলেন পিচ রাস্তা সংস্কার করতে, তা তো অসম্ভব।” তাঁর বক্তব্য, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই অবান্তর অভিযোগ আনা হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.