ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ, হাতির ছানার ঠাঁই হবে জলদাপাড়ায়
মা চাইছে। দলপতি চাইছে না।
দলপতির কথাই রইল। ছোট্ট ‘দ্বারকেশ্বর’-কে আর ফিরিয়ে নিল না দলমার ৩৫টি হাতির দল। শুক্রবার সকালে দু’দুবার হস্তিশাবকটিকে দলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন বনকর্মীরাও। আপাতত তাই দিন সাতেকের ‘দ্বারকেশ্বর’-এর ঠাঁই বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে। তার পরের ঠিকানা হবে উত্তরবঙ্গ।
ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “নদীতে নাগাড়ে অনেকক্ষণ ভেসে থাকা এবং তার পরে দু’দিন ধরে নানা জায়গায় ঘোরাঘুরির ফলে শিশু হাতিটির বেশ ধকল গিয়েছে। সেই কারণে ঠিক করা হয়েছে, দু’দিন বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে বিশ্রাম দিয়ে এবং চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রেখে তাকে যতটা সম্ভব চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা হবে। তার পরে জলদাপাড়া রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হবে।”
বৃহস্পতিবার ভোরে বাঁকুড়ার চণ্ডীপুর গ্রামের কাছে ভরা দ্বারকেশ্বর নদ থেকে ওই হস্তিশাবকটিকে উদ্ধার করেছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। এর পরে তাকে পাত্রসায়রের খুড়ামনির জঙ্গলে হাতির দলের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলেও দল তাকে গ্রহণ করেনি। রাতে সে ছিল সোনামুখী রেঞ্জ অফিসের বারান্দায়। এক বনকর্মীর কথায়, “বাচ্চাটা ওর মার কাছে যাওয়ার জন্য এতটাই ছটফট করছে যে, রাত ১২টা নাগাদ সে হঠাৎ গ্রিল ভেঙে চিৎকার করতে করতে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। আমরা জেগে থাকায় দ্রুত তাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। না হলে বড় বিপত্তি হত।”
বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে ‘দ্বারকেশ্বর’। ছবি: শুভ্র মিত্র
খুদে হাতিকে ফের ‘মায়ের কোলে’ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগ সোনামুখীর জঙ্গলে প্রচেষ্টা চালায়। সকাল ৮টায় সোনামুখী রেঞ্জের তিবড়ার জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া হাতির দল থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ম্যাটাডর থেকে নামানো হয় শিশু হাতিটিকে। গুটিগুটি পায়ে সে দলের দিকে এগিয়ে গেলেও দলমার দলটি ফিরেও তাকায়নি না তার দিকে। মা হাতিটি অবশ্য মাঝেমধ্যেই ডেকে উঠেছে। সেই ডাক শুনে চিৎকার করেছেন খুদেও। কিন্তু দলপতি গোঁ ধরে থাকায় মা হাতি আর সাহস পায়নি।
তবু নাছোড় ছিলেন বনকর্মীরা। ঘণ্টা দুয়েক পরে হাতির দলটি যখন বেলিয়াতোড় রেঞ্জের বৃন্দাবনপুর বিটের সাউলিয়া গ্রামের দিকে এগোচ্ছে, তখন ফের চেষ্টা করা হয় হস্তিশাবকটিকে দলে ভিড়িয়ে দেওয়ার। দলের বড়দের দেখে খুদে হাতিটি হাঁক পাড়লেও দলপতি মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা দেয়। পিছনে চলতে থাকে গোটা দলটি। ফলে, ‘দ্বারকেশ্বর’ সেই একা পিছনেই পড়ে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত তিন বার ব্যর্থ হওয়ার পরে বন কর্তারা হাল ছাড়েন। বুঝতে পারেন, কিছুতেই আর বাচ্চাটিকে দলে ফেরানো সম্ভব নয়।
শেষ পর্যন্ত তাকে প্রথমে সোনামুখী রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তরল খাবার দেওয়া হয়। পরে এ দিন বিকেলে বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। মিনারেল ওয়াটারের সঙ্গে গ্লুকোজ ও ল্যাক্টোজেন মিশিয়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে। মাঝেমধ্যে বালতিতে দেওয়া হচ্ছে দুধও। কিন্তু মা-হারা শাবকটির খাওয়ায় তেমন আগ্রহ নেই। বনকর্মীরা তাকে সামলাতে গিয়ে অসহায় বোধ করছেন। দুই পশু চিকিৎসক তাকে নজরে রেখেছেন। বন দফতর সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত দলমার হাতির দলটির অবস্থান ছিল বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুর বিটের স্বর্গবাতির জঙ্গলে। বনকর্মীরা তাদের উপরে নজর রেখেছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.