|
|
|
|
সিঙ্গুর শুনানি |
ক্ষতিপূরণ ঠিক না করে অধিগ্রহণ কী ভাবে: বিচারপতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সিঙ্গুর আইনে টাটা মোটরস-কে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ, কত দিনের মধ্যে তা দেওয়া হবে, আইনের ৫ নম্বর ধারায় সেই সব বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার সিঙ্গুর মামলার শুনানির সময় বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্থির না করে কোনও সরকার জমি খাস করে নিতে পারে কি না!
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র জানিয়েছেন, সিঙ্গুর আইনের ওই ৫ নম্বর ধারাতেই স্পষ্ট করে বলে দেওয়া রয়েছে, টাটা মোটরস-কে রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনপত্র রাজ্যের হাতে এলেই হুগলির জেলা জজ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এর জন্য আইনে কোনও নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলা না থাকলেও, পদ্ধতিগত দিক থেকে খুব বেশি সময় নেওয়া হবে না বলে অনিন্দ্যবাবু বিচারপতিকে জানান। বিচারপতিকে তিনি এ-ও বলেন, প্রয়োজন হলে আদালত নিজেও সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে। রাজ্য সরকার আদালতের বেঁধে দেওয়া সেই সময়ের মধ্যেই টাটা মোটরস-কে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে সরকারি কৌঁসুলি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় পরে জানান, মামলা চলছে। বিচারপতি জানার জন্য বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো জবাবও দেওয়া হবে।
আগে জমি অধিগ্রহণ পরে ক্ষতিপূরণ, নাকি আগে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পরে অধিগ্রহণ সিঙ্গুর মামলায় এটিই হচ্ছে সওয়াল-জবাবের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিবদমান দু’পক্ষ, রাজ্য সরকার ও টাটা মোটরস ওই বিষয়টির উপরেই নিজের নিজের পক্ষে আইনি যুক্তি সাজিয়ে যাচ্ছে। টাটা মোটরস তাদের সওয়ালের সময় কলকাতা হাইকোর্টের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছে, কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা সিঙ্গুর আইনে উল্লেখ না করে আগেই জমি দখল নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। যা সংবিধান অনুযায়ী কোনও সরকার করতে পারে না।
অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের দাবি হচ্ছে, অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আইনে জমির মালিককেই বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। টাটা মোটরস সিঙ্গুরের জমির মালিক নয়। মালিক রাজ্য সরকার। ওই জমিতে তাদের শুধু লিজ চুক্তির অধিকার ছিল মাত্র। যা সিঙ্গুর আইন বলবৎ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে খারিজও হয়ে গিয়েছে। তবুও রাজ্যের আইনে টাটা মোটরস-এর পাশাপাশি তার সহযোগী সংস্থাগুলিকে (ভেন্ডার) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাগুলি আবেদন করলেই, ওই দিন থেকে সুদ কষে নির্ধারিত অঙ্কের ক্ষতিপূরণ রাজ্য সরকার সবাইকে মিটিয়ে দেবে।
সিঙ্গুর মামলায় টাটা মোটরস-এর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, জমি পেয়েও সেখানে কারখানা চালু না করে প্রকল্প গুটিয়ে চলে গিয়েছে সংস্থাটি। অথচ রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে ওই প্রকল্প যাতে সিঙ্গুরে বাস্তবায়িত হতে পারে, তার জন্য রাজ্য সরকার সব রকম সহযোগিতা করেছিল।
অনিন্দ্যবাবু এ দিন বিচারপতিকে জানান, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণের জন্য জমিহারাদের পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম ১৩৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। পাশাপাশি সিঙ্গুরের জমিতে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার নিজে ৭৬ কোটি টাকার মতো খরচ করেছিল। কিন্তু সেই অর্থ এক প্রকার জলেই গিয়েছে। সিঙ্গুরের জমি থেকে টাটা মোটরস-এর একটি গাড়িও উৎপাদন হয়নি। উল্টে সেই জমি এখন ‘অনুৎপাদক সম্পদ’ হয়ে পড়ে রয়েছে।
অনিন্দ্যবাবু আদালতকে বলেন, রাজ্য সরকার তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে যে ‘সিঙ্গুর জমি পুর্নবাসন এবং উন্নয়ন আইন ২০১১’ প্রণয়ন করেছে, তার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পড়ে থাকা ওই জমিকে ফের শিল্পের কাজে লাগানো। যাতে রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও সম্ভব হয়। বিচারপতিকে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, সিঙ্গুরের জমির মালিক যেখানে রাজ্য সরকার নিজেই, সেখানে তারা কেন নিজের জমিই অধিগ্রহণ করতে যাবে! সিঙ্গুর আইন প্রণয়ন করে শুধুমাত্র ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ, জনস্বার্থমূলক যে কাজের জন্য কেন্দ্রীয় আইন মেনে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা রাজ্যের একটি মানুষেরও স্বার্থ পূরণ করতে পারেনি। |
|
|
|
|
|