বন্যায় ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ
ছেলের ভাঁড় ভেঙে বাজার করছেন লক্ষ্মণ
দু’শো গ্রাম সর্ষের তেল, দেড় কেজি চাল, ডাল-নুন কিনে বাড়ি ফিরলেন লক্ষ্মণ দলুই। স্ত্রী ঝর্নাকে ডেকে বললেন, “ব্যাটা জানতে পারেনি তো?” উত্তর এল, “না।” বললেন, “দশ বছরের ছেলের ভাঁড় ভেঙে ক’টা টাকা পেয়েছিলাম। তাই দিয়ে বাজার করেছি। ত্রাণ না পেলে এ বার ঘটি-বাটি বন্ধক রাখতে হবে।” দিন দশেক ধরে জলবন্দি খানাকুল ১ এবং ২ ব্লকের ২৪টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। লক্ষ্মণবাবু থাকেন রাজহাটি গ্রামে। দিনমজুরি করে সংসার চলে। কিন্তু এখন কাজ দেবে কে? প্লাবিত দুই ব্লকের এখন একটাই দাবি, “ত্রাণ চাই।” রাজহাটিরই কল্যাণী দলুই, সুকুমার দলুই, ভুবন মালিক, কৃষ্ণা প্রামাণিক, স্বপন প্রামাণিক, গঙ্গা দলুই, মোহন দলুই বললেন, “ত্রাণ তো দূরের কথা, প্রশাসনের কারও দেখাই মিলছে না।”
জলমগ্ন উদয়নারায়ণপুরের টোকাপুর। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
খানাকুল ২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ছোট বাঁশের মাচা বাঁধা হয়েছে। ঘরে জল ঢুকলে আশ্রয় সেখানেই। সাপ মারতে ছেলেদের দল হাতে লাঠি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ত্রাণ না পৌঁছনোয় ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। যদিও আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “ত্রাণ যথেষ্ট আছে। সমস্যা বণ্টনে।” সিপিএমের দাবি, পঞ্চায়েতগুলিকে অকেজো করে রেখেছে তৃণমূল। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে ত্রাণ বিলি সবেতেই তাদের মাতব্বরি। অভিযোগ অস্বীকার করে খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ বলেন, “পঞ্চায়েত নিজের মতো কাজ করছে। আমরা সহযোগিতা করছি।” হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ত্রাণের অভাব হবে না। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে।
টোকাপুর প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকটি বানভাসি পরিবারের এক জন, তরুণ হাজরা বলেন, “গত দশ দিনের মধ্যে মাত্র এক দিন এক বাটি করে মুড়ি আর এক বাটি করে চাল পেয়েছে সকলে।” দুই নাবালক ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী অর্চনাকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বিনোদ চৌধুরী। অর্চনা বলেন, “শিশুখাদ্যের খুবই অভাব।” ত্রাণ অপ্রতুল বলে মানতে চাননি উদয়নারায়ণপুরের যুগ্ম বিডিও শক্তিপদ বড়া। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দনও বলেন, “মাঝে দু’এক দিন কিছুটা অসুবিধা থাকলেও পরে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “গুদাম ডুবে গিয়েছে। চাল তুলতে না পারায় রেশন ডিলারেরা কনফেডের চাল এলেও তা বিলি করতে পারছেন না।” প্রশাসনের থেকে পর্যাপ্ত চিঁড়ে-গুড় পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ বিধায়কের। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী যে ২ লক্ষ টাকার চাল কিনতে দেন, তা দিয়ে ৬৫টি গ্রামে একপ্রস্থ চাল বিলি করা হয়েছে। ‘মরুভূমিতে’ তা যে ‘বারিবিন্দু’ বলাই চলে।
সরকারি সূত্রে খবর, ডিভিসি, দুর্গাপুর, কংসাবতী ও তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে জল এখনও ছাড়া হচ্ছে। দামোদর, কেলেঘাই, যমুনা, জলঙ্গি, রূপনারায়ণ, চণ্ডীয়া, তিস্তা নদী কিছু এলাকায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। উত্তরবঙ্গে প্রবল বর্ষায় ফরাক্কা ব্যারাজও জল ধরে রাখতে পারছে না বলে শুক্রবার জানান সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকা ফের প্লাবিত হয়েছে। রাজ্যে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০-এ।

সহযোগী প্রতিবেদন: নুরুল আবসার



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.