তথ্যপ্রযুক্তির ভগীরথ ভাগ করে নেবেন স্বপ্ন দেখার কাহিনি
নফোসিসের নারায়ণমূর্তি আজ থেকে সারা দেশের।
শুক্রবারই আনুষ্ঠানিক ভাবে যবনিকা পড়ল ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং তিন দশকের কর্ণধার এন আর নারায়ণমূর্তির কর্মজীবনে। কিন্তু তাঁর নিজের কথা অনুযায়ীই, এ বার সেই সংস্থা গড়ার অভিজ্ঞতা তিনি ভাগ করে নেবেন সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ও দেশ গড়ার কাজে। নিজের তৈরি ‘ফান্ড’ থেকে অর্থ জোগাবেন সম্ভাবনাময় উদ্যোগপতিদের। মন দেবেন নতুন নারায়ণমূর্তির খোঁজে। পরামর্শ পাওয়ার দরজা খোলা থাকবে ইনফোসিস কর্মীদের জন্যও। যে কারণে বেঙ্গালুরুতে সংস্থার সদর দফতরে মাঝে-মধ্যেই দেখা যাবে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মানচিত্র বদলে দেওয়া এই মানুষটিকে। চেয়ারম্যান-এমেরিটাস হিসেবে।
বিদায় লগ্নে এত দিন একাগ্র সাধনায় তিলে তিলে সংস্থা গড়ার রূপকারকে হৃদয় উজাড় করে সংবর্ধনা দিল ইনফোসিস-ও। এ দিন সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলেন ইনফোসিসের অন্য ছয় প্রতিষ্ঠাতা। এমনকী টি ভি মোহনদাস পাই-এর মতো সংস্থা ছেড়ে চলে যাওয়া নামী ‘শিষ্য’রাও। যেখানে অফিসে নিজের শেষ দিনেও সংস্থাকে আরও বহু গুণ বড় করার স্বপ্নই ফের দেখিয়েছেন নারায়ণমূর্তি।
বিনম্র শ্রদ্ধা উপুড় করে দেওয়ার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল নারায়ণমূর্তির পরিবার। ইনফোসিস তৈরির পর থেকে জীবনের ৩০টা বছর যাঁদের প্রায় সময়ই দিতে পারেননি তিনি। এক সময় দিনে ১৬ ঘন্টা বরাদ্দ থেকেছে সংস্থার কাজে। বছরে ৩৩০ দিন কাটিয়েছেন বাড়ির বাইরেই। পরিবার না অফিস কোনটা বাবার বেশি প্রিয়, এক-এক সময় তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছে তাঁর ছেলে-মেয়েরাই।
কিন্তু এই ত্যাগ, লড়াই আর উদ্ভাবনী চিন্তার দৌলতেই তো ইনফোসিস আজ ৬০০ কোটি ডলার ব্যবসা আর ১ লক্ষ ৩০ হাজার কর্মীর মহীরুহ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিকারী সংস্থা। সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা চিন্তাতেও বরাবরই সামনের সারিতে থেকেছে ইনফোসিস। তা সে কর্মীদের হাতে শেয়ার তুলে দেওয়াই হোক, বা মার্কিন শেয়ার বাজারে নথিভুক্তি। আর এই সব সিদ্ধান্তের পিছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারায়ণমূর্তির ছায়া দেখেছে শিল্পমহল।
তবে শুধু ইনফোসিসের সাফল্যের মাপকাঠিতে নারায়ণমূর্তিকে মাপতে যাওয়া হয়তো ভুল হবে। কারণ, তিনি তো শুধু একটি সংস্থারই প্রতিষ্ঠাতা নন। বরং বলা ভাল, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভগীরথ। কারণ, যে সময়ে (১৯৮১) সংস্থার ভিত গাঁথছেন তিনি, তখনও মনমোহন সিংহের
নামই শোনেননি সিংহভাগ ভারতীয়। বিশ্বায়ন এক দশক দূরে। একখানা কম্পিউটার আমদানি করতেও সরকারি ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। এই পরিস্থিতিতেও ভারতের বুকে দুনিয়ার অন্যতম সেরা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কর্ণাটকি স্কুল শিক্ষকের এই সন্তান। অনেকের মতে, তাঁর স্বপ্ন দেখার ‘স্পর্ধা’ই পরবর্তীতে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসিয়ে দিয়েছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে।
এ হেন নারায়ণমূর্তি-ই আর কর্ণধার থাকবেন না, যখন সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে সোমবার ফের দরজা খুলবে ইনফোসিস। গত ৩০ এপ্রিল নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক-কে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবে গড়ে তোলার মূল রূপকার কে ভি কামাথ-এর নাম ঘোষণা করেছে পরিচালন পর্ষদ। ‘নয়া জমানা’য় এগ্জিকিউটিভ কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বর্তাচ্ছে এস গোপালকৃষ্ণনের উপর। নতুন সিইও এবং এমডি হচ্ছেন এস ডি শিবুলাল।
১৯৮১ সালে পুনেতে ছয় বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ইনফোসিস গড়ার কাজ শুরু করেন নারায়ণমূর্তি। সম্বল ছিল স্ত্রীয়ের কাছে ধার করা ১০ হাজার টাকা। সেখান থেকে স্রেফ ক্ষুরধার মেধা, উদ্ভাবনী চিন্তা আর অনলস পরিশ্রমে এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন ইনফোসিসের প্রাণপুরুষ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রাণভোমরা।
১৯৯০ সালে লাগাতার ব্যর্থতার বিরক্তিতে ১০ লক্ষ ডলারে ইনফোসিস বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠাতা টিমের বাকি সদস্যরা। রাজি ছিলেন না শুধু নারায়ণমূর্তি। ফাঁকা পকেট নিয়েও সংস্থার বাকি শেয়ার কিনে নেওয়ার সাহসী প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। ৬৫ ছোঁয়ার ঠিক আগের দিন অবসর নিলেন যার প্রধান কুশীলব। নাগাবরা রামারাও নারায়ণমূর্তি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.