হজারের হুঁশিয়ারি, কুলুপ এঁটে অপেক্ষায় কেন্দ্র
রামলীলা ময়দানের অনশন মঞ্চে পৌঁছেই অণ্ণা হজারে জানিয়ে দিলেন, তাঁর জন লোকপাল বিল নিয়ে অনড় অবস্থানই নিচ্ছেন তিনি। জোর গলায় বললেন, হয় জন লোকপাল বিল পাশ করতে হবে। নয়তো অনশনে প্রাণ দেবেন তিনি! একই সঙ্গে সরকারকে ১২ দিন সময় দিলেন জন লোকপাল বিল পাশ করার জন্য।
অণ্ণার মতো এতটা অনড় অবশ্য তাঁর দলের বাকি সদস্যরা। তাঁরা বরং মনে করছেন, এই জট কাটানোর একমাত্র উপায় সরকারের সঙ্গে আলোচনা। অবশ্যই দুর্নীতির সঙ্গে সমঝোতা না করে এই আলোচনা চালাতে হবে।
সরকার এ সব নিয়ে আপাতত কিছু উচ্চবাচ্য করতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে কোর গ্রুপের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আলোচনার জন্য দরজা সব সময়ই খোলা রাখা থাকবে। কিন্তু জন লোকপাল বিল পাশ করানো নিয়ে কোনও আলোচনায় যাবেন না তাঁরা। বরং কেউ কথা বলতে এলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে, লোকপাল বিল নিয়ে কোনও মতামত জানাতে হলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছেই মতামত জানান।
তাঁকে ঘিরে ভিড় জমছিল রাজঘাটে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে বলে পুলিশ। দৌড়ন অণ্ণা হজারে। পি টি আই
রামলীলা ময়দানে অণ্ণার অনশনের প্রথম দিনে এক ঝলকে দুই শিবিরের ছবি এটাই।
জন লোকপাল বিল নিয়ে আজ অণ্ণা যে অবস্থান নিয়েছেন, তাকে ‘ব্ল্যাকমেল’ বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু যে জনসমর্থন নিয়ে আজ রামলীলায় পৌঁছেছেন অণ্ণা, তার পরে এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে নারাজ। তবে কংগ্রেস তথা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, জন লোকপাল বিল সংসদে ‘প্রাইভেট মেম্বার’ বা ব্যক্তিগত সদস্য বিল হিসেবে পেশ হলেও তা সর্বসম্মত ভাবে
পাশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অণ্ণার জন লোকপাল বিল নিয়ে বিজেপি-র যে আপত্তি রয়েছে, সে কথা বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজই জানিয়েছেন। যদিও বিজেপি
সাংসদ বরুণ গাঁধী এ দিনও জানিয়েছেন, তিনি এই বিল ব্যক্তিগত সদস্য বিল হিসেবে পেশ করতে প্রস্তুত। তবে বরুণের এই মন্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছে না বিজেপি। আসলে বিজেপি চাইছে, সরকার বিরোধিতার এই আঁচ থেকে যতটা সম্ভব ফায়দা তুলতে। আবার অণ্ণা প্রধান বিরোধী হয়ে উঠুন, সেটাও চাইছে না তারা।
সকাল থেকে এ দিন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল রাজধানীতে। কিন্তু বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এ দিন গোটা দিল্লি ভেঙে পড়েছিল অণ্ণাকে দেখতে। সকাল ১১টা ৪০-এ তিহাড় জেল থেকে বার হন অণ্ণা। সেখানে ভোর থেকেই কয়েক শো মানুষ ভিড় করে অপেক্ষা করছিলেন। তার পর তিনি যে পথ দিয়ে গিয়েছেন, উপচে পড়েছে ভিড়। যাত্রা শেষে রামলীলায় পৌঁছে এক ছুটে দরজা দিয়ে ঢুকে গেলেন তিনি। সঙ্গে অসংখ্য সমর্থক। তার পরেই সরকারের প্রতি তাঁর ‘চরম’ বার্তা।
তিহাড় থেকে বেরিয়েই তিনি এক বার সমর্থকদের প্রতি বক্তব্য রেখেছিলেন। তবে ‘জন লোকপাল বিল পাশ না হলে অনশনে প্রাণ দেব’, এ কথা অণ্ণা বলেন রামলীলায় পৌঁছে। প্রাথমিক ভাবে অণ্ণাকে ১৫ দিন অনশনের অনুমতি দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে, মেয়াদ শেষের চার দিন আগে ইচ্ছে করলে অনশনের মেয়াদ সাত দিন বাড়িয়ে নিতে পারেন অণ্ণারা। হজারেকে এর আগে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি ১৫ দিনের মধ্যেই বেঁধে রাখবেন অনশন? তখনই প্রবীণ এই সমাজকর্মী বলেন, “আমি আমার জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। এ বার বিল পাশ হবে কি না, সেটা সরকারের উপরে। যদি এই চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ না হয় তবে আমি আমরণ অনশন করে যাব।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ৩০ অগস্টের মধ্যে জন লোকপাল বিল পাশ না হলে জেল ভরো অভিযানও শুরু করবে তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে কৌশল ঠিক করতে আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, স্থির হয়েছে সরকার আর হজারে সমর্থকদের সঙ্গে যেচে কোনও কথা বলবে না। তাঁরা আলোচনা চাইলে কথা বলতে আসতেই পারেন। তবে সরকারের তরফে তাঁদের বলা হবে যে, তাঁরা তাঁদের মত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জানান। কংগ্রেস নেতৃত্ব আশা করছেন, রামলীলা ময়দানের ভিড় তিন-চার দিনের মধ্যেই কমে যাবে। ফলে আপাতত চুপচাপ বসে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে চাইছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের স্পষ্ট বক্তব্য, লোকপাল বিল সংসদে ইতিমধ্যেই পেশ হয়েছে। সেই বিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। যে কমিটিতে মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলের সদস্য রয়েছেন। অণ্ণা সমর্থকরা চাইলে তাঁদের মত কমিটিকে জানাতে পারেন। তাঁদের বক্তব্য শুনে কমিটি যে সুপারিশ করবে, তা সরকার ফের বিবেচনা করে দেখবে।
এখন প্রশ্ন জন লোকপাল বিল কি বরুণ গাঁধীর মতো কেউ ব্যক্তিগত সদস্য বিল হিসেবে পেশ করবে? এই নিয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। তবে কেন্দ্রের এক মন্ত্রীর কথায়, ব্যক্তিগত সদস্য বিলের মাধ্যমে জন লোকপাল বিল সংসদে পেশ করা অণ্ণা শিবিরের পক্ষে একটি মুখরক্ষার পথ হতে পারে। কিন্তু তা পাশ হওয়ার আশা নেই। অতীতে ব্যক্তিগত সদস্য বিল পাশ হওয়ার বিশেষ নজিরও নেই। তা ছাড়া এই ধরনের বিল পেশ করতে গেলে এক মাসের নোটিস দিতে হয়। ফলে বরুণ গাঁধী এখন নোটিস দিলে তা সংসদের চলতি অধিবেশনে পেশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া প্রাইভেট মেম্বার বিলের জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রচুর সংখ্যায় নোটিস সংসদে জমা পড়ে। ফলে কোনও সপ্তাহে কোন কোনও প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ হবে তা লটারির মাধ্যমে স্থির হয়।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ বলেন, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে জন লোকপাল বিল সংসদে পাশ হয়ে গেল। কিন্তু তাতে মুশকিল হচ্ছে, সাংসদদের অধিকার-সহ জন লোকপাল বিলের অনেক ধারা সংবিধানের পরিপন্থী। তাই অণ্ণা সমর্থকদেরও পরিস্থিতি বুঝতে হবে। কেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখতে চাইছেন, কেনই বা সব রকম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখতে চাইছেন, সে ব্যাপারে তাঁদের মত তাঁরা স্থায়ী কমিটির কাছে জানান। কমিটির সুপারিশ সরকার ভেবে দেখবে। এ ছাড়া উপায় নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.