|
|
|
|
তরুণী বধূর প্রাণ বাঁচাল ‘মানবিক’ শহর, পুলিশও |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
মঙ্গলবার শহরের ‘মানবিক মুখ’ ধাক্কা খেয়েছিল এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে। ১৮ বছরের দুই ছাত্রকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেও হাসপাতালে পৌঁছতে এক যুবক ছাড়া এগিয়ে আসেননি কেউ। বৃহস্পতিবার সেই ‘ধাক্কা’ কিছুটা কাটিয়ে দিয়েছিল রিভার ট্রাফিক পুলিশ। জলে পড়ে যাওয়া হাওড়ার এক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছিল তারা। আর শুক্রবার বিকেলে কলকাতার ‘মানবিক মুখ’ সসম্মানে ফিরে এল বাবুঘাটে। চার যুবক জলে ঝাঁপিয়ে উদ্ধার করলেন ২১ বছরের এক তরুণী গৃহবধূকে। রিভার ট্রাফিক পুলিশ পৌঁছনোর আগেই।
কলকাতা পুলিশের ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্সও দেরি করেনি এতটুকু। তরুণীকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে পুলিশই। আর এই তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছেন ২১ বছরের ওই গৃহবধূ। পুলিশ এবং পথচারীরা মঙ্গলবার এই তৎপরতা দেখালে ১৮ বছরের স্কুলছাত্র সুপ্রিয় রায়কে মরতে হত না বলে মন্তব্য করেছেন আশিস চৌধুরী। কারও সাহায্য না পেয়ে আশিসবাবু মঙ্গলবার উড়ালপুলের উপরে নিজের বাইক আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে থামিয়েছিলেন অ্যাম্বুল্যান্স। তাতে তুলে দিয়েছিলেন দুই ছাত্রকে। দুর্ঘটনার ৪০ মিনিট পরে। আশিসবাবু এদিন বলেন, “শহরটা যে এখনও মরে যায়নি, সেটা এই ঘটনায় পরিষ্কার। সবাই যদি এ ভাবে এগিয়ে আসেন, তা হলে আমাদের চারপাশের দুনিয়াটাই বদলে যেতে পারে।”
যে চার যুবক এ দিন ভরা গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তরণীকে বাঁচালেন তাঁদের নাম-ধাম জানার চেষ্টাই করেনি পুলিশ। ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা পুলিশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, “তখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল মেয়েটিকে বাঁচানো। তাই কে বা কারা তাঁকে উদ্ধার করলেন, তাঁদের নামধাম নিতে পারিনি। দৌড়েছি হসাপাতালের দিকে।” সন্ধ্যায় বাবুঘাটে গিয়েও খোঁজ মেলেনি ওই যুবকদের। ঘাটের মাঝিরাও তাঁদের সন্ধান দিতে পারেননি। তবে এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “দুই যুবক তখন স্নান করতে নামছিলেন। অন্য দু’জন পাড়ে ছিলেন। তরুণীকে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে দেখে ওঁরাও জলে ঝাঁপ দেন। গঙ্গা এখন টইটম্বুর। জলের টানও খুব। আর একটু দেরি হলে ভেসে যেত মেয়েটি।”
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তরুণী দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকেরা জানান, জলে পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে উদ্ধার করায় তরুণীর পেটে জলও যায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, স্বামীর দুর্ব্যবহার সহ্য করতে না পেরেই ওই তরুণী আত্মহনন করতে গিয়েছিলেন। তরুণীর স্বামী কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালের কর্মী। পুলিশ তাঁর স্বামীকে ডেকে পাঠায়। হাসপাতালে স্ত্রীর শয্যার সামনে দাঁড়িয়ে স্বামী স্বীকার করেন, “ও অসুস্থ। এদিন ওর এন্ডোস্কোপি করার কথা ছিল। ও ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাতে আমি বকাবকি করেছি। তার পরেই ও ঝগড়া করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে।” তরুণীর অভিযোগ, “এক বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি জরায়ুর টিউমারে ভুগছি। চিকিৎসার খরচ নিয়ে স্বামী সবার সামনে যখন তখন অপমান করেন। এ দিন হাসপাতালে এমন সব কথা বললেন যে, আমি সহ্য করতে পারিনি।”
পুলিশ কিন্তু ওই নতুন সংসার ভাঙতে চায়নি। তারা স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে যায় উত্তর বন্দর থানায়। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। থানার এক মহিলা অফিসার বলেন, “দু’জনেরই অল্প বয়স। ঝোঁকের মাথায় ভুল করে ফেলেছে। মেয়েটি তো আমার মেয়ের বয়সী। একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। আমরা ওদের মিটমাট করে নিতে বলেছি। কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। মেয়েটি কী করবে, তা ওর উপরেই ছেড়ে দিয়েছি। ও স্বামীর সঙ্গেই থাকতে চেয়েছে।”
রাতে ওই তরুণ-তরণী ফিরে গিয়েছেন নিজেদের বাড়িতে। কলকাতা পুলিশের ‘মানবিক মুখ’টাও এদিন দেখলেন ওঁরা দু’জন। |
|
|
|
|
|