সিটি সেন্টারে বোমাতঙ্ক
প্রেমিকাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই মোবাইলের ফাঁসে
শেষ পর্যন্ত নিজের ফাঁদে নিজেই আটকে গেলেন বসিরহাটের সফিকুল ইসলাম গাজি।
সল্টলেকের সিটি সেন্টারে বোমা রাখা আছে বলে ফোন করে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ সফিকুলকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার নিজের মোবাইল থেকে ওই ফোনটি সফিকুলই করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। তবে ওই মোবাইল ফোনে যে-সিমকার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি বারাসতের শাসন এলাকার এক তরুণীর বলে জেনেছে পুলিশ।
ওই তরুণীর নামে কেনা সিমকার্ড সফিকুলের মোবাইলে এল কী ভাবে?
তদন্তকারীদের অভিযোগ, সিমকার্ডটি যে-তরুণীর নামে কেনা হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে সফিকুলের ভাব-ভালবাসা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। তিনি যে বিবাহিত এবং তাঁর যে দুই সন্তানও রয়েছে, সেটা প্রণয়িনীর কাছে গোপন করেছিলেন ওই যুবক। কিন্তু তরুণীটি সম্প্রতি তা জেনে যাওয়ায় তিনি সফিকুলের উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তার পরেই বান্ধবীকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন সফিকুল।
ধৃত সফিকুল ইসলাম। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
বান্ধবীর নামে সিমকার্ড কিনে সিটি সেন্টারে ফোন করেন তিনি। সফিকুল ভেবেছিলেন, মোবাইলের সিমকার্ড যাঁর নামে আছে, তাঁকেই ধরবে পুলিশ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সফিকুল ওই সিমকার্ডটি নিজের মোবাইলে ভরে নিয়েছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারে ফোন করার পরে সিমকার্ডটি মোবাইল থেকে বার করে নষ্টও করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। এক সময় মোবাইল ফোন মেরামত করতেন সফিকুল। কিন্তু তাঁরও ধারণা ছিল না যে, মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর দেখে পুলিশ ঠিক তাঁকে ধরে ফেলবে। ওই নম্বর ধরেই বোমাতঙ্ক ছড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধাননগর (উত্তর) থানার পুলিশ তাঁকে বসিরহাটের শাঁকচুড়োর পাতিলাচন্দ্র গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে।
ওই গ্রামেই সফিকুলের বাড়ি। তাঁর মোবাইল ফোনটিও আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু সফিকুল তাঁর বান্ধবীর নামে সিমকার্ড কিনলেন কী ভাবে?
তদন্তকারীদের দাবি, যখন তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল, সেই সময় ওই তরুণী সফিকুলের কাছে একটি মোবাইল ফোন চেয়েছিলেন। সফিকুল তখনই ওই তরুণীর কাছ থেকে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি নিয়ে রেখেছিলেন। প্রেমিকাকে জব্দ করার জন্য সেটাকেই কাজে লাগান তিনি। ওই তরুণীর নামে সিমকার্ড সংগ্রহ করেন সেই পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই। শাঁকচুড়ো বাজারে এক সময় মোবাইল ও কম্পিউটার সারাইয়ের দোকান ছিল সফিকুলের। সিমকার্ড জোগাড় করতে তাই তাঁর কোনও সমস্যাই হয়নি।
বিধাননগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রণেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সফিকুলের সঙ্গে এক সময় ওই তরুণীর সম্পর্ক ভাল ছিল। সেই সুবাদে তরুণীটি নিজের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি ওই যুবককে দিয়েছিলেন। সেটি দেখিয়েই স্থানীয় দোকান থেকে সিমকার্ড কেনেন সফিকুল। তার পরে সেই নম্বর থেকে উড়ো ফোন করেন সিটি সেন্টারে।” বোমাতঙ্কের ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়। সিটি সেন্টারের পাশাপাশি তখন বেজায় ভিড় আইনক্সেও।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সিটি সেন্টারের বোর্ডের নম্বরে ফোনটি এসেছিল। অল্প ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ জেনে যায়, ফোনটি করা হয়েছে বসিরহাট থেকে। কিন্তু সফিকুল নিমদাঁড়িয়া স্টেশনের কাছে সিমকার্ডটি ভেঙে ফেলে দেওয়ায় টাওয়ার খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুলিশি তদন্ত প্রাথমিক ভাবে ধাক্কা খায়। তার পরে আইএমইআই নম্বর খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। আইএমইআই নম্বর খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, মোবাইলটির মালিক সফিকুল। তদন্তকারীদের দাবি, বান্ধবীকে জব্দ করতেই তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জেরায় স্বীকার করেছেন সফিকুল। লোকাল ট্রেনে কলকাতার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কিত একটি বই কিনেছিলেন তিনি। তা থেকেই তিনি সিটি সেন্টারের নম্বর পেয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.