|
|
|
|
কেন্দ্রে মেহতাব |
দেশ বনাম ক্লাব যুদ্ধে বিরল নাটক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, মহেশ গাউলিরা মঙ্গলবার সকালে দিল্লি জাতীয় শিবির থেকে গোয়া ফিরে এলেন ডেম্পোর নির্দেশে। রবিবার সকালে আবার তাঁরা শর্তসাপেক্ষে গোয়া থেকে দিল্লির শিবিরে ফিরছেন ক্লাবের নির্দেশেই। বিকেলে তাঁদের বলা হয়েছিল, বুধবার সকাল থেকে ক্লাব প্র্যাক্টিসে যেতে।
সকাল থেকে রাত, ক্লাব বনাম দেশ বিতর্কে নাটকের পরে নাটক। এমন ভাবে ফুটবলার তুলে আনার ঘটনা কোনও দিন ঘটেনি ভারতীয় ফুটবলে। রাতের দিকে সমস্যা অনেকটা মিটলেও নাটক থেকেই গেল।
ঘটনাপ্রবাহ পাল্টে যাচ্ছিল বারবার। পুণে এফ সি জানিয়ে দেয়, সুব্রত পাল ও জেজেকে জাতীয় শিবির থেকে ছেড়ে দিতে। অথচ দু’জনেই বিকেলে দিল্লির অম্বেডকরে অনুশীলন করলেন আর্মান্দো কোলাসোর কোচিংয়ে। মোহনবাগান কর্তারা নজর রাখছিলেন, ডেম্পো কী করে। তাঁদের সুনীল ছেত্রী ছিলেন দিল্লির জাতীয় শিবিরে, নবি-জুয়েল রাজা কলকাতায় ক্লাব প্র্যাক্টিসে।
রাতের দিকে যা ছবি দাঁড়াল, তাতে ক্লাবগুলোর প্লেয়ার ছাড়ার ব্যাপারটা নির্ভর করছিল এক বঙ্গসন্তান ফুটবলারের উপর। তিনি মেহতাব হোসেন। ইস্টবেঙ্গল তাঁকে ছাড়তে চাইছে না, মানসিক ক্লান্তির কথা বলে। তিনি ক্লাবের ৬৩টি-র মধ্যে ৫০টি পুরো ম্যাচ খেলেছেন। মোহনবাগান জানিয়ে দিয়েছে, মেহতাবকে পাঠানো হলেই নবিকে শিবিরে পাঠানো হবে। নইলে ফেরত আনা হবে সুনীলকেও। ডেম্পোরও ওই বক্তব্য। অন্য সব ক্লাব সব ফুটবলারকে ছাড়লেই তারা ফুটবলার ছাড়বে। নইলে তারা দ্বিতীয় দফায় শিবির থেকে ফিরিয়ে আনবে সব ফুটবলার।
সব মিলিয়ে মোহনবাগান, ডেম্পো, পুণে এক দিকে এক জোট। ইস্টবেঙ্গলও প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত, মেহতাবকে না ছাড়ায়। সব ক্লাবেরই প্রশ্ন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার জন্য এত নাটক কেন হবে?
কী করবেন মেহতাব হোসেন? তিন দিন ছুটি কাটাতে তিনি গিয়েছিলেন দার্জিলিং। আজ, বুধবার সকালের ট্রেনে ফিরছেন। ক্লাব বনাম দেশ বিতর্কে তিনি প্রধান বিন্দুতে জেনে নিজেও বেশ বিব্রত। কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মর্গ্যান ও লাল হলুদ কর্তারা চান না, দলের এক নম্বর ফুটবলার বেশি খেলে ক্লান্ত হয়ে পড়ুন। মেহতাব আবার জাতীয় দলের হয়ে বেশি খেলেননি। দু’তরফেরই বক্তব্য ফেলতে পারছিলেন না। বিভ্রান্ত। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে দার্জিলিং মেল ছাড়ার ঠিক আগে মেহতাবকে ফোন করে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা বলেন, তাঁকে শিবিরে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি যেন কলকাতা ফিরে বুধবার দুপুরের বিমানে দিল্লি চলে যান। এই ফোনের পরেই সফর নিয়ে জট কিছুটা হলেও খোলার পথে।
ক্লাবগুলো প্লেয়ারদের ছাড়বে না শুনে মারাত্মক ক্ষিপ্ত ছিলেন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল। তিনি মঙ্গলবারের সভায় অন্য কর্তাদের বলে দেন, “ক্লাবগুলোর শেষ দেখে ছাড়ব। তেমন হলে আই লিগ বন্ধ করে দেব। দেখি, কী করে।” শোনা যাচ্ছিল, রাতের দিকে ক্লাবগুলোকে শাস্তির হুমকি দিয়ে চিঠি দেবে ফেডারেশন। তা না করে, তারা ক্লাবগুলোকে ‘অশ্বত্থামা হত’ ভঙ্গিতে বলে গিয়েছে, অন্য ক্লাব কিন্তু প্লেয়ার ছাড়ছে।
রাতের দিকে ক্লাবগুলো বুঝে যায় ছবিটা কী। সবাই বলতে থাকে, অন্যরা সব প্লেয়ার ছাড়লে আমরা প্লেয়ার ছাড়ব। মোহনবাগানের লক্ষ্য দাঁড়ায় মেহতাব। ইস্টবেঙ্গল তাঁকে আটকে বাকি গুরুত্বহীন প্লেয়ার ছাড়লে চলবে না, বলে ফেডারেশনকে জানিয়ে দেয় মোহনবাগান। মেহতাবকে ছাড়ার ব্যাপারে ইস্টবেঙ্গল সবুজ সঙ্কেত দেওয়ায় নাটক শেষের দিকে। তবে মোহনবাগানের কিছু কর্তার আশঙ্কা, দিল্লিতে শিবিরে যোগ দিইয়ে মেহতাবকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। তাঁরা নবি ও জুয়েল রাজাকেও আজ পাঠিয়ে দিচ্ছেন শিবিরে। পাশাপাশি দেখছেন, মেহতাবও দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যান কি না।পুণে এফ সি কিন্তু নিজেদের পুরনো সিদ্ধান্তে রাত পর্যন্ত অটল। সুব্রত ও জেজেকে রাতেও বলে দেওয়া হয়, বুধবারই শিবির ছেড়ে ক্লাব প্র্যাক্টিসে যোগ দিতে। মেলে বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফেডারেশন সুব্রতদের আটকানোর চেষ্টায়। |
|
|
 |
|
|