আগাম সতর্কতা
বন্যার ভ্রূকুটি হুগলি-হাওড়ায়
ডিভিসি-র ছাড়া জলে ফের বন্যার ভ্রূকুটি দেখা দিয়েছে হুগলির আরামবাগ মহকুমায়। একই কারণে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও।
মঙ্গলবার ডিভিসি থেকে ছাড়া ৬৭ হাজার কিউসেক জল মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদর দিয়ে বইছে। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, রাতে আরও ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার কথা ডিভিসি-র। মহকুমাশাসক বলেন, “পরিস্থিতি আন্দাজ করে পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচার চালাতে। এখনও পর্যন্ত কাউকে নিরাপদ জায়গায় পাঠানোর প্রয়োজন হয়নি। তবে, বিপর্যয় হলে তা মোকাবিলার জন্য সরকারি সমস্ত দফতর প্রস্তুত রয়েছে।” ডিভিসি ক্যানেলের জল উপছে রাস্তায় জমে যাওয়ায় আরামবাগ-বদনগঞ্জ রুটের বাস চলাচল মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে। ফলে, পথে বের হওয়া মানুষজন দুর্ভোগে পড়েন। বাধ্য হয়ে কোনওক্রমে গরুর গাড়িতে চড়ে ওই রাস্তায় যাতায়াত চলছে।
গত জুন মাসেই কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পরে ডিভিসি জল ছাড়ায় এবং কংসাবতীর জল দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরে ঢুকে আরামবাগ মহকুমার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর কয়েকটি বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় পুড়শুড়া এবং খানাকুলের কিছু অংশে জল ঢুকে গিয়েছিল। আরামবাগের সালেপুরে দ্বারকেশ্বরের একটি স্লুইস গেট অকেজো হয়ে পড়ায় প্লাবিত হয়েছিল মানিকপাট-সহ ৫-৬টি গ্রাম। খেতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয় সব্জি চাষে। সেই সময় ডিভিসি ৫০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল।
জল-যন্ত্রণা। আরামবাগ থেকে বদনগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় সাতবেড়েতে মঙ্গলবার মোহন দাসের তোলা ছবি।
আরামবাগ ছাড়াও হুগলির সদর মহকুমার কয়েকটি জায়গায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে এবং নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ না থাকায় জল জমেছে। বলাগড়ের চরকৃষ্ণবাটি, মিলনগড়, মহিপালপুর, মালঞ্চ, সুভাষপল্লি, ব্যানার্জিপাড়ায় এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা গুপ্তিপাড়া ১ ব্লকের রেল লাইন-লাগোয়া মীরডাঙা, গুপ্তিপাড়া ২ এর ফতেপুর, রসুলপুর এবং কুন্তিঘাটের শেরপুরেও। বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম রায় বলেন, “জল বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে, ডিভিসি-র ছাড়া জল বাড়লে নিচু এলাকায় সমস্যা বাড়তে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক আছি। প্রয়োজনে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।” বেহুলা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে পাণ্ডুয়ার ইলছোবা-দাসপুর পঞ্চায়েতের ন’পাড়া গ্রামে। বেশ কয়েকটি বাঁধ দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে।
আজ, বুধবার দুপুর নাগাদ ডিভিসির ছাড়া জল উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে ঢুকে পড়তে পারে বলে হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়। যে এলাকায় জল ঢুকতে পারে, সেখানে মঙ্গলবার দুপুর থেকে প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উদয়নারায়ণপুরে ১১টির মধ্যে ৮টি এবং আমতা ২ ব্লকের ১৪টির মধ্যে ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা পড়ে দামোদরের পশ্চিম পাড়ে। এই দিকটি দামোদরের ‘স্পিল’ এলাকা হওয়ায় এখানে কোনও নদী বাঁধ নেই। সে কারণেই ডিভিসির ছাড়া জল এই দু’টি ব্লকের ১৯টি পঞ্চায়েত এলাকাকে ভাসিয়ে দেয়।
এ বারেও বন্যার আশঙ্কায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। দু’টি ব্লকে বিভিন্ন হাইস্কুলগুলিকে ত্রাণশিবির হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর থেকে তিনটি স্পিড বোট আনা হয়েছে। এ ছাড়া, আমতা ২ ব্লকে ২৬টি এবং উদয়নারায়ণপুরের জন্য ৫টি দেশি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্পিড বোট এবং দেশি নৌকাগুলি রাখা হয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার করা কিংবা ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য। জেলা প্রশাসনের দাবি, ত্রিপল-চিঁড়ে-গুড় প্রয়োজনীয় পরিমাণে মজুত রয়েছে। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দন বলেন, “উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকে যে সব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মজুতদার রয়েছেন, তাঁরা যেন সেই পণ্য সরিয়ে ফেলতে না-পারেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিডিওদের কড়া নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। কারণ, এই সব পণ্য বন্যার সময়ে কাজে লাগতে পারে।” সাপে কাটার ওষুধও প্রয়োজনীয় পরিমাণে মজুত রাখতে স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.