সম্পাদকীয় ২...
ছুটির এই ঝর্নাধারায়
বীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ছুটি। তাঁহার মৃত্যুদিনেও ছুটি। আবার সেই ছুটির দিনটিতে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আলোকফেরি’তে যোগ দিয়া বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তাহার পর দিনও ছুটি। আলোকফেরিতে অবশ্য আলোকের চেয়ে শ্রাবণশেষের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের অন্ধকারই বেশি ছিল, আর আলোকের ঝর্নাধারায় ধুইয়া দিবার প্রার্থনা মঞ্জুর হইয়াছিল মৌসুমি বৃষ্টির ঝর্নাধারায় স্নাত হইয়া। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী নিতান্ত কথাচ্ছলে বর্ষণসিক্ত স্কুল-পড়ুয়াদের জন্য পরের দিনটি ছুটি দিবার কথা বলিয়াছিলেন কি না, প্রথমে বুঝা যায় নাই। উত্তর চব্বিশ পরগনার জনৈক স্কুল-পরিদর্শক তো ছুটি-উদ্গ্রীব এক দিদিমণিকে তিরস্কারই করিয়াছিলেন, তাঁহার স্কুলের পড়ুয়ারা তো আলোকফেরির ধারাজলে স্নাত হয় নাই, তবে তাহারা ছুটি পাইবে কেন? শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মধ্য শিক্ষা পর্ষদের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের সকল স্কুলেই ছুটির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। অতএব মেঘের কোলে রোদ না-ই বা হাসিল, আজ আমাদের ছুটির লগ্ন। অন্তত এই একটি ব্যাপারে ‘পরিবর্তন’-এর কোনও লক্ষণ নাই।
ভাগ্যে নাই! থাকিলে শনিবার হইতে যে ছুটি শুরু হইয়াছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত তাহা এ ভাবে টানা যাইত না। আগামী সোমবারও স্বাধীনতা দিবসের ছুটি, তাহার পরের সোমবার জন্মাষ্টমীর। এ ভাবেই দেখিতে দেখিতে দুর্গাপূজার বিস্তৃত ছুটির মরসুমও আসিয়া পড়িবে। ছুটি মানে পড়া হইতে ছুটি, পরীক্ষা হইতেও ছুটি। মঙ্গলবার যাহাদের পরীক্ষা ছিল, স্থগিত করিতে হইয়াছে। বাংলা-মাধ্যম স্কুলগুলির দেখাদেখি অনেক ইংরাজি-মাধ্যম স্কুলও যাহাতে এক যাত্রায় পৃথক ফল না হয়, সে জন্য পরীক্ষাসূচি বাতিল করিয়া ছুটি দিয়া দেয়। যাহারা পড়ুয়া নয়, চাকুরিজীবী, তাহারাও রবীন্দ্রপ্রয়াণের পড়িয়া পাওয়া ছুটিতে যৎপরোনাস্তি আহ্লাদিত। ছুটি মানে তো কাজ হইতে ছুটি, বর্ষণমন্দ্রিত দ্বিপ্রহরে ইলিশ সহযোগে খিচুড়ি সেবনের কিংবা দিঘা-মন্দারমণির সৈকতে নিরালা যাপনের ছুটি। কাজ করিতে কাহারই বা ভাল লাগে, বিশেষত অফিস-কাছারির কাজ? নাই বা দফতরে দৈনন্দিন হাজিরা পর্যাপ্ত হোক, তাই বলিয়া ছুটি উপভোগের আনন্দ ও উল্লাস হইতে তো রাজ্যবাসীকে বঞ্চিত করা যায় না! বরং কর্মচারীদের শাসক দলের উচ্ছ্বসিত সমর্থকে রূপান্তরিত করিতে গেলে যখন-তখন ছুটি উপহার দেওয়ার কোনও বিকল্প নাই। আর সে ছুটি যদি রবীন্দ্র-লাঞ্ছিত, রবীন্দ্রসঙ্গীত-মুখরিত, আলোকফেরি-বিড়ম্বিত হয়, তবে তো কথাই নাই। বস্তুত লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারকে কিঞ্চিৎ বেরসিকই বলিতে হয়, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা এত করিয়া তাঁহাকে ছুটি দিতে অনুরোধ করিলেও তিনি শুনিলেন না। তবে সংসদেও অবশ্য ছুটি পাইতে অসুবিধা হয় নাই, কমনওয়েল্থ কেলেঙ্কারি লইয়া বিতর্কে বিরোধী পক্ষের প্রবল অসহযোগিতায় স্পিকার সভা মুলতুবি করিয়া কার্যত বাইশে শ্রাবণকেও ছুটির দিনেই পরিণত করেন। রবি ঠাকুরে আসিয়াই বাঙালির আইকন-তালিকা ফুরাইবার নয়, লাইনে আরও অনেকেই আছেন। যাঁহাদের নামে মমতা মেট্রো স্টেশনগুলির নামকরণ করিয়াছেন, তাঁহাদের জন্ম ও প্রয়াণদিবসও তাঁহার হাতে রহিল। সেই দিনগুলিকে ছুটির এই ঝর্নাধারায় স্নান করাইতে কে তাঁহাকে বাধা দিবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.