|
|
|
|
রেল-পুরসভা তরজা বহাল |
হাওড়ায় জলবন্দি ট্রেন, ফের নাকাল যাত্রীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বৃষ্টি থেমে গিয়েছে মঙ্গলবার সকালেই। কিন্তু এ দিনও হাওড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে আটকে গেল ট্রেন। দেখা গেল, পূর্ব রেলের লিলুয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিয়াপাড়া থেকে হাওড়া স্টেশনে ঢোকার রেলপথের অনেকাংশ এখনও জলের তলায় রয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি থামলেও জল নামেনি। মানুষের এই দুর্দশার মধ্যে দায়দায়িত্ব নিয়ে রেল এবং হাওড়া পুরসভার মধ্যে টানাপোড়েন চলছেই।
লিলুয়া ও টিকিয়াপাড়ায় দীর্ঘ ক্ষণ জলবন্দি ট্রেনে আটক যাত্রীরা অনেকে এ দিনও ঝুঁকি নিয়ে রেলপথ ধরে হেঁটে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছন। শিশু কোলে মহিলার পাশাপাশি রেললাইন ধরে হেঁটেছেন বাঁক কাঁধে ব্যাপারীরাও। ভোগান্তি বেশি হয়েছে দূর পাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের। লটবহর নিয়ে তাঁদের অনেকেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা বসে থেকেছেন ট্রেনে। লোকাল ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখে তাই দূর পাল্লার ট্রেন হাওড়ায় নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা ছিল বেশি।
জলে ট্রেন আটকে থাকায় পূর্ব রেল পাঁচটি ট্রেন বাতিল করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল বাতিল করেছে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ দিনও হাওড়ামুখী সব লোকাল ট্রেনকে হাওড়া স্টেশনের
প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত আনার ব্যবস্থা হয়নি। বেলা ১১টা পর্যন্ত কয়েকটি ব্যান্ডেল লোকালকে বালি পর্যন্ত চালানো হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিয়াপাড়ায় কোথাও কোথাও তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট জল জমে ছিল এ দিন বিকেল পর্যন্ত। পূর্ব রেল ২২টি পাম্প চালিয়েও বামুনগাছি কারশেডের জমে থাকা জল সরাতে পারছে না।
এত দীর্ঘ ক্ষণ জল জমে থাকছে কেন?
রেল এবং হাওড়া পুরসভা এ দিনও পরস্পরের উপরে দায় চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠকের রাস্তায় হাঁটেনি তারা। পূর্ব রেল সূত্রে অভিযোগ করা হয়, হাওড়া পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে কাজ করছে না। তাই কারশেড এবং রেলপথের জলও সরতে দেরি হচ্ছে। হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের পাল্টা অভিযোগ, “রেল-কর্তৃপক্ষ কারশেড এবং রেলপথে জমে থাকা জল পাম্প করে পুর এলাকায় ফেলছেন। তাই পুর এলাকার জল নামতে পারছে না। ভুগছেন হাওড়া শহরের মানুষ।”
হাওড়া শহরের জলও নামেনি। ২৪টি পাম্প চালিয়েও এ দিন হাওড়া পুর এলাকার জল নামাতে পারেনি পুরসভা। এমনিতেই ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলে ঘুসুড়ি, সালকিয়া, দাশনগর, বালিটিকুরি, কাশীপুর সানপুর, কোনা-সহ ১২টি ওয়ার্ডের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। খটখটে রোদেও জল টানে না। কেন? হাওড়া পুরসভার এক কর্তার ব্যাখ্যা, লিলুয়ার রানিঝিলের জলধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই অবস্থা। ২০ বছরে এই ঝিলের গভীরতা ৪০ ফুট থেকে কমে হয়েছে ১০ ফুট। রেল, হাওড়া পুরসভা ও বালি পুরসভার বেশ কিছু এলাকার এবং চকপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার নিকাশির শেষ ঠিকানা এই বিশাল ঝিল। রানিঝিলের সংস্কার না-হলে হাওড়া শহর এবং রেললাইনে জল জমে থাকার সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেন ওই পুরকর্তা।
ওই ঝিল সংস্কার করা হয় না কেন?
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে পুরসভার তৎকালীন মেয়র গোপাল মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রানিঝিলের আংশিক সংস্কার হয়েছিল। সে-বছর বর্ষায় জমে থাকা জলও নেমে গিয়েছিল দ্রুত। কিন্তু আংশিক সংস্কারটাও পরিকল্পিত ভাবে না-হওয়ায় গত বছর থেকে ফের পুরনো অবস্থা ফিরে এসেছে।
সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে গেল কেন?
পুরসভার মেয়র-পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস ঘোষ বলেন, “রানিঝিলের মালিক রেল। ঝিল সংস্কার করার কথা ওদেরই।”
তা হলে গোপালবাবুর আমলে পুরসভা ঝিল সংস্কার করেছিল কী ভাবে?
দেবাশিসবাবুর মন্তব্য, “আমরা কখনওই পুরো ঝিল সংস্কার করিনি। মাঝেমধ্যে জঞ্জাল সাফ করেছি মাত্র।”
রেল পুরো ঝিল সংস্কারের দায় নিতে চাইছে না। এর অর্থ, বৃষ্টিতে হাওড়া শহর ডুববেই। রেললাইনের দুর্দশাও চলবে। |
|
|
 |
|
|