|
|
|
|
লিখিত প্রস্তাব চান পার্থ |
রাজ্যে বড় বিনিয়োগে উৎসাহী মুকেশ অম্বানী |
রঞ্জন সেনগুপ্ত • কলকাতা |
পালাবদলের পরে রাজ্যে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিল শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। সম্প্রতি এই নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে খোদ মুকেশ অম্বানীর। রাজ্য শিল্প দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং জেমস ও জুয়েলারির কারখানা করতে চান মুকেশ। এ জন্য রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে জমির ব্যবস্থা হলেই চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিল্পমন্ত্রী তাঁকে দু’টি প্রকল্পের লিখিত প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে জমা দিতে বলেছেন। সেটা পাওয়ার পরেই পার্থবাবু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে এর পাশাপাশি, এ রাজ্যে কয়েক বছর আগে জমি হাতে পেয়েও মুকেশ অম্বানীর সংস্থা কেন কোনও কাজ না করে ফেলে রেখেছে, সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। |
|
পশ্চিমবঙ্গে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর বড় ধরনের বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ অবশ্য নতুন নয়। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস তৈরি হওয়ার সময় রিলায়্যান্স ওই প্রকল্পটি করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাম সরকার তাদের বদলে গোয়েন্কা শিল্পগোষ্ঠীকে ওই প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব দেবে বলে স্থির করে। পরে অবশ্য প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব পান অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়।
পরবর্তী কালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে রাজ্য জুড়ে কৃষি পণ্য সামগ্রীর ‘রিটেল চেন’ খুলতে চেয়েছিল রিলায়্যান্স। এই নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের অনেক দূর কথাও এগোয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সরকারের অন্যতম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক এই নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলায় ‘রিটেল চেন’ খোলার প্রস্তাব থেকে পিছু হটতে হয় মুকেশ অম্বানীর সংস্থাকে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পুরনো ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে নতুন সরকারের কাছে ফের হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল) নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মুকেশ। এইচপিএল নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে পূর্ণেন্দুবাবর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চলছে। আগের সরকারের আমলের তৈরি হওয়া সমস্যার জট খুলতে সম্প্রতি পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিল্পমন্ত্রী। সরকারের আশা, ধীরে ধীরে সমস্যার জট কাটতে চলেছে। এই অবস্থায় এইচপিএল নিয়ে মুকেশ অম্বানী আগ্রহ দেখালেও রাজ্য সরকার যে এখনই ওই প্রকল্প হাতবদল করতে রাজি নয়, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
রাজ্যে এখনই পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্প তৈরির সম্ভাবনা না থাকায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং জেমস ও জুয়েলারির কারখানা খুলতে অনুমতি ও সাহায্য দেওয়ার জন্য শিল্পমন্ত্রীকে আবেদন করেন মুকেশ। শিল্প দফতরের কর্তারা বলছেন, প্রস্তাব দু’টি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে কত টাকা তারা বিনিয়োগ করতে চায়, তা এখনই পরিষ্কার নয়। রিলায়্যান্স লিখিত ভাবে প্রস্তাব দিলে তবেই বোঝা যাবে। প্রসঙ্গত, শহরাঞ্চলে জেমস ও জুয়েলারির কয়েকটি খুচরো ব্যবসা কেন্দ্র (রিটেল শপ) খুলেছে মুকেশের রিলায়্যান্স-গোষ্ঠী। মুকেশের প্রস্তাব নিয়ে আগ্রহী হলেও তাদের জমি ফেলে রাখার বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছে না রাজ্য। প্রায় বছর পাঁচেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে কয়েক একর জমি নিয়েছিল মুকেশের সংস্থা। কিন্তু এখনও সেখানে কোনও প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। এই নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওই জমিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় তৃণমূলের লোকেরা। অভিযোগ, তারা ওই জমির পাঁচিলের একটি অংশ ভেঙেও দেয়। জেলা নেতাদের কাছ থেকে এই খবর পান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ওই জেলার নেতা ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী শিশির অধিকারীকে বিষয়টি দেখতে বলেন। পরে শিশিরবাবুর হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা পরে। এই ঘটনা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা জানিয়েছেন, শিল্পের জমি পড়ে থাকলেই তা দখল করা বা ভাঙচুর করা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, তাতে শিল্পমহলের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তিনি মনে করেন, সিঙ্গুর একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তার পুনরাবৃত্তি তিনি চান না। |
|
|
 |
|
|