যাত্রী-গাড়ির ভরা বাজারে হঠাৎ ধাক্কা, নির্মাতারা ত্রস্ত
মাস কয়েকের মধ্যেই ছবিটা বেশ টাল খেয়ে গিয়েছে।
গত ডিসেম্বরেও হুন্ডাইয়ের ‘আই টেন’ কিনতে হলে অন্তত কুড়ি দিন অপেক্ষা (ওয়েটিং পিরিয়ড) করতে হতো গাড়ির চাবি হাতে পেতে। আর এখন? বুক করার ক’দিন বাদেই গাড়ি হাজির! গত ছ’মাসে শেভ্রোলে ‘স্পার্ক’-এর ‘অপেক্ষাকাল’ কমতে কমতে হয়েছে অর্ধেক। টাটা ইন্ডিকা ইভি ২-র জন্যও হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হচ্ছে না।
কারণ একটাই। সার্বিক ভাবে যাত্রী-গাড়ির চাহিদা এই মুহূর্তে কিছুটা হলেও কমছে।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে চলতি বছরের গোড়াতেও গাড়ি-শিল্পের সময় ভাল যাচ্ছিল। বিক্রির রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকায় ওয়েটিং পিরিয়ড বাড়ছিল। একটা সময় তো চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন করতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছিল কিছু সংস্থা! নিতে হচ্ছিল নিত্যনতুন কৌশল। হঠাৎ ছবিটা বদলে গেল কেন?
বিক্রি-খাতা
সংস্থা জুলাই’১০ জুলাই’১১ বৃদ্ধির হার
মারুতি সুজুকি ৯০,১১৪ ৬৬,৫০৪ (-)২৬%
টাটা মোটরস ২৭,৮৬৫ ১৭,১৯২ (-)৩৯%
হুন্ডাই ২৮,১১১ ২৫,৬৪২ (-)১১%
ফোর্ড ৮,৭৩৯ ৭৫০৪ (-)১৪.১%
মহীন্দ্রা ২৬,৩০৩ ৩৭,৩২৩ (+)৪১%
স্কোডা ১,২২২ ২,৪১২ (+)৯৮%
ফোক্সভাগেন ২,৫৯৭ ৬,৫২৯ (+)১৫১%
নিসান ১,০০৫ ১,৫৯৩ (+)৫৮%
টয়োটা ৬,৮৩৪ ১৩,৫৯২ (+)৯৮%
জেনারেল মোটরস ৭,১২৪ ৯,৫০৮ (+)৩৪%
হোন্ডা সিয়েল ৪,৬৮৫ ৪,৭২৫ (+)১%
গাড়ি সংস্থারা বলছে, ঋণ মহার্ঘ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম বাড়ায় চাহিদা ধাক্কা খাচ্ছে। ক্রেতার সংখ্যা কমতে ওয়েটিং পিরিয়ড-ও ছাঁটাই হচ্ছে। বাড়তি খরচের তোয়াক্কা না-করে যাঁরা গাড়ি বুক করছেন, তাঁদের কাছে এটি সুসংবাদ হলেও নির্মাতারা সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাদের কপালের ভাঁজ আরও গভীর করেছে মার্কিন মুলুকের হালফিল আর্থিক সমস্যা। ‘এ সব মন্দার ইঙ্গিত নয় তো?’ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকে।
ওঁদের আশঙ্কার কারণ, বিশ্বব্যাপী মন্দার জেরে ভারতীয় গাড়ি-শিল্পে নামা ‘ধস’ আস্তে আস্তে সামলে নেওয়া গিয়েছিল। পরিস্থিতি যথেষ্ট উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ২০১০-এর মাঝামাঝি নাগাদ। সেই প্রবণতাই এত দিন বজায় ছিল। কিন্তু আচমকা তা অন্য দিকে মোড় নিয়েছে গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে দেশে যাত্রী-গাড়ির বিক্রি সার্বিক ভাবে কমে গিয়েছে। যা গত দু’বছরের মধ্যে অভূতপূর্ব বলে শিল্প-মহলের দাবি। কারণটা কী?
শিল্পমহলের তথ্য বলছে, এ দেশে যাত্রী-গাড়ির বাজারের তিন-চতুর্থাংশই ছোট গাড়ির দখলে। স্বভাবতই জ্বালানির মূল্য বা সুদের হারবৃদ্ধির মতো প্রতিকূলতার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ছোট গাড়ি নির্মাতাদের উপরে। এবং এ ক্ষেত্রে ভারতীয় বাজারে মূল আধিপত্য যাদের, সেই মারুতি-সুজুকি, হুন্ডাই ও টাটা মোটরস তিন সংস্থারই বিক্রি নেমেছে। ফলে সার্বিক ভাবে যাত্রী-গাড়ির বিক্রি মার খেয়েছে। যার মূল কারণ হিসেবে নির্মাতারা দায়ী করছে গাড়ির ঋণে (কার লোন) সুদবৃদ্ধিকে। তাদের মতে, এর দরুণ ছোট গাড়ির ক্রেতারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, সাধারণত পাঁচ বছরে লক্ষ টাকা ঋণপিছু সুদের হার ১% বাড়লেই মাসিক কিস্তি (ইএমআই) বেড়ে যায় প্রায় ৫০ টাকা।
কিন্তু খতিয়ানে তো দেখা যাচ্ছে, তিন সংস্থাকে বাদ দিলে অধিকাংশেরই বিক্রি বেড়েছে?
শিল্পমহলের ব্যাখ্যা: মারুতি-হুন্ডাই-টাটার তুলনায় এদের গাড়ি বিক্রির সংখ্যা বেশ কম। বস্তুত তাদের মোট বিক্রি ‘তিন প্রধানের’ মোট বিক্রির বেশি নয়। অনেকেই আবার ভারতের বাজারে সদ্য পা রেখেছে, তাই তাদের বিক্রি এখনও বলার মতো কিছু হয়ে ওঠেনি। উপরন্তু কিছু সংস্থার ব্যবসা মূলত বাণিজ্যিক গাড়িকে ঘিরে। এ সব কারণেই কিছু নির্মাতার বিক্রি বাড়লেও সার্বিক ভাবে যাত্রী-গাড়ির বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। যদিও মারুতির দাবি: তাদের যে দু’টো গাড়ির চাহিদা সর্বাধিক, সেই সুইফ্ট এবং সুইফ্ট ডিজ্যায়ার-এর বিক্রি নেমেছে অন্য কারণে। সংস্থার এক মুখপাত্রের বক্তব্য, এ মাসেই নতুন সুইফ্ট আসছে বলে পুরনো মডেলের উৎপাদন বন্ধ। আর ডিজ্যায়ার তৈরি হবে যেখানে, সেই মানেসরের কারখানায় জুনে ১৩ দিনের ধর্মঘটে উৎপাদন সাংঘাতিক মার খেয়েছে। অর্থাৎ এই দু’টোর চাহিদা তো কমেইনি, বরং ওয়েটিং পিরিয়ড বাড়ছে বলে তাঁর দাবি।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি যে ভাল নয়, নির্মাতারা তা মানছে। এবং মনে করছে, আসন্ন উৎসবের মরসুমের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাদের মতে, নানা ‘অফার’-এর পাশাপাশি তখন ক্রেতামহলে একটা আলাদা আবেগও কাজ করে। বিশেষত পুরনো গাড়ি বদলানো কিংবা বাড়তি গাড়ি কেনার জন্য এই সময়টাকেই পছন্দ করে বহু লোক। ‘প্রথম বারের’ ক্রেতার চেয়ে যাদের সংখ্যা সব সময়েই বেশি। আপাতত বাজারের চাকা ঘোরাতে তাই উৎসবের মরসুমই পাখির চোখ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.