টলমলে শেয়ার বাজার, সোনা তাই ২৬ হাজারে
বিয়ের মরসুমে মধ্যবিত্তের মাথায় হাত। রাত পোহাতেই সোনার দাম আবার বেড়ে গিয়েছে ভরি-পিছু হাজার টাকা!
গত এক সপ্তাহে প্রায় তিন হাজার টাকা। মঙ্গলবার কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট পাকা সোনার দাম ২৬ হাজার ছাড়াল। আর ২২ ক্যারেট গয়নার সোনার দামও ২৫ হাজার ছুঁইছুঁই।
এক দিকে যখন শেয়ার বাজারে ধস অব্যাহত, তখন সোনার দামের এই ঊর্ধ্বগতির রহস্যটা কী?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বস্তুগত ভাবে শেয়ার আর সোনার মধ্যে কোনও সম্পর্ক না থাকলেও বিনিয়োগের দিক থেকে ওই দুই বাজারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণ লগ্নিকারীরা যে সব ক্ষেত্রে তাঁদের অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন তার মধ্যে প্রধান হল শেয়ার, বিদেশি মুদ্রা এবং সোনা। বিশ্ব জোড়া আর্থিক মন্দার পর থেকেই শেয়ার এবং বিদেশি মুদ্রার বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ক্রমশ তা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। ফলে বর্তমানে লগ্নির একমাত্র নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে সোনা। যাঁদের হাতে বাড়তি টাকা আছে বা আসছে, তাঁরা এখন শেয়ার বা বিদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগের বদলে সোনা কিনতেই বেশি পছন্দ করছেন। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলিতে এখন সোনার চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু ভারত বা চিনের মতো এশিয়ার দেশগুলিতে নিরাপদ লগ্নি হিসেবে সোনাকে বেছে নেওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে মুম্বইয়ের শেয়ার সূচক সেনসেক্স পড়েছে ১৪৫৬ পয়েন্ট। আর বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ২৮৩০ টাকা। সোমবার বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে পতনের পরে মঙ্গলবার এক ধাক্কায় ওই সোনার দাম বেড়েছে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। সোমবার কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ২৫ হাজার ২৯৫ টাকা। মঙ্গলবার তা হয়েছে ২৬ হাজার ৩৪৫ টাকা। আর ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম ২৪ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৫ টাকা। উল্লেখ্য, ঠিক এক বছর আগে ২৪ ক্যারেট ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ১৮ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।
তবে শুধু সাধারণ লগ্নিকারীদের কেনার জেরেই যে সোনার দাম বেড়েছে, তা নয়। সোনা কিনছে বিভিন্ন দেশের সরকারও। কেন?
সব দেশেরই বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার রয়েছে। যার বেশির ভাগটাই মার্কিন ডলার। বাকিটা মূলত ইউরো এবং ইয়েন। কিন্তু বিশ্বের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে সমস্ত বিদেশি মুদ্রার দামই চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ওই সব মুদ্রার দাম কমলে কোষাগারের ক্ষতি। তাই অনেক দেশই লোকসান ঠেকাতে বিদেশি মুদ্রা দিয়ে সোনা কিনে রাখছে। ফলে সোনার চাহিদা বাড়ছে। আর চড়চড় করে বাড়ছে সোনার দাম।
অল ইন্ডিয়া জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বাছরাজ বামালুয়া বলেন, “সোনার দাম এখন আর কোনও একটা দেশের চাহিদার উপর নির্ভর করে না। দাম ঠিক হয় আন্তর্জাতিক ভাবে। এর প্রধান কারণ, কেবল সাধারণ লগ্নিকারীরাই নন, রাজকোষের লোকসান সামলাতে সোনা কিনতে নেমে পড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারও।”
সাধারণ লগ্নিকারীদের কাছে সোনায় বিনিয়োগের মূল আকর্ষণ হল অল্প সময়ে বেশি মুনাফা। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনেই সোনার দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই যাতে সহজে সোনায় লগ্নি করতে পারেন, সে জন্য বেশ কিছু উপায়ও বাজারে চলে এসেছে। অলঙ্কার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি মাসিক জমার ভিত্তিতে ক্রেতার হয়ে সোনা কিনে রাখছেন। বছর শেষে বোনাস-সহ সোনা তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার হাতে। শেয়ার বেচা-কেনা করে এমন সংস্থাগুলির মাধ্যমেও সোনা কেনার চল শুরু হয়ে গিয়েছে। চাইলে এক গ্রাম সোনাও ব্রোকার সংস্থার মাধ্যমে কিনে রাখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার অলঙ্কার রফতানি করে কলকাতার এমন এক সংস্থার কর্ণধার জানাচ্ছেন, ইউরোপ আমেরিকার বাজারে সোনা একটা ফ্যাশন। কিন্তু ভারতে সোনা অনেক বেশি ভবিষ্যতের সঞ্চয়। যে কারণে দাম লাগামছাড়া হলেও মানুষ সোনা কিনছেন।
সোনায় লগ্নির আর একটা বড় কারণ হল, তার দাম কমবে না এই বিশ্বাস। স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে-র কথায়, “সোনার দামের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এক বার দাম বাড়লে, তা কমে না। কমলেও সাময়িক ভাবে সামান্য কিছু কমতে পারে। কিন্তু দামের গতি যে উপরের দিকেই থাকবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।” বামালুয়া বলছেন, “দাম অত্যন্ত দ্রুত বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক নয়। তাই মনে হয় দামে কিছুটা সংশোধন হবে।” কিন্তু বাবলুবাবুর যুক্তি, “যে কারণে সোনার দাম বেড়েছে, বিশ্বের সেই আর্থিক পরিস্থিতির অন্তত আগামী মাস তিনেকের মধ্যে তেমন কোনও উন্নতি হবে বলে কোনও বিশেষজ্ঞই মনে করছেন না। সে ক্ষেত্রে সোনার দাম বাড়বে না, এটা মনে করার কোনও কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।” মাস দুয়েকের মধ্যেই সোনার দাম ২৮ হাজার ছুঁলে অবাক হবেন না, জোর গলাতেই জানাচ্ছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.