যে দিন থেকে এই ইন্দ্রজালে জড়িয়েছি
ফ্যাশন মানে ফ্যাচাং। অন্তত পি.সি.সরকার (জুনিয়ার) তো তাই মনে করেন। মাঝেমধ্যেই ধরতে পারেন না, কেন তেড়ে শীতেও মহিলা’রা পিঠখোলা ব্লাউজে আর উঠতি হিরো-হিরালাল’রা হাতকাটা শার্টে অমন রমরমিয়ে বেড়ায়? ফ্যাশন করলে গরম-শীত গায়ে লাগে না কি? কে জানে? জাদুসম্রাট পি.সি.সরকারকে ফ্যাশন নিয়ে প্রশ্ন করলে এমনই সব পাল্টা প্রশ্ন ফিরে পাবেন। স্টেজে পা দেওয়া মাত্রই যে মানুষ আঙুলের তালে সবাইকে অমন বেবাক করে ফেলেন, তিনি নিজেই এতটা ঘাবড়ে যাবেন, ভাবা যায়নি। আরও বলছি, কারণ পি.সি.সরকার যে পোশাক পরে মঞ্চে অন্য এক জগত আঁকেন, সেটিই তো আস্ত একটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। তবে?
খুলে বললেন। ওই ঝলমলে পোশাক চিরকাল দেখে এসেছিলেন বাবা, পি.সি.সরকার (সিনিয়ার)-এর পরণে। তখন অবশ্য কী সিনিয়ার, কী জুনিয়ার, ইন্দ্রজাল তো এক জনেরই ইশারায় খোলে-বন্ধ হয়, প্রতুলচন্দ্র সরকার। তিনি পরতে শুরু করেন এই রাজার মতো পোশাক। খামকা নয়। কারণ ছিল কিছু।
. চার দিকের ব্রিটিশ রোয়াবের মধ্যেও এই পোশাক ছিল যেন স্বদেশী’র ফেরত-চাল,
এই পোশাক এক লহমায় হিন্দু-মুসলমান বাউন্ডারি মুছে সাফ করে দিয়েছিল,
আশপাশের হেরো বাস্তবের থেকে ক্ষণিকের স্বাদবদল ছিল এই রূপকথার পোশাক।
সেই ঐতিহ্য, চোখ ধাঁধাঁনো কেরামতি আর রাজকীয় আড়ম্বর এখন বইছে জুনিয়ার সরকার, প্রদীপের হাত ধরে। অন্য শৌখিন বাঙালিদের মতো তাঁর ওয়ার্ডরোব-এও অবশ্যই নানা পোশাক আছে, কিন্তু মুশকিল হল, এই ‘ম্যাজিক-ড্রেস’ ছাড়া অন্য কিছুতেই মানুষ তাঁকে মেনে নেন না। ঘোর আইডেন্টিটি বিপদ। এই যেমন এক বার, বই মেলায় কোনও এক স্টলে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
কোট-প্যান্ট পরে মেলা মাঠের মধ্যে দিয়ে গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন, মোটে তিন-চার জন ফিরে তাকাল, তাও আবার বলে কি না, দেখ দেখ অনেকটা পি.সি.সরকারের মতো দেখতে লোকটাকে!
স্টলের ভেতর যখন পরিচিত ড্রেসটা গায়ে চাপাচ্ছেন, শরীরের ভেতর থেকে কেউ এক জন অস্ফুটে বলে উঠেছিল, এই তো আমাদের চেনা প্রদীপ, এই তো...তার পর তো স্টলে আস্ত কুম্ভ মেলা...হইহই ব্যাপার...
কানে দুল, মাথায় উষ্ণীষ, পাগড়ি, পায়ে নাগড়াই জুতো পরে স্টেজে যখনই প্রদীপবাবু পারফর্ম করেন, তখন ভ্যাপসা গরম, কনকনে ঠান্ডা, অসুস্থ শরীর কিছুই সাড়া ফেলে না আর।
শিড়ায় শিড়ায় ফুটে ওঠে আকস্মিক ক্ষিপ্রতা, আঙুল-ডগায় নেচে বেড়ায় ভ্যানিশ-মন্ত্র, ওয়াটার অব ইন্ডিয়া বাধাহীন এগোতে থাকে। প্রদীপবাবুর মতে, সব কৃতিত্ব এই পোশাকের।
এই পোশাকের মধ্যেই নাকি ম্যাজিক আছে। ঠিক যেন সেই পোশাকটির মতো। প্রদীপ সরকার তখন কেমিস্ট্রি পরীক্ষায় ব্যস্ত, বাবা প্রতুলচন্দ্র সরকার জাপানের হোক্কাইডো-য় ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ছেলে ছুটে গেল বাবার কাছে। মৃত্যুর আগে বাবা ছেলের জন্যে বলে রেখেছিলেন, দ্য শো মাস্ট গো অন...সিনিয়ার পি.সি.সরকারের সেই ঘামে ভেজা পোশাক পরে প্রদীপ সরকার শুরু করলেন ইন্দ্রজালের বিস্তার। জন্ম নিল পি.সি.সরকার (জুনিয়ার)। বললেন, ‘মনে হচ্ছিল বাবা আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন। আবার এও মনে হচ্ছিল, বাবার পোশাকে আমি মানে তো বাবা আর নেই।’ কিন্তু অত ভাবার সময় কই, দ্য শো মাস্ট গো অন...
তার পর তো একাধিক বছর নিজের পোশাক পরে কেটে গিয়েছে স্টেজে। স্পেশাল মানুষ রয়েছেন, এই পোশাক বানানোর জন্যে, যে জানে, পোশাক খানিক ঢলঢলে হবে, বিশেষত পিঠের কাছটা। টাইট হলে তো কেলেঙ্কারি! জাদুছড়ি অনাবিল ঘুরবে কী করে তবে? ম্যাজিক-মন্ত্র এক হাত থেকে আর এক হাতে পাস হয়ে যাবে, নতুন সময় পুরনোকে অল্প অল্প করে ভুলে বসবে কিন্তু পি.সি.সরকার (জুনিয়ার) এবং আমরাও ভাল করে জানি, আজ থেকে অনেক বছর পরও যাঁরাই মঞ্চে ম্যাজিক দেখাতে উঠবেন, সব্বার পরণে থাকবে এই রাজার পোশাক। আমরা হয়তো ভ্যানিশ করে যাব আর রূপকথা এই ভাবেই বাস্তব হয়ে বেঁচে থাকবে।

সাক্ষাৎকার: অনির্বাণ ভট্টাচার্য
Previous Item Utsav Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.