|
|
|
|
প্রসূতিদের নিখরচায় পরিবহণ পরিষেবা নিয়ে সমস্যা হুগলিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
হুগলি জেলায় ‘নিশ্চয় যান’ প্রকল্পটি যদি বা বিক্ষিপ্ত ভাবে চালু হয়েছে, কিন্তু মাস চারেক যেতে না যেতেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে গাড়ির টাকা দিতে না পারাই আপাতত তার মূল কারণ। সেই সঙ্গে টোল ফ্রি টেলি পরিষেবা চালু না হওয়ার ফলেও অসুবিধায় পড়ছেন অনেকে।
হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নিশ্চয় যান প্রকল্পের আওতায় গর্ভবতী মহিলাদের (এপিএল, বিপিএল সব ক্ষেত্রেই) প্রসবকালীন জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বিনা খরচে পরিবহণের ব্যবস্থা করা হয়। দু’টি সন্তান পর্যন্ত এর সুবিধা পাওয়ার কথা দম্পতিদের। ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত নবজাতকদের জন্যও বিনা খরচে এই পরিষেবা দেওয়া হয়। জাতীয় স্বাস্থ্যমিশনের আওতায় এই প্রকল্পটি হুগলি জেলায় চালু হয়েছিল গত মে মাসের শুরুর দিকে। প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে একটি করে ‘নিশ্চয় যান’ (অ্যাম্বুল্যান্স) এবং মহকুমা ও জেলা হাসপাতালগুলিতে ২টি করে ‘নিশ্চয় যান’ থাকার কথা। হুগলির ক্ষেত্রে ১৮টি ব্লক, চারটি মহকুমা এবং ১টি জেলা হাসপাতালের জন্য ২৮টি গাড়ি প্রয়োজন। কিন্তু সিঙ্গুর, আরামবাগের দক্ষিণ নারায়ণপুর ব্লক হাসপাতাল-সহ ৭টি ব্লক হাসপাতাল এখনও অ্যাম্বুল্যান্স পায়নি। এই পরিষেবার সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি টোল ফ্রি নম্বর (১০২) কার্যকর করার কথা ছিল। তা-ও চালু হয়নি। যে তিনটি ফোন নম্বরের ব্যবস্থা হয়েছে, তারও বিল বকেয়া থাকায় দু’টি লাইন কেটে দিয়েছে টেলিফোন দফতর।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৭টি ব্লকের গাড়ি আটকে আছে মামলার কারণে। টোল ফ্রি নম্বরের জন্য বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা জারি আছে। যে তিনটি ফোনের ব্যবস্থা হয়েছে, সেগুলির বিল দ্রুত মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, সেগুলি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ভাড়ায় নেওয়া। হুগলি নিশ্চয় যান প্রকল্পের গাড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক অনিরুদ্ধ সাধুর অভিযোগ, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাফিলতিতেই এই ঝঞ্ঝাট। অনিরুদ্ধবাবুর কথায়, “ধার-দেনা করে অ্যাম্বুল্যান্স চালু রাখতে গিয়ে আমাদের প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে। বিল ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অথচ বিল করছেন স্বাস্থ্য দফতরেরই লোকজন।” মাসখানেক ধরে টাকা পরিশোধের জন্য তাঁরা দাবি জানাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন অনিরুদ্ধবাবু। তাঁর আরও অভিযোগ, যে তিনটি নম্বরের ব্যবস্থা হয়েছিল, তাতে ফোন করলে কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা হত প্রসূতির পরিবারের। এখন দু’টি লাইন কেটে দেওয়ায় তা বন্ধ। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভুয়ো ফোন পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাঁদের। সে ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সের তেলের খরচও পাওয়া যাচ্ছে না। গাড়ি দেওয়া বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের বাতিল করে দেবেন বলেও অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের ভয় আছে।
তাঁদের বক্তব্য, অনেকেই এত দিন বেকার ছিলেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে ঋণ করে গাড়ি কিনে তা কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু চার মাসের বকেয়া টাকার চাপ নিতে গিয়ে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ দিকে, কিছু ক্ষেত্রে বিনা খরচে পরিবহণের সুবিধা না পেয়ে বহু ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলিতে বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন প্রসূতির আত্মীয়-পরিজন।
অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের বিরুদ্ধে তাঁদের আবার অভিযোগ, অনেক সময় একই হাসপাতালের কোনও প্রসূতি সদ্যোজাতকে নিয়ে ফিরতে চাইলে অন্য কোনও প্রসূতি ও তাঁর সন্তান কখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, সে জন্য দেরি করছেন গাড়ি মালিকেরা। খরচ বাঁচাতেই তাঁরা এমন করছেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু অবশ্য তাঁর দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গাফিলতির প্রশ্নই নেই। নির্ধারিত বিধি মেনে বিল হয়নি। বিলে ত্রুটি-বিচ্যূতিই টাকা পরিশোধে দেরির মূল কারণ। সে সব সংশোধনের কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|