|
|
|
|
নিজমৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র |
বরাদ্দ বেড়েছে শুধু, কাজ হয়নি ৫ বছরেও |
সুব্রত গুহ ও আনন্দ মণ্ডল • মেদিনীপুর |
পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় বেহাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বেহাল সেই নিজমৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে রামনগর ২ ও কাঁথি ১ ব্লকের কম করে হাজার ষাটেক বাসিন্দা নির্ভরশীল। সংস্কারের জন্য বাম জমানায় এক বার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজ হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তবু কাজ হয়নি। উল্টে ফের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তুলেছেন ঠিকাদার। সেই মতো রাজ্য সরকারের কাছে নতুন করে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলা পরিষদ। এই ভাবে গত পাঁচ বছর ধরে ভাবনা-চিন্তা-প্রস্তাব আর বরাদ্দে আটকে রয়েছে নিজমৈতনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ। অথচ, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বরাদ্দ বাড়ানোর সময় একই অঙ্কের টাকা (প্রায় ৭০ লক্ষ) ধার্য হয়েছিল জেলারই আরও দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কারে। এর মধ্যে এগরা ২ ব্লকের পানিপারুল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬৪ শতাংশেরও বেশি কাজ হয়ে গিয়েছে। আর রামনগর ১ ব্লকের চন্দনপুরে ৩৪ শতাংশ কাজ হয়েছে। সম্প্রতি জেলা পরিষদের উন্নয়ন পর্যালোচনা বৈঠকে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তাতে অবশ্য স্থানীয় সমস্যার কারণে নিজমৈতনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে দায় এড়ানো হয়েছে।
সেই ১৯৭৫ সালে মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজমৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ১০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতায় ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। সাপে কাটলে বা কুকুরে কামড়ালেও প্রতিষেধক ওষুধ মেলে না এখন। পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স, চিকিৎসংক বা স্বাস্থ্যকর্মী নেই। নেই এক জন সাফাইকর্মীও। নাম কা ওয়াস্তে একটা প্রসূতি বিভাগ আছে। তবে, প্রসববেদনা নিয়ে কেউ এলে তাঁকে সাধারণত ২০ কিলোমিটার দূরের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় মৈতনা থেকে দেপাল আর রামনগর হয়ে মুমূর্ষু রোগীকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে নাজেহাল হতে হয় পরিবারের লোকেদের।
বেহাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ২০০৬ সালে নিজমৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কারে উদ্যোগী হয়। বামফ্রন্ট পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ ৪৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৮২৪ টাকা বরাদ্দ করে। সেই মতো টেন্ডার ডাকা হয়। ঠিকাদার ইট-বালিও ফেলেন। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় ক্ষমতার পালাবদল হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ইট-বালি নিয়ে চলে যান ঠিকাদার। ক্ষমতায় এসে তৃণমূলের জেলা পরিষদ বরাদ্দ বাড়িয়ে সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ধার্য করে। কাজের দায়িত্বে থাকেন পুরনো ঠিকাদারই। ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও কাজ কিন্তু শুরু হয়নি। ঠিকাদার প্রণব সাউয়ের বক্তব্য, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য যে হিসাব করা হয়েছে, তাতে ইটের দাম হাজার প্রতি ২২০০ টাকা ধরা হয়েছে। বর্তমানে হাজার ইটের বাজারদর ৬০০০ টাকারও বেশি। এমন অবস্থায় আর্থিক ক্ষতি করে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জেলা পরিষদে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছি।”
ঠিকাদারের দাবি মেনে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছ পাঠানোর ভাবনা-চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন। তিনি বলেন, “ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করলে বরাদ্দ টাকা ফেরত চলে যেতে পারে। তাই আমরা আগামী দিনে আরও টাকা বরাদ্দ হবে আশ্বাস দিয়ে ওই ঠিকাদারকে কাজ করতে বলেছি।” ঠিকাদারের দাবির সঙ্গে সহমত হলে আগেই প্রয়োজন মতো বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি কেন বা অন্য দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একই অঙ্কের বরাদ্দ টাকায় কাজ হচ্ছে কী ভাবে, তার উত্তর অবশ্য মেলেনি। |
|
|
|
|
|