|
|
|
|
তিস্তা সেচ প্রকল্পের হাল ফেরাতে নয়া কমিটি মানসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
প্রথম সাক্ষাতেই সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়াঁর তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল তিস্তা সেচ প্রকল্পের কর্মী ও আধিকারিকদের। শুক্রবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছে শিলিগুড়িতে দুই মাইলে তিস্তা সেচ ভবনে বিধায়ক, প্রশাসনিক কর্তা এবং সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মানসবাবু। দফতরে ঢোকার মুখেই একরাশ জঞ্জাল দেখে তিনি অফিসার-কর্মীদের ধমক দেন। যে ঘরে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে বড় জোর জনা কুড়ি-পঁচিশ জন বসতে পারেন। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে আমন্ত্রিতের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। কেন এমন একটি ঘরে বৈঠকের আয়োজন করা হল, সেই প্রসঙ্গেও অফিসারদের ভর্ৎসনা করেন মন্ত্রী। বৈঠক শুরু পরেও কয়েকজন আধিকারিক সেখানে হাজির হলে তাঁদের সতর্ক করেন সেচমন্ত্রী। তবে ৩ ঘণ্টা বৈঠকের পরে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজে গতি বাড়াতে কমিটি গড়ার পথে হেঁটেছেন মানসবাবুও।
|
|
তিস্তা সেচ ভবনের পথে মানস ভুইয়াঁ। শুক্রবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বৈঠকের পরে সেচমন্ত্রী জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রশাসনিক কাজকর্ম, প্রকল্পের কাজে বাধা, দুর্নীতির অভিযোগ, টেন্ডার-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি তদারকি করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রধান হবেন উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বরণ ঘোষ। তিস্তা সেচ প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওই কমিটির সদস্য সচিব। কমিটিতে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর পর্যন্ত পাঁচ জেলার বিধায়ক, সভাধিপতি এবং জেলাশাসকেরা সদস্য। প্রতি পনেরো দিন অন্তর ওই কমিটি বৈঠক করবে। ওই বৈঠকে কী হল তার রিপোর্ট রাজ্যের সেচ সচিব নিয়মিত ভাবে সেচমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ওই কমিটি এবং সেচমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করবেন।
মানসবাবু বলেন, “পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গে সেচ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণ হয়নি। নয়া কমিটি মূলত পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজে তদারকি করবে।” পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীখাতগুলি দিয়ে যাতে স্বাভাবিক ভাবে জল যেতে পারে, সেই জন্য একশো দিনের প্রকল্পে বালি ও পাথর তোলা হবে বলে সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন। ওই খাতে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার জন্য এক কোটি করে টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর মানসবাবুর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু, সুভাষবাবু এটাও জানিয়ে দেন, একগুচ্ছ কমিটি গড়ে প্রকল্পের অগ্রগতি কখনও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “প্রতি সপ্তাহে রাজ্যের নয়া সরকার কোনও না কোনও কমিটি গড়ছে। এ ক্ষেত্রেও অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে। মানসবাবু কাজ করতে চান। এ ভাবে যদি কাজ করতে পারেন, করুন। ওঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।” কমিটির বৈঠক প্রতি ১৫ দিন অন্তর কী ভাবে সম্ভব তা নিয়েও জল্পনা চলছে।
১৯৭৬ সালে চালু হওয়া রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ এই সেচ প্রকল্পটির এখনও পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের কাজই শেষ হয়নি। একমাত্র দার্জিলিং জেলাতেই মেন ক্যানালের কাজ শেষ হয়েছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরে ওই কাজ হয়েছে আংশিক। প্রকল্পে ১২৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গিয়েছে। ২০০৮-এর সমীক্ষা অনুসারে আরও ১৭২১ কোটি টাকা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটিকে জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করায় রাজ্যের আর্থিক দায় কমে গিয়েছে। ৯০ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করছে। কিন্তু গত আর্থিক বছরে বরাদ্দ ৮৩ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ২৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। |
|
|
|
|
|