|
|
|
|
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি |
ফের ভেস্তে গেল ত্রিপাক্ষিক বৈঠক,
টানা ধর্মঘটের ডাক তরাই-ডুয়ার্সে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তরাই ও ডুয়াসের্র চা বাগানের কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা ভেস্তে গেল।
বৃহস্পতি এবং শুক্রবার--দু’দফায় কর্মী ইউনিয়ন এবং মালিকপক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন শ্রম দফতরের কর্তারা। কিন্তু এ দিন দুপুরে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে বিকেল থেকেই বিভিন্ন বাগান থেকে চা বার করায় বাধা দেওয়া শুরু হয়। আগামী ১০-১২ অগস্ট দার্জিলিং বাদে উত্তরবঙ্গের ২৭৮টি বাগানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ধর্মঘটী শ্রমিক সংগঠনগুলি। পাশাপাশি, ১২ অগস্ট কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত ৩৬টি ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ ভাবে সাধারণ ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এআইসিসিটিইউ-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “দার্জিলিঙে চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে। অথচ, তরাই-ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ মজুরি ৯০ টাকার নীচে রাখার দাবিতে অনড় ছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি তাতে রাজি হয়নি। সরকার অবশ্য ১০০ দিনের কাজের হারে চা-শ্রমিকদের দৈনিক ১৩০ টাকা করে মজুরি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।”
শ্রমমন্ত্রীর ক্ষোভ, এ দিন তাঁকে না-জানিয়ে মালিকপক্ষ নিউ সেক্রেটারিয়েটে চলা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বয়কট করেছেন। তাঁরা শুধু সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে যান। মন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, মালিকপক্ষের এই ‘আচরণ’ তিনি ‘ভাল ভাবে’ নিচ্ছেন না। অবস্থা দেখে পুরো বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন। তবে পাশাপাশি পূর্ণেন্দুবাবু বলেছেন, “মন্ত্রী হয়ে আমি ধর্মঘট সমর্থন করতে পারব না। চেষ্টা করব ধর্মঘট যাতে না-হয়।”
মাস তিনেক আগে পাহাড়ে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা রফতানি বন্ধ করে দেয় গোর্খা জনমুক্তির মোর্চার চা-শ্রমিক সংগঠন। মালিকপক্ষ বৈঠকে বসে পাহাড়ের চা-শ্রমিকদের মজুরি ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা করেন। সেই প্রেক্ষিতে তরাই-ডুয়ার্সে কেন মজুরি বাড়ানো হবে না, এই প্রশ্নে উত্তরবঙ্গের সমতল জুড়েও আন্দোলন শুরু হয়।
এই প্রেক্ষাপটে উত্তরবঙ্গে উভয়পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরে কলকাতায় শ্রম কমিশনারের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছিল রাজ্য সরকার। শ্রম কমিশনার অমল রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার সুবল বিশ্বাস ও যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে মালিকপক্ষের যৌথ সংগঠন সিসিপিএ-এর সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিৎ দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, “কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। তবে আমরা আশাবাদী ফের আলোচনায় সমাধানসূত্র বেরবে।” ‘ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান সি এস বেদী বলেন, “ডুয়ার্স-তরাইয়ের বাগানগুলির আয় দার্জিলিংয়ের বাগানগুলির চেয়ে অনেক কম। ফলে, তাদের পক্ষে এত বেশি হারে মজুরি বৃদ্ধি অসম্ভব। এই দাবি মানলে অনেক বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।”
এখন তরাই-ডুয়ার্সের চা শ্রমিকরা দৈনিক ৬৭ টাকা মজুরি পান। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, মালিকপক্ষ এ বছর তা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাব দেন। আগামী দু’বছরেও ফি বছর ৮ টাকা হারে আরও মজুরি বাড়াতে সম্মত তাঁরা। কিন্তু প্রথমে শ্রমিক সংগঠনগুলি দৈনিক ১৩০ টাকা মজুরির দাবি করেছিল। বৈঠকে অন্তত এ বছরের জন্য দৈনিক ৯০ টাকা মজুরি দাবি করে তারা। কিন্তু মালিকপক্ষ তা মানেননি। সুবলবাবু জানান, বস্তুত দু’পক্ষই ‘অনড়’ থাকায় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।
কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লিউ নেতা মণি ডারনাল এবং আরএসপি’র চা-শ্রমিক নেতা গোপাল প্রধানের প্রতিক্রিয়া, “মালিকেরা দাবি না-মানায় আমরা ৩ দিন চা বাগানে ও একদিন সাধারণ ধর্মঘট করব।” ডিফেন্স কমিটির আহ্বায়ক সমীর রায়ের দাবি, “শ্রমমন্ত্রী আমাদের ধর্মঘট করতে বাধা দেননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে মালিকদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদ অনুমোদিত ‘প্রোগ্রেসিভ টি ওয়াকার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি সুকরা মুন্ডা জানান, কাল, রবিবার মালবাজারে সংগঠনের বৈঠক হবে। সেখানেই আন্দোলনের সার্বিক রূপরেখা তৈরি হবে। |
|
|
|
|
|