|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ভীষ্মের প্রতি অর্জুনের মতো শ্রদ্ধার প্রকাশ |
বরুণকুমার চক্রবর্তী তাঁর সম্পাদিত অন্য রবীন্দ্রনাথ নানা রবীন্দ্রনাথ-এর (পুস্তক বিপণি, ৩০০.০০) শুরুতেই জানিয়েছেন: ‘এক রবীন্দ্রনাথের অন্তরালে নানা রবীন্দ্রনাথের সমাবেশ ঘটেছিল, সে সত্য আমাদের অনেকেরই অজানা কিংবা জানলেও সে জানা তেমন স্পষ্ট নয়। তাই আমরা আমাদের এই গ্রন্থে নানা রবীন্দ্রনাথের একটি সার্বিক পরিচয় প্রকাশ করতে চেয়েছি।’ এ-বইয়ের একাধিক বিভাগে তাই রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত বহু প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে ‘অন্তরঙ্গ পরিচয়ের নিরিখে’, ‘কর্মজীবনের নিরিখে’, ‘সৃজনশীলতার নিরিখে’, ‘তাত্ত্বিকতার নিরিখে’ এবং ‘বিবিধ’-এর নিরিখে। শেষ বিভাগটিতে দু’টি প্রবন্ধ, সুমিতা চক্রবর্তীর ‘আত্মসমালোচক রবীন্দ্রনাথ’ আর অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাস্থ্য সচেতন রবীন্দ্রনাথ’ বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে।
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে তাঁর রচনা নিয়ে নানা রকম নিরীক্ষা, বিবিধ পাঠও তৈরি হচ্ছে। সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব পাঠের ভিত্তিতে কবির ‘বিসর্জন’ ও ‘ডাকঘর’ পুনর্বিন্যস্ত করেছেন: রবীন্দ্রনাথ/ অধুনার আবাহন (মুক্তমন, ৫০.০০)। নাটক দু’টির নতুন এই পাঠে ‘বিসর্জন’-এ নতুন শব্দ যা যোগ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই এই নাটকে অন্যত্র রবীন্দ্রনাথেরই ব্যবহৃত শব্দ থেকে চয়ন-করা। অল্প কয়েকটি সংলাপ অদলবদল বা সংযোজন এবং দু’একটি ক্ষেত্রে ঘটনাক্রমকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। নিবেদন-এ এ-সব কথা পেশ করে সন্দীপ জানিয়েছেন: ‘ব্রাহ্মণ আর রাজা দুই ক্ষমতার দ্বন্দ্বস্থলে জনসাধারণকে কেন্দ্রে রেখে আমরা নতুন করে পড়তে চেয়েছি রচনাটিকে।’ আর ‘ডাকঘর’ নাটকটিকে গল্পে বিন্যস্ত করা নিয়ে তাঁর মন্তব্য: ‘অমল কি আজও চিঠির প্রত্যাশা করে?... সেই প্রশ্ন থেকেই গল্পটি।’
রবীন্দ্রনাথের রচনা দিয়েই শুরু হয়েছে দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত রবীন্দ্রনাথ/ অ্যামং দ্য আর্টস: মাল্টিপল পার্সপেক্টিভস (অ্যাকাডেমি থিয়েটার পাবলিকেশন, ৩০০.০০)। রবীন্দ্রপ্রতিভার বর্ণচ্ছটাকে দু’-মলাটের মধ্যে তুলে আনতে দেবজিত্ বিশ্বকবির সৃষ্টিকর্মের বিভিন্ন বিস্তার সম্পর্কে নানা জনের রচনা দিয়ে সাজিয়েছেন বইটি। সাহিত্য-শিল্পের প্রয়োগকর্তা ও সমাজবেত্তা রবীন্দ্রনাথের চিন্তক মনটিকে পাওয়া যায় এখানে। রয়েছে সি এফ অ্যান্ড্রুজকে লেখা কবির অপ্রকাশিত চিঠিও। আর দেবজিত্ নিজে লিখেছেন বঙ্কিমের ‘বন্দে মাতরম’ এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ‘রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা ও অধ্যাত্মচেতনা ছিল একান্তভাবে তাঁর আপন অন্তরের জিনিস, কোনো বিশেষ ধর্মসম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস, আচার অনুষ্ঠানের দ্বারা তাঁর অধ্যাত্ম-উপলব্ধি নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত হয় নাই।’ প্রথম প্রবন্ধেই মন্তব্য করেছেন মোহিতকুমার মজুমদার তাঁর রবীন্দ্রনাথ: বিচিত্রের নর্মবাঁশি-তে (টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ১২০.০০)। কবির এই অন্তরভাবটি কী ভাবে তাঁর সৃষ্টির শিকড় হয়ে উঠল, কী ভাবে তিনি তাঁর রচনায় অনির্বচনীয়ের অমৃতকে স্পর্শ করেছিলেন জীবনভর, তা-ই প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে এ-বইয়ের। পরিশিষ্টে বিশিষ্ট রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞদের কোনও-কোনও রচনার প্রেক্ষিতে লেখকেরই প্রকাশিত-অপ্রকাশিত পত্রের আকারে তর্ক-তোলা কিছু রচনা কবির সৃষ্টি-অভিপ্রায় নিয়ে।
১৯৬১-তে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে অচলায়তন প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিল সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ: মনন ও শিল্প। এ বইয়ের তরুণ ধীমান লেখকদের রচনা সম্পর্কে ভূমিকা-য় সম্পাদক লিখেছিলেন: ‘লেখকবৃন্দ সর্বত্রই রবীন্দ্রনাথের প্রকট মহিমার কথা স্মরণে রেখে নবীন মনীষায় পুনর্বিচার করেছেন। কোথাও কোথাও তাঁদের অস্ত্র আমাদের আবহমান রবীন্দ্রধারণাকে আহত করবে। কিন্তু সে অস্ত্রাঘাত, ভীষ্মের প্রতি অর্জুনের মতো, শ্রদ্ধার প্রকাশ।’ রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে দাঁড়িয়ে সম্পাদকের মনে হয়েছে কবিকে নিয়ে ওই মূল্যায়ন-গ্রন্থটি আজও প্রাসঙ্গিক, তাই তার পুনর্মুদ্রণ প্রকাশ করল ধ্রুবপদ, পরিবেশনায় কারিগর (২০০.০০)। ১৯৬১-’৬২-তে এ-বইটি ছাড়াও প্রকাশিত অন্যান্য গদ্য সংকলনের একটি তালিকা যুক্ত হল নতুন সংস্করণে, সঙ্গে সম্পাদকের ‘আত্মপক্ষ’, লেখক পরিচয়, আর চমৎকার প্রচ্ছদ ও নামপত্র সোমনাথ ঘোষের। |
|
|
|
|
|