|
|
|
|
বিদ্যুৎ আনতে উদ্যোগী নতুন প্রজন্ম |
সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় • বেলডাঙা |
বিদ্যুৎ না থাকলে সন্ধ্যাবেলা পড়াশোনা লাটে।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার কাপাসডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনপাড়ার নতুন প্রজন্ম তাই ঘরে ঘরে ঘুরে বুঝিয়েছে, বিদ্যুতের মূল্য কতটা। অন্য অনেক গ্রামের মতো এই গ্রামেও নতুন প্রজন্ম তাদের বাবা-মা’দের চেয়ে বেশি শিক্ষিত।
সেই প্রচারে কাজ দিয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের বেলডাঙার স্টেশন ম্যানেজার বাপ্পাদিত্য মল্লিক বলেন, “এই গ্রামে ৬৩ কেভি’র একটি ট্রান্সফর্মার ছিল। কিন্তু এখন এত লোক বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছেন যে, এখন দু’টি ট্রান্সফর্মার দিতে হয়েছে।” কাপাসডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাজিবুর রহমান বলেন, “ওই গ্রামে এখন প্রায় সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ এসেছে। মানুষ সচেতন হয়েছেন।” |
|
বিদ্যুতের উপকারিতা নিয়ে বৈঠক। |
এরপরেই ওই গ্রামে তৈরি হয় ‘নতুনপাড়া বিদ্যুৎ সুরক্ষা কমিটি’। কমিটির সভাপতি জামিরুল হোসেন বলেন, “গ্রামের নতুন প্রজন্মের ছেলেরাই ঠিক করে, সকলেই বৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিলে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার পাব। ঘরে ঘরে গিয়ে সে কথা বোঝানো হয়।” তাতে লাভও হয়েছে। ওই কমিটির আব্দুল রশিদ, সাইফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মোল্লারা গ্রামের রাস্তায় মাইক নিয়েও বেরিয়ে পড়েন। মোস্তাফা হোসেন বলেন, “প্রায় এক বছর ধরে নিরন্তর চেষ্টা চালানোর পরে ভাল সাড়া পাই আমরা।” তিনি বলেন, “গ্রামের যে পরিবারের কর্তারা নিরক্ষর, তাঁদের ফর্ম আমরাই পূরণ করে বিদ্যুৎ দফতরে জমা দিয়ে এসেছি। তাঁরা শুধু টিপছাপটুকু দিয়েছেন।” সামসুল হক বলেন, “বাবা-মা’রা চান না, তাঁদের ছেলেমেয়েরাও নিরক্ষর থাকুক। তাঁরাও বোঝেন, আমরা পড়াশোনা করতে পারলে জীবনে আলোর দেখা পাব। তাই প্রায় সকলেই আমাদের কথা মেনে নিয়েছেন।”
গ্রামের আনজারুল শেখ বলেন, “বিদ্যুৎ আসায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় খুব সুবিধা হয়েছে।” টোনি শেখও বলেন, “আর কোনও ভয়ও নেই। ছেলেমেয়েরাও খুশি।”
বাপ্পাদিত্য বলেন, “গ্রামের প্রায় দু’শো পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার আবেদন করেন। তাই আমরা ওই গ্রামে আরও একটি ৬৩ কেভি’র ট্রান্সফর্মার বসিয়েছি। এখন ওই গ্রামে হুকিংয়ের উপদ্রবও আর নেই।” সম্প্রতি ওই গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই সন্ধ্যা হলেই আলো জ্বলে। সেই আলোতে পড়তে বসেন গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা।
পঞ্চায়েতের প্রধান সাজিবুর বলেন, “বছর কয়েক আগেও গ্রামে সাক্ষরতার হার ছিল খুব কম। এখন তা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। নতুন প্রজন্মের প্রায় সকলেই স্কুলে যায়।” তাঁর কথায়, “এই গ্রামে বর্তমান প্রজন্ম তাদের বাবা-মা’র চেয়ে বেশি শিক্ষিত। তারা অন্ধকারের স্বাদ পেয়েছে। তাই আলোর পথ থেকে আর ফিরবে না।” |
|
|
|
|
|