|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
বর যে প্রদেশেরই হোক মানুষটা খাঁটি হলেই হল |
বিয়ে না কেরিয়ার। জিৎ না দেব। নায়িকাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। আট বছর ধরে হিট
নায়িকা হয়ে থাকার রহস্য। সংযুক্তা বসু-র সঙ্গে আড্ডা দিলেন কোয়েল মল্লিক |
পত্রিকা: টানা আট বছর বাংলা ছবিতে হিট নায়িকা। কী করে সম্ভব হল এটা?
কোয়েল: নায়িকা যে হব এটাই ভাবিনি। স্বপ্ন ছিল মনস্তত্ত্ববিদ হব। সে যাই হোক ইন্ডাস্ট্রিতে যে এত দিন কাজ করে যেতে পারছি তার কারণ কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
পত্রিকা: শুধুই পরিশ্রম?
কোয়েল: পরিশ্রমের পাশাপাশি যেটা খুব দরকার সেটা হল লাক। ভাগ্য।
পত্রিকা: তার মানে এই যে শ্রাবন্তী, শুভশ্রী থাকতেও সুরিন্দর ফিল্মসের সব ছবিতেই আপনি নায়িকা, সেটা ভাগ্য বলতে চান?
কোয়েল: এখানে ভাগ্যের প্রশ্ন নেই। বুঝতে হবে যুক্তি দিয়ে। শুধু সুরিন্দর ফিল্মস নয়, ভেঙ্কটেশ ফিল্মসেরও অনেক ছবিতে কাজ করেছি। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে বাকি নায়িকারাও এই সব প্রযোজকের ছবিতে কাজ করছেন। তবে হ্যাঁ, প্রযোজকেরা ছবি করতে গিয়ে সব সময় ব্যবসায়িক লাভের দিকটাও দেখেন। যে জুটি বা যে নায়ক-নায়িকা অভিনয় করলে ছবি হিট করে, তাদের দিয়েই তাঁরা কাজ করাতে চান বারবার। সেই হিসেবে আমার অভিনয়ে সুরিন্দর ফিল্মসের অনেক ছবি হিট। ‘পাগলু’ তো জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এর আগে ‘মন মানে না’, ‘বলো না তুমি আমার’ হিট ছিল। হিট হয়েছিল এক সময়ে ‘হিরো’, ‘সাত পাকে বাঁধা’।
পত্রিকা: তা হলে ভাগ্য?
কোয়েল: দর্শক যে আমার অভিনয় পছন্দ করছেন সেটাই ভাগ্য। তার সঙ্গে থাকছে পরিশ্রম। এই দুইয়ের যোগ ফলে যা দাঁড়াচ্ছে তা হল হিট ছবি। হিট দিতে পারছি বলেই প্রযোজকেরা বেশি ডাকছেন। |
|
ছবি: সোমনাথ রায় |
পত্রিকা: প্রথম যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এলেন, চুটিয়ে কাজ করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর এলেন স্বস্তিকা। তার পর শ্রাবন্তী, পায়েল, শুভশ্রী। অন্য ধারার ছবিতে এসে গেলেন পাওলি দাম, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। আর এঁদের মাঝখানে আপনি। প্রতিযোগিতা তো নিশ্চয়ই এসেছে। কী ভাবে উত্তীর্ণ হলেন? কোয়েল: যখন যে কাজটা করেছি খুব মন দিয়ে করেছি। বাকি প্রশ্নের উত্তর দেবেন দর্শক। গত এক বছরে সেরা অভিনয়ের বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছি দর্শকদেরই নির্বাচনে।
পত্রিকা: তার মানে এই সব নায়িকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই? কোয়েল: ইট ইজ এ কম্পিটিটিভ মার্কেট। অবশ্যই। কিন্তু আমি সে কথা ভাবি না। কে কেমন কাজ করছে এ নিয়ে না ভেবে শুধু নিজের কাজটাকেই ফোকাসে রেখে কাজ করে যাই। বিশ্বাস করি, আমার সেরা কাজটুকু দিতে হবে।
পত্রিকা: এই মুহূর্তে ক’টি ছবির কাজ করছেন? কোয়েল: একসঙ্গে দু’টো ছবির কাজ করি না। এখন জিৎ আর ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কো-প্রোডাকশনের ছবিতে কাজ করছি। আমার বিপরীতে জিৎ। যেখানে নায়িকা হল নায়কের বস। এ পর্যন্ত ম্যাক্সিমাম প্রেমের গল্পেই তো কাজ করলাম।
পত্রিকা: নিজের জীবনের প্রেম...
কোয়েল: আমার প্রেম কাজের সঙ্গে। আর কোনও প্রেম নেই। বিয়ে যার সঙ্গে হবে, তাকে খুব ভালবাসব।
পত্রিকা: জিতের সঙ্গে তো আপনার রসায়ন খুব জমজমাট। হালে দেবের সঙ্গে ‘পাগলু’ সুপার হিট। দুই নায়কের সঙ্গেই ছবি হিট করে কী করে?
কোয়েল: (হি হি হি) দেখুন, আমি এক জন পেশাদার অভিনেত্রী। জিৎ হোক বা দেব, বা অন্য যে কোনও নায়ক, যার সঙ্গেই কাজ করি চেষ্টা করি আমার অভিনয় যেন তাঁদের পাশে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। দেবের সঙ্গে ‘পাগলু’ ছাড়াও ‘মন মানে না’, ‘প্রেমের কাহিনি’, ‘বলো না তুমি আমার’ এ সব ছবিও হিট। ‘মন মানে না’তেই দেবের সঙ্গে আমার অন স্ক্রিন একটা কেমিস্ট্রি তৈরি হয়ে যায়।
পত্রিকা: সোজা কথায় কার সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব এখন দেব না জিৎ?
কোয়েল: দেব বন্ধু হিসেবে খুব ভাল। মজা, আড্ডা, হইচই করে জমিয়ে রাখে। আর জিতের সঙ্গে বন্ধুত্বটা অনেক দিনের। দু’টোর মধ্যে তফাত তো আছেই।
পত্রিকা: বিয়ের পর জিতের জীবন কতটা বদলেছে? কোয়েল: জিৎ বৌয়ের ব্যাপারে খুব গদগদ। সুযোগ পেলেই বৌয়ের ব্যাপারে প্রচণ্ড কথা বলে।
পত্রিকা: তা, আপনি কবে বিয়ে করছেন? কোয়েল: বিয়েটা আমাদের হাতে নেই। যখন হওয়ার তখন হবে।
পত্রিকা: বিয়ের পরও নায়িকা হবেন? অনেক সময়ই বিবাহিতা নায়িকারা ছবি থেকে সরে যান... কোয়েল: না, এটা সব ক্ষেত্রে সত্যি নয়। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শ্রাবন্তী তো বিয়ে করেও দিব্যি কাজ করছে।
পত্রিকা: এখনকার নায়িকাদের কেমন লাগছে? কোয়েল: শুভশ্রী খুব ভাল কাজ করছে। ভীষণ স্মার্ট, ভাল অভিনেত্রী। ভাল নাচে। শ্রাবন্তীও খুব মিষ্টি। এই মুহূর্তে অনেক কাজ করছে। পাওলি দামের ‘কালবেলা’ দেখা হয়নি। ‘মনের মানুষ’-এ পাওলিকে ভালই লেগেছে। অত্যন্ত শক্তিশালী শিল্পী। অনন্যা ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট ট্যালেন্টেড অ্যাকট্রেস’। ওর অভিনয় খুব স্বতঃস্ফূর্ত। দৃঢ় ব্যক্তিত্ব।
|
|
পত্রিকা: ‘অটোগ্রাফ’, ‘মনের মানুষ’ থেকে ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ কিংবা ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ এই যে সব অন্য ধারার ছবি হচ্ছে, এ সব ছবিতে কাজ করতে চান না? কোয়েল: অবশ্যই করতে চাই। পরিচালকদের চিত্রনাট্যে যদি এমন চরিত্র থাকে যেটা আমার সঙ্গে মানায় তাঁরা নিশ্চয়ই কাজে ডাকবেন। সন্দীপ রায়ের ‘হিট লিস্ট’-এ অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছি।
পত্রিকা: ছবিটা তো হিট করেনি... কোয়েল: মননশীল ছবি মানে ইন্টেলেকচুয়াল ছবির দর্শক আলাদা। হিট ফ্লপ দিয়ে সে সবের বিচার হয় না। কিছু কিছু বাংলা ছবি যেমন দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে অন্য ধারার ছবি হয়েও। এমনটা সব ছবির ক্ষেত্রে ঘটে না। এই সব ছবিতে কেন কাজ করি না, এর উত্তর এই ধরনের পরিচালকেরাই ভাল দিতে পারতেন। সেই সঙ্গে তাঁদের ছবির চিত্রনাট্য এবং চরিত্রও আমার পছন্দসই হতে হবে। হ্যাঁ, সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং সুব্রত সেনের সঙ্গে তাঁদের ছবিতে কাজ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। কারণ চিত্রনাট্যে নায়িকাকে ঘিরে কিছু দৃশ্য আমার পছন্দ হয়নি।
পত্রিকা: আপনি সব প্রশ্নের উত্তরেই খুব পলিটিক্যালি কারেক্ট। কোয়েল: আসলে জীবনটা এত ছোট যে, সামান্য যে-সময়টুকু পাচ্ছি তা যেন আনন্দে কাটাতে পারি। নিজে আনন্দে থাকতে চাই। অন্যেরাও যেন আমার দ্বারা কোনও আঘাত না পায়।
এমন কথা বলতে চাই না, যাতে অন্য কেউ আঘাত পায়। ভারসাম্য রেখে কথা বলাকে যদি মনে করা হয় ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ থাকা তা হলে আর কী বলব।
পত্রিকা: আপনি এই সাক্ষাৎকারে যে ভাবে কথা বলছেন, বাড়িতেও কি এই ভাবে কথা বলেন?
কোয়েল: হ্যাঁ, একদম। বাবা-মা আমাকে যে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের মধ্যে বড় করেছেন তাতে আমার কী করা উচিত, কী করা উচিত না, কী বলা উচিত বা উচিত নয় সেটা চিরকালই খুব পরিষ্কার।
পত্রিকা: কোনটা করা বা বলা উচিত? কোনটা নয়?
কোয়েল: সেগুলো খুব ব্যক্তিগত।
পত্রিকা: প্রথম দিকে ছবিতে আপনি বেশ রক্ষণশীল ছিলেন। খোলামেলা পোশাকে বা ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে কাজ করতে চাইতেন না। এখন বোধহয় নিজের ওপর চাপানো সেই নিষেধটা তুলে নিয়েছেন। সেটা কি বাংলা ছবিতে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী চলে এসেছে বলে? কোয়েল: কোন আর্টিস্ট কেমন ফ্যাশন করছেন, সেই ভেবে আমি লিবারেল হব তা নয়। বেসিক্যালি আমি রক্ষণশীল। যে সব পোশাক ভাল ক্যারি করতে পারব তেমনটাই পরেছি। ‘পাগলু’তে নায়িকা ছিল ওয়েস্টার্ন। তো সেখানে ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরেছি। ঠিক যেমন ভাবে এখন জিতের সঙ্গে যে ছবিটা করছি, সেখানে শাড়ি আর সালোয়ার পরেছি চরিত্রের দাবিতে।
পত্রিকা: রাজ্যে এসেছে নতুন সরকার। পরিবর্তনের হাওয়া এখন স্টুডিওপাড়াতেও। বহু তারকাই এখন নতুন সরকারের হয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে। যেমন আপনার বাবা রঞ্জিত মল্লিক এখন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন। এই ধরনের পদে যোগ দিতে চান? কোয়েল: আমি রাজনীতির কিছু বুঝি না। সে সম্পর্কে কথা না বলাই ভাল। ভবিষ্যতে কী হবে না হবে তাও জানি না। একটা শান্তিপূর্ণ সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই। জীবনটা শুধুই নিজেকে নিয়ে নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এখন ইউনিসেফ-এর পক্ষে সেলিব্রিটি অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করছি। বাচ্চাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির জন্য প্রচারমূলক কাজ। কন্যাসন্তানদের সামাজিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রচারে নামব। টিভিতে শিগ্গির এ নিয়ে বিজ্ঞাপনে আমি কথা বলব। ফিল্ডে গিয়ে কাজও করতে হবে। শুধু স্টার হয়ে কোনও আনন্দ নেই। মানুষের জন্য কিছু করে যেতে হবে।
পত্রিকা: নিজে কোনও প্রযোজনা সংস্থা করার কথা ভাবছেন? কোয়েল: কী করে বলব? আমার ডেস্টিনি যদি আমাকে সে দিকে টানে তা হলে হবে। পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারি না। একটা কথা জানি, খুব সংসারী হব। আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটা অধ্যায় উপভোগ করতে চাই। যেমন এখন এই কাজের জীবনটা উপভোগ করছি। এর পর কারও স্ত্রী, কারও মা, কারও ঠাকুমা হয়ে জীবনের শেষ পর্যন্ত উপভোগ করতে চাই।
পত্রিকা: শোনা যায়, আমেরিকা না ইউরোপে আপনার এক জন বয়ফ্রেন্ড আছে এবং তাঁর সঙ্গেই আপনার বিয়ে হবে। এ কথা কি ঠিক?
কোয়েল: হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, অনেকেই এই রকম একটা কাল্পনিক পাত্রের কথা তুলে পিছনে লাগে আমার। আর আমি হেসে উড়িয়ে দিই। কিন্তু সত্যি বলছি, সে রকম কেউ নেই। আমি ভাবতেই পারছি না যে প্রশ্নটা কোনও মিডিয়া আমাকে করবে।
পত্রিকা: মাঝে মাঝেই বিদেশে যান, শু্যটিং ছাড়াও...
কোয়েল: এ মা-আ। বিদেশে আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন থাকেন। ছোটবেলা থেকেই যাই। আজ বলে নয়।
পত্রিকা: তা হলে এটা ধরে নেওয়া যায় কি যে আপনার ভাবী বর, বিদেশে না থাকলেও স্বদেশে আছেন।
কোয়েল: বলতে পারব না স্বদেশে না বিদেশে। আমার নিয়তি আর ভাগ্য তা স্থির করবে।
পত্রিকা: বর কি বাঙালি হবে না অবাঙালি?
কোয়েল: বর যে প্রদেশেরই হোক না কেন মানুষটা খাঁটি হলেই হল। |
|
|
|
|
|