মনোরঞ্জন...
মোবাইল জুড়ে আছে কত শত গল্প
ক নারী আরেক পুরুষের শরীর ছুঁতে পারে।
এক পুরুষ পারে অন্য নারীটির শরীর ছুঁতে।
কিন্তু কেউ কারও মোবাইল ছুঁতে পারবে না। মোবাইলে যে লুকিয়ে থাকে হাজারো মুহূর্ত, হাজারো চাওয়া-পাওয়ার একান্ত ব্যক্তিগত টুকরো-টুকরো অভিব্যক্তি।
এক একটা এসএমএস মানে এক একটা দীর্ঘ কাহিনির সারাংশ, হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া নিরুচ্চার কথা। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘উড়োচিঠি’র মুখ্য চরিত্র ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত হলেও আসল নায়ক বারোটি এসএমএস। যার মধ্যে রয়েছে ছবির চোদ্দোটি চরিত্রের ভালবাসা না-বাসা, জিতে যাওয়া-হেরে যাওয়া, আনন্দ-বিষাদের খণ্ড খণ্ড গল্প। গল্পের পটভূমি জুড়ে রয়েছে ২০০৮-০৯ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাবে ছিন্নভিন্ন শহর কলকাতার উচ্চবিত্ত সমাজ।
তথ্যপ্রযুক্তি জগৎ থেকে শেয়ার বাজারে সংক্রামক মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে মন্দার ভয়ঙ্কর প্রভাব। এ হেন মন্দার ফলে বড় চাকরি থেকে রাতারাতি ‘সাসপেন্ড’ হয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ওরফে অনিকেত।
ইন্দ্রনীল ও শ্রীলেখা
হঠাৎ কী খেয়ালে মোবাইল থেকে প্রত্যেকটা পুরনো এসএমএস ওড়াতে ওড়াতে ইন্দ্রনীলের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কখনও নিজের স্ত্রী, কখনও ছেলেবেলার বন্ধু, কখনও বা অফিসের সহকর্মী, কখনও বাবার কিংবা তার একান্ত গোপন বান্ধবীর মুখ। প্রত্যেকটা এসএমএস থেকে জন্ম নেয় একটার পর একটা গল্প। বেদনার গল্প। জটিল জীবনের গল্প। তলিয়ে যাওয়ার গল্প। অসহায়তার গল্প। বেঁচে থাকার গল্প। ‘অংশুমানের ছবি’ থেকে ‘অটোগ্রাফ’ থেকে ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ সর্বত্রই ইন্দ্রনীল অন্য রকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছবির অনিকেত কেন আকর্ষণ করল ইন্দ্রনীলকে? “‘উড়োচিঠি’ একেবারেই ‘নিউ এজ’ ছবি। আজকের হাই প্রোফাইল কর্পোরেট জগতের চেনা মুখ অনিকেত। অনিকেতের অফিস, দাম্পত্য, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক, মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক, দ্বিতীয় নারীর সঙ্গে সম্পর্ক সব মিলিয়ে নানা ধরনের সম্পর্ক চরিত্রটাকে বহু রংয়ের মাত্রা দিয়েছে। বহু সম্পর্ক নিয়েই তো এক জন সামাজিক মানুষ। এ রকম ‘মাল্টিডাইমেনশনাল’ আধুনিক চরিত্র আমার কাছে একদম নতুন,’’ জবাব ইন্দ্রনীলের।
অনিকেত যত বার জীবনের জটিল আবর্তে হারিয়ে গিয়েছে, তত বার সে ফিরে ফিরে গিয়েছে ছেলেবেলার মাস্টারমশাই ফারহাদের কাছে। সেই সুযোগে ফারহাদ চরিত্রে পর্দায় দেখা যাবে সিগনেচার স্টাইলের অভিনয়ে অঞ্জন দত্তকে। ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’র পর আবার। মাত্র দু’ঘণ্টার ছবিতে চোদ্দোটি চরিত্রকে নিয়ে একটা গল্পের ভেতর আরেকটা গল্প নিপুণ ভাবে বুনেছেন পরিচালক কমলেশ্বর। বললেন, “আকাশ ছোঁয়া বাড়ি, মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতি, বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা, সস্তার এয়ারলাইনস, ডিসকোথেকে-পানশালায় সম্বিৎ হারিয়ে ফেলা উদ্দামতা, অবাধ যৌনতা, সাফল্যের জন্য যে কোনও পর্যায়ে নামতে বা উঠতে পারার গনগনে খিদে নিয়ে ছুটে বেড়ানো যুবসমাজ...এই সব কিছু মিলিয়ে এক্কেবারে এই সময়কার শহর কলকাতার বা যে কোনও হালফিল বড় শহরের গল্প বলতে চেয়েছি। সেখানে যেমন অবক্ষয় আছে, তেমনই আছে বেঁচে থাকার, নতুন আশায় পথ চলার কথাও।”
চোদ্দোটি চরিত্রকে প্রায় সমান ভাবে পর্দায় জায়গা দেওয়া হয়েছে ছবিতে। এই সুবাদে ছোট ছোট আঁচড়ে নিজেদের চরিত্র সংবেদনশীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অঞ্জন দত্ত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ছাড়াও শ্রীলেখা মিত্র, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, তনুশ্রী চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু, রেশমি ঘোষ প্রমুখ।
ইন্দ্রনীলের ছেলেবেলার বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল। পেশায় ইভেন্ট ম্যানেজারের চরিত্রে এক ধরনের ওপর-চালাকি করা স্মার্টনেস সব চেয়ে বড় বিশেষত্ব। জীবন নিয়ে ফাটকাবাজি খেলতে খেলতে এক সময় নিয়তি তার সঙ্গে চরম জুয়া খেলে দেয়। “জোরালো গল্পের পাশাপাশি ‘উড়ো চিঠি’র যে ব্যাপারটা আমার দারুণ লেগেছে তা হল কাটা কাটা সংলাপ। গল্পের সঙ্গে সংলাপ মিশেছে চমৎকার ভাবে,” বললেন রুদ্রনীল। ইন্দ্রনীলের স্ত্রী রাকা যখনই স্বামীর মুখোমুখি হয় তখনই সে সংসার বিষয়ে নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরে। রাকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র। তিনি বললেন, “কিন্তু এই রকম তথাকথিত গৃহবধূর মধ্যেই জেগে উঠেছে নিজস্ব সত্তার বলিষ্ঠতা, যখন সে দেখে স্বামী পরনারীতে আকৃষ্ট। সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রাকা শেষ পর্যন্ত আপস করে না। আমার মনে হয় সব মেয়ের মধ্যেই এক জন রাকা আছে। এক দিকে তার সংসারে আপ্রাণ মানিয়ে চলার চেষ্টা, অন্য দিকে আপস না করার দৃঢ় মনোভাব। আমার মধ্যেও এ রকম এক জন রাকা আছে নিশ্চয়ই। তাই রাকা চরিত্রটা হাতে পেয়ে চিনতে অসুবিধে হয়নি।”
বিশ্বনাথ
‘উড়ো চিঠি’র সব চেয়ে বড় অভিনবত্ব বিষয় নিবার্চনে, ছবির গল্প বলার নকশা বা ফর্মে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি যত হয়েছে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বেড়েছে। ফেসবুক থেকে টুইটার থেকে এসএমএস। ভারচুয়াল রিয়্যালিটির দুনিয়ায় দূরের আত্মীয়তা যত বেড়েছে, কাছের মানুষ তত অপরিচিত হয়েছে। এমনটাই আগাগোড়া বলতে চেয়েছেন গল্পকার কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। গল্পের অনিকেতের বাবা মারা যাওয়ার আগে ছেলেকে চিঠিতে লিখে যান, “লোভ ছিল নানা রকম। সমাজে উপরে উঠতে গিয়ে নানা রকম লোক ঠকাতে শিখেছি। দেশ বিদেশে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। আর কষ্ট পেয়েছ তোমরা। এখন মনে হয়, তুমিও আমার ধাতটা পাবে না তো! এ ভুল তুমি আর কোরো না। সিগারেটটা ছেড়ে দাও। বুড়ো বয়সে গাছেদের চেনার সুযোগ হল। পারলে গাছেদের মতো হয়ে ওঠো।”
একা একা চোরাবালিতে ডুবতে ডুবতে হয়তো হারিয়ে যেত অনিকেত। কিন্তু দু’ঘণ্টা পর ছবি যখন শেষ হয়, তখন ইন্দ্রনীল আর একা নয়। তার হাত ধরে হাঁটছে অন্য কারও এক সন্তান। সেই ছেলেটির হাত ধরা অনিকেত যেন সত্যিই গাছ। গাছের চিরস্থায়ী ছায়াময়তা নিয়ে।
মনু মলহোত্র প্রযোজিত ছবি। একটা মানুষের গাছ হয়ে ওঠার কাহিনি। আগামী ১২ অগষ্ট মুক্তি।
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.