শনিবারের নিবন্ধ
মিয়া বিবি ফিরসে রাজি
লিজাবেথ টেলর আর রিচার্ড বার্টন। দু’বার বিয়ে, দু’বার ডিভোর্স। সেটা ষাট-সত্তরের দশকের হলিউড। যেখানে জীবন ছিল সিনেমার মতো।
ষাটের দশকের কলকাতা। ‘সাত পাকে বাঁধা’। সুচিত্রা সেন আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অর্চনা আর সুখেন্দু। প্রেম, বিয়ে, ভুল বোঝাবুঝি এবং ডিভোর্স। হৃদয়ে মোচড় দেওয়া ট্র্যাজেডি। কিন্তু মিলন? তা যে কখনওই সম্ভব নয়। সেখানেও তো জীবনের সামনেই আয়না ধরে সিনেমা।
আর ২০১১-র কলকাতা? সেখানে চিত্রটা একেবারেই আলাদা। সম্পর্কের সমীকরণগুলোই পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। সেপারেশন, ডিভোর্সের তিক্ততার বেড়াজাল ডিঙিয়ে দম্পতিরা আবার ফিরে যাচ্ছেন পরস্পরের কাছে।
অবাক হচ্ছেন? কিন্তু আপনার পাশের ফ্ল্যাট বা পাড়াতেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে নিঃশব্দে।
***
যেমন আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু আর ঐশ্বর্যা বসু। বিয়ে হয় ২০০২-এ। দুই শিল্পী মিলে শুরু করেন কবিতার ‘ব্যান্ড’ বৃষ্টি। ভাল-মন্দ মিলিয়ে চলতে চলতে মন্দের ভাগ গেল বেড়ে। পরিণাম ডিভোর্স। ঠিকই। কিন্তু তার পরেও থেকে যাচ্ছে জীবনের অনেকটা। যেখানে তিক্ততার সাগর ছেঁচে আবারও বন্ধুত্বের অমৃত উঠিয়ে আনা যায়।
“আমাদের শিল্পই আমাদের বেঁচে থাকার, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল স্তম্ভ। মঞ্চটা আমাদের বাড়ির একটা এক্সটেনশন বলতে পারেন,” বলছেন শোভনসুন্দর, “আমার আর ঐশ্বর্যার ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরও আমাদের যোগাযোগ ছিল। পারস্পরিক শ্রদ্ধাও ছিল। আবার একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। এই বছর বাল্টিমোরের বঙ্গ সম্মেলন সেই সুযোগ করে দিল। ২০০৮-এ ডিভোর্সের পর এই প্রথম আমরা আবার কাজ করলাম।”
ঠিক একই রকম গল্প আছে আরও।
সরকারি চাকুরে রাজা আর স্মিতার মাখোমাখো প্রেমের বিয়ে গিয়ে ধাক্কা খায় স্মিতার শাশুড়ির তির্যক মন্তব্যে। তাই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রথমে মন কষাকষি, তার পর ঝগড়া। পরিণাম ডিভোর্স। সেটা ২০০৯ সাল। আর ২০১১-য়? স্মিতা আর রাজা আবার একসঙ্গে। আবারও বিয়ে করেছেন। শাশুড়িহীন সংসার তাঁদের এখন। রাজা পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে স্মিতার সঙ্গে আলাদা সংসার পেতেছেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’র সুখেন্দু আর অর্চনারা এখন অতীত।
“শাশুড়ির নানা তির্যক মন্তব্যে খুব মন খারাপ হয়ে যেত। বরের (রাজা) সঙ্গে সম্পর্কে সেটার এফেক্ট পড়ত। তার পর তো ধৈর্য হারিয়ে ডিভোর্স নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরেই এলাম। কিন্তু তার পরেও আমরা প্রায়ই বেড়াতে যেতাম, সিনেমা দেখতে যেতাম, খেতে যেতাম রেস্তোরাঁয়,” বলছিলেন স্মিতা। এ ভাবে বছর দু’য়েক কাটল। “তবে একটা পরিষ্কার উপলব্ধি দু’জনেরই ছিল: আমরা একে অপরকে ছাড়া অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম না। এ ভাবে চলতে চলতে মনে হল, অন্যের অযৌক্তিকতার জন্যে নিজেদের ভাসিয়ে দেওয়ার কোনও মানে হয় না।”
সত্যিই তো। সুখেন্দু আর অর্চনার বিয়ে ভাঙার পিছনেও তো ছিল অর্চনার মা’র প্ররোচনা। অর্চনারা সে সময়ে পারেনি। এখনকার স্মিতারা কিন্তু অক্লেশে নিজের মধ্যে ডুব দিচ্ছেন। আত্মোপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন না।
সেটাই বলছেন শোভনসুন্দরও। “এখন স্বীকার করতে বাধা নেই, আমাদের ইগো প্রবলেম ছিল। সেটাই বাড়তে বাড়তে ডিভোর্স অবধি গড়াল। আমার তরফে বলতে পারি এখন আমি অনেক পরিণত। এখন আমাদের পরস্পরের সান্নিধ্য আর কমফর্ট-লেভেলও অনেকটা বেশি।” আর শোভনসুন্দরের প্রাক্তন স্ত্রী ঐশ্বর্যা? তিনিও মানছেন এই কমফর্ট-লেভেলের কথা। “ব্যক্তিগত স্তরে যাই হোক না কেন, শিল্পী শোভনসুন্দরের সঙ্গে তো আমার কোনও ঝামেলা ছিল না। তা ছাড়া কবিতা বাদ দিয়ে তো জীবনের কথা ভাবতেই পারি না। তাই সেই স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটা ফিরে এসেছে,” বলছেন ঐশ্বর্যা।
***
ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসার প্রশ্নে অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য একেবারে অন্য। “কোন দেশের কথা বলছেন বলুন তো? কোন জেনারেশন? সব অফার, ডিল-এর তলায়, ছোট করে লেখা থাকে: কোম্পানি টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস অ্যাপ্লাই... ম্যান-ওম্যান ডিল সবই ম্যাটার অব কনভিনিয়েন্স... কারও কিছু চাই, বদলে কী পাচ্ছ...এ ক্ষেত্রেও সেটা বলে দিলে ভাল হয়,” কিছুটা যেন তিক্ততা রূপার গলায়। রূপার ডিভোর্স হয়েছে বহু দিন। প্রাক্তন স্বামী আর তাঁর ফ্ল্যাট কলকাতার একই পাড়ায়। তাঁদের পুত্র আকাশ মা আর বাবা, দু’জনের কাছেই থাকে। মিলিয়ে মিশিয়ে। প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা এখন ঠিক কেমন এই প্রশ্নের উত্তরে রূপা বলেন,“আমাদের দেশে ‘এক্স’রা একে অপরের অন্য কোনও সম্পর্ককে যে দিন গ্রেসফুলি হ্যান্ডল করতে পারবে, সে দিন এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলা ভাল। কেন না, সব ‘ভাল সম্পর্ক’ই ভারচুয়াল, কাল্পনিক, মনকে বুঝ দেওয়ার পদ্ধতি।”
রূপার ‘সে দিন’টা কিন্তু একেবারে অলীক নয়। একে অপরের সম্পর্ককে ‘গ্রেসফুলি’ হ্যান্ডল করাটা এতটা শক্তও নয় কারও কারও কাছে। তা না হলে রজত আর মনীষার ঘটনাটা অন্য রকম হল কী করে?
মনীষার বিয়ে হয় বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত রজতের সঙ্গে। কর্মসূত্রে রজত আজ সিঙ্গাপুর, তো কাল লন্ডন। তাঁদের এক ছেলে। তবু স্বামীর এই বাইরে থাকা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই মনীষার। তারই পরিণতি, দেবরাজের প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়া। শেষমেশ রজতের সমস্ত যুক্তির জাল কেটে একদিন দেবরাজের হাত ধরে সংসার ছাড়লেন মনীষা। পরিণাম, মিউচুয়াল সেপারেশন। রজত কিন্তু এটা সামলেছেন মারাত্মক পরিণত ভাবে। ছেলেকে মানসিক ভাবে এই ঝামেলা থেকে বাইরে রাখতে হস্টেলে দিয়েছেন। “আমার পক্ষে ওই সাঙ্ঘাতিক ব্যস্ত রুটিনের ধরন পাল্টানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমি এ-ও জানতাম যে, দেবরাজের পক্ষে মনীষাকে বেশি দিন খুশি রাখাও সম্ভব নয়। মনীষাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও খুব জেদি। তার পর আমিই বললাম দেবরাজের সঙ্গে গিয়ে থাকো। ও রকম ভাবে তো কাউকে আটকানো যায় না,” বলছেন রজত।
তা-ই হল। মনীষা দেবরাজের সঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন মাত্র ১৪ মাস। তাঁর প্রতি দেবরাজের মানসিক অযত্নটা বুঝতে পেরেছিলেন। এবং অবশেষে ফিরে এলেন রজতের কাছে।
***
কিসের ‘ইজাজত’ চেয়েছিল তারা? সুধা? বা মহিন্দর? বা মায়া? “মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়, অর মেরে ইক খত মেঁ লিপটি রাত পড়ি হ্যায়, ও রাত বুঝা দো, মেরা ও সামান ল’টা দো...”
কী সেই ‘সামান’, যা ফেরত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় এ রকম আকুল ছিল তারা? জীবনের একমুঠো স্মৃতি? না তারও বেশি কিছু? আর যদি সেই ‘সামান’ না ফেরত পাওয়া যায়? নিজেদেরই কি ফিরে যেতে হয় সেখানে? সেলুলয়েড-ই যেন বারবার ছায়া ফেলে যাচ্ছে জীবনে?
স্মিতা এবং রাজার ‘কাপ্ল থেরাপি’ করেছিলেন নীলাঞ্জনা সান্যাল। নীলাঞ্জনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের মনোসমীক্ষক এবং অধ্যাপিকা। “ওঁদের সমস্যাটা হয়েছিল রাজার মায়ের রাজার ওপর অত্যন্ত বেশি রকম পজেসিভনেসের কারণে। মা’কে ভালবাসার সঙ্গে অন্য কাউকে ভালবাসার মধ্যে যে কোনও বিরোধ নেই, এই সত্যটা ওঁদের তিন জনেরই বোঝা এবং একে অন্যকে বোঝানোর দরকার ছিল। পুরোটাই ছিল একটা স্বআরোপিত কষ্ট। যদিও ওঁরা এখন মায়ের সঙ্গে থাকছেন না, আমার বিশ্বাস ওঁরা কিছু দিনের মধ্যেই আবার ফিরে যাবেন। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকবেন,” বলছেন তিনি। নীলাঞ্জনার কাছে আজকাল বছরে অন্তত দশ-বারোটা এমন কেস আসে। “আগে এত আসত না। আসলে এখন স্বামী-স্ত্রীরা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত এত হুটহাট করে নিয়ে ফেলছেন, যে পরে নিজেদেরই মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বোধহয় ভুল হয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই আবার একসঙ্গে ফিরে আসতেও চাইছেন তাঁরা বেশি বেশি করে।”
“কাপ্লরা যদি সম্মত থাকেন তা হলে ডিভোর্সের পর পুনর্বিবাহে কোনও আইনগত অসুবিধে নেই,” বলছেন আইনজীবী নিবেদিতা দাশগুপ্ত চক্রবর্তী।
***
যুদ্ধং দেহি মনোভাব আছে ঠিকই। দু’জন মানুষ। তাদের চিন্তাধারা, জীবনযাপনের ধারণা তো আলাদা হতে বাধ্য। তবে সে ভাবের যে ভাবান্তরও হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। আর সন্তান থাকলে সেই আত্মসমীক্ষণের মাত্রাতেও বদল ঘটছে। কাজ করে অন্য চিন্তা। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যেমন তাঁর ছেলে আকাশ।
তাঁর কথায়, “ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরেও দু’টো মানুষ যদি একে অপরের সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় থাকে তা হলে সেটা সন্তানের পক্ষে মঙ্গল। আশপাশের মানুষও তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচে। এটা করাটাই পরিণতমনস্কতার পরিচয় বলে আমি মনে করি।”
সন্তানের জন্য আরও অনেকেই সেপারেশনের পরও আবার ফিরে দেখছেন নিজেদের সম্পর্ককে। রিমা-পার্থ যেমন। বেমানান মানসিকতার কাপ্ল রিমা-পার্থর দুই সন্তান। তাদের নিয়ে রিমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরিণাম ডিভোর্স।
ডিভোর্সের পর শুধুমাত্র সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন পার্থ। রিমার নয়। অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ্য সত্ত্বেও তা মেনে নিয়েছিলেন রিমা। গোল বাধল অন্য জায়গায়। “পার্থ যখন ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে আসত, ওদের বেড়াতে নিয়ে যেত, নানা রকম জিনিস কিনে দিত। ওরা ওদের বাবাকে ছাড়া মুখ ভার করে ফিরত। আমরা দু’জনেই দেখলাম আমাদের জন্যে বাচ্চাগুলো কষ্ট পাচ্ছে। সেটা কাম্য নয়। ভাবলাম আলাদাই যদি থাকতে পারি তা হলে একটু মানিয়ে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারি না?” বলছেন রিমা। রিমা আর পার্থ ডিভোর্সের পরও তাই একসঙ্গেই আছেন।
***
যেমন বার্টনকে দু’বার বিয়ে করা সত্ত্বেও তাঁর বাচ্চাদের ওপর তার আঁচ পড়তে দেননি লিজ টেলর। হইহই করে কাটাতেন তাদের সঙ্গে। “আমরা আমাদের সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিতাম শু্যটিংয়ের সেটে, তার পর বাড়ি যেতাম, বাচ্চাদের সঙ্গে নৈশাহার করতাম, ওয়ার্ড গেম খেলতাম, তার পর চরিত্রের লাইন মুখস্থ করে ঘুমোতে যেতাম। এই রুটিনটা এক রকম ক্যাথার্টিক ছিল, সেটে ক্ষোভের পর বাড়িতে আদর,” বলেছেন তিনি। সম্প্রতি লিজের মৃত্যুশয্যাতে তাঁর ছেলে-মেয়েরাই ছিলেন মায়ের পাশে।
একই সমস্যার প্রায় একই ভাবে সমাধান করেছেন মধ্যবয়স্ক দম্পতি অরূপ-শুক্লা। তাঁরাও দু’জনে একেবারে ভিন্ন মানসিকতার মানুষ। অরূপ ব্যবসায়ী, আয়েসি, মজা করতে ভালবাসেন। শুক্লা সিরিয়াস, গম্ভীর। মানসিকতার অমিলের জন্যেই ডিভোর্স। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলে যান শুক্লা। ওঁদের এক বন্ধু সঙ্গীতা ঘোষের মতে, বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং একাকিত্বের কারণে দু’জনে আবার ফিরে আসেন একে অপরের কাছে। একেবারে প্র্যাক্টিক্যাল একটা সমাধান।
এ ব্যাপারে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ই শেষ কথা বললেন। “ভাল থাকার সংজ্ঞাই হল, লিভ অ্যান্ড লেট লিভ...আমরা সেটা সব সময় করতে পারি কোথায়?”
আসলে সাত পাক ঘোরার পর হতেই পারে জতুগৃহ। সেখান থেকে বেরিয়ে ভিন্ন লক্ষ্যের ট্রেন তো ধরাই যায়। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা হল যাত্রাপথের কোথাও গিয়ে যদি আবারও দেখা হয়ে যায় দু’জনের, পুরনো তিক্ততা ভুলে আবারও একসঙ্গে পথ চলা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখা।
ষাটের বা সত্তরের দশকের বাঙালির হয়তো এ ভাবে নিজের মুখোমুখি হওয়ার সাহস ছিল না। ২০১১-য় পৌঁছে রিমা-পার্থ, মনীষা-রজতরা কিন্তু সেটাই করে দেখাচ্ছেন।

(গোপনীয়তার জন্য কিছু নাম পরিবর্তিত)
মনের হদিস
• দ্বিতীয় বার ফিরে এলে সমস্ত ভিন্ন চিন্তাধারা বা মতামত (যার জন্য প্রথম বার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল, হয়তো) আমূল বদলে গিয়ে সমস্ত মাখোমাখো হয়ে যাবে সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং সেই ভিন্নতা নিয়েই যে চলতে হবে, সেই মানসিকতার জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল।
• মন ফিরতে চাইছে অথচ ‘ইগো’ বা সমাজের নানা কথার ভয়ে ফেরা যাচ্ছে না, সেই চিন্তা করলে নিজেরই ক্ষতি। সেই চিন্তা বাদ দিতে হবে।
• লোকজন এত বেশি ‘আমিত্ব’ নিয়ে ব্যস্ত যে, সেই ‘আমি’র সুরটা কখনও ‘তুমি’র মধ্যে মিলতে চায় না। তার ফলে মনোমালিন্য, অপছন্দ, একে অন্যের থেকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা। এখানে সমঝোতা বা মানিয়ে চলার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
• ফোন বা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জন্যে প্রায় জামা বদলানোর মতোই সঙ্গী বদলাচ্ছে। কিন্তু আমি কি চাই সেটা ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার। আর একটা সম্পর্ক হলে তাতেও যে গণ্ডগোল হবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। সুতরাং এই সম্পর্কটাকেই একটু খতিয়ে দেখা যায় না?
• স্বামী-স্ত্রী দু’তরফই এখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন। একে অন্যের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নয়। অযৌক্তিক ব্যবহার কেউই মানতে নারাজ। এখানে সহনশীলতার বড় ভূমিকা আছে।
• আসলে ‘ফাস্ট লাইফ’-এর জন্য প্রত্যেকের মনই এখন অস্থির। নিজস্বতার অভাববোধও কাজ করে। সব কিছু পাওয়ার অদম্য ইচ্ছেও সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণ। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ারও বড় কারণ। এই তাৎক্ষণিক আনন্দ পাওয়ার জন্য কতটা বিসর্জন দিতে পারি, তা ভেবে দেখা জরুরি।
নীলাঞ্জনা সান্যাল
মনোসমীক্ষক এবং অধ্যাপিকা, মনস্তত্ত্ব বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.