লাইনে ট্রেন আসছে-যাচ্ছে। অথচ প্রাণ হাতে করে অহরহ বেপরোয়া চলছে রেললাইন পারাপার। এ ছবি পার্কসার্কাস রেল স্টেশনের কাছেই লোহাপুলের। এ ছাড়াও পার্ক সার্কাস, তপসিয়া, শিবতলা ও তিলজলার বেশ কিছু অংশের অসংখ্য মানুষ এ ভাবেই প্রতি দিন লাইন পারাপারে অভ্যস্ত। তাঁদের জন্য এই লাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলিও লোহাপুলের কাছে এসে কিছু ক্ষণের জন্য থেমে যেতে বাধ্য হয়, বিশেষ করে অফিস টাইমে এবং স্কুল শুরুর সময়। নিত্যযাত্রী এবং এলাকার মানুষের একাংশের অভিযোগ, চলন্ত ট্রেন এলে লাইনের পাশে সরে দাঁড়ানোটা কার্যত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এই সব অঞ্চলের বহু বাসিন্দারই।
|
রেললাইনের দু’পাশে উঁচু পাঁচিল থাকলেও যে-অংশ দিয়ে মানুষ যাতায়াত করেন, সেই সব অংশের পাঁচিল ভাঙা অথবা নেই। সেখানে কোনও প্রহরীও নেই। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার সমস্ত ট্রেন এই লাইন দিয়ে অহরহ যাতায়াত করছে। আর তার মাঝেই ফাঁকফোকরে মানুষ যাতায়াত করছেন। কেননা, লোহাপুল থেকে শামসুল হুদা রোড ও রাইফেল রেঞ্জ রোডে সমস্ত রকম যানবাহন সহজেই পাওয়া যায়। খুব অল্প সময়েই এই ভাবে লাইন পেরিয়ে চলে যাওয়া যায় বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, বেকবাগান, পার্ক সার্কাস মোড়, ধর্মতলা সমেত শহরের নানা এলাকায়। শিবতলা তপসিয়া অঞ্চলে সেই অর্থে যানবাহন অপ্রতুল। জনসংখ্যাও অনেক। স্কুল-কলেজ সবই পার্ক সার্কাস অংশে। তাই প্রাণ বিপন্ন হলেও রেললাইন পেরনোর প্রবণতা এই সব অঞ্চলে বেশি। এই অংশে শুধু মানুষ যাতায়াত করে তা-ই নয়, বাজারও বসে। যদিও এই ভাবে লাইন পারাপার সম্পূর্ণ বেআইনি বলে অভিমত রেল কর্তৃপক্ষের। |
লোহাপুলের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে সাবির, সরফরাজ, নাসরিন, রুকসানারা। এই শিশুরাও একই ভাবে প্রতি দিন যাতায়াত করে। যাতায়াত করেন সরকারি চাকুরে বিমল হালদারও। তিনি কী করে এই বেআইনি কাজ করছেন? বিমলবাবুর কথায়: “কী করব? শিবতলা অঞ্চলে গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই আমরা লোহাপুলে এসে অটো ধরে ধর্মতলা যাই। আসলে এই লোহাপুলে যে-কয়েকশো অটো চলে, তার সবই এই গলি দিয়ে আসা ও-পারের লোকজনের জন্যই।”
এ ভাবেই নিত্য যাতায়াত করেন প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, নাজিয়া প্রমুখ। নাজিয়া বললেন, “আমাদেরই পা কাঁপে যখন দেখি ওই ট্রেন চলাচলের মাঝখানে বড়দের সঙ্গে বাচ্চারাও যাতায়াত করছে।” প্রাণ হাতে এই ঝুঁকির যাতায়াত সম্পর্কে অবগত আছেন রেল কর্তৃপক্ষও। শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) পুরুষোত্তম গুহ বলেন, “বিষয়টি জানি। দেখি, আরও খোঁজখবর নিই। একটা কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে।”
এলাকার বিধায়ক ও জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি ওই জায়গাটি সম্পর্কে জানি। খুব শীঘ্রই রেলের আধিকারিকদের নিয়ে জায়গাটা দেখে আসব। ব্যবস্থা নিতেই হবে।”
|