আকাশে মেঘ জমলে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেন পুর বাজারের ব্যবসায়ীরা। এক ঘণ্টা জোর বৃষ্টিতে বাজারে জল দাঁড়িয়ে যায়। টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জল জমে হাঁটু পর্যন্ত। জল নামতে কখনও পুরো দিন লেগে যায়, কখনও বা তার বেশি।
আগরপাড়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-সংলগ্ন স্টেশন রোড থেকে শুরু করে পীরতলা মাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এই বাজার। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাজারটি পানিহাটি পুরসভা আশির দশকে অধিগ্রহণ করে।
দুশোর মতো দোকান রয়েছে বাজারে। তা ছাড়াও বাজারের শেষ প্রান্তে মাঠের ওপর প্লাস্টিকের ছাউনির তলায় বসে কুড়িটি সব্জির দোকান, যদিও পুরসভার তথ্য অনুযায়ী মাঠ-বাজারটি এখনও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। |
বাজারের প্রবেশপথের দু’পাশে পাকা দোকানের সারি। দোকানের মাঝের সরু রাস্তা দিয়ে যেতে হয় অন্য দিকের কাঁচা বাজারে। ছাদ ঢাকা উঁচু চাতালের নীচে বসেন জনা আষ্টেক সব্জি-বিক্রেতা এবং পাঁচ জন মাছ-বিক্রেতা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চাতালের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। বাকি অংশ গুদামের চেহারা নিয়েছে। তবে মাছ-মাংসের দোকান যে দিকে সে দিকের অবস্থা সব থেকে খারাপ। নিচু, ইট বিছানো রাস্তায় একটু বৃষ্টিতেই ছ’ইঞ্চির মতো জল জমে যায়।
এই বাজারে নিয়মিত আসেন সুবল রায়। তিনি বলেন, “কাছাকাছি বাজার বলে অসুবিধা সত্ত্বেও এখানে আসি। কিন্তু আগের তুলনায় ক্রেতা অনেক কমে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরাও নিয়মিত বসেন না।” আগরপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত তরফদার বলেন, “নিকাশি বাজারের মূল সমস্যা। সমস্যার কারণ অনেক। কোনও একটা ব্যবস্থা নিয়ে বাজারকে সমস্যামুক্ত করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”
পুর পরিষেবা বলতে বাজারে নিযুক্ত দু’জন সাফাই কর্মী। এক জন অনিয়মিত পাহারাদার। মাস আষ্টেক আগে বাজারের প্রবেশপথ কংক্রিটের করে দিয়েছে পুরসভা। কাঁচা বাজারের পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “অধিগ্রহণের পরে বড় কাজ বলতে ১৯৯৩-এ উঁচু ঢাকা চাতাল তৈরি করেছিল পুরসভা। কথা ছিল গোটা কাঁচা বাজারটাই এ রকম হবে। হল তো না-ই, উপরন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল চাতালটিও।”
সেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সচিব বাবলা দত্ত বলেন, “বেশি বৃষ্টিতে দোকানে জল ঢুকে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রচুর। আমরা চাই বাজারটির সার্বিক উন্নয়ন করুক পুরসভা।” |
স্থানীয় পুর প্রতিনিধি (আর এস পি) দিলীপ দে বলেন, “বছর দেড়েক আগে পুর প্রধান পি পি পি মডেলে বাজার উন্নয়নের একটা সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়েছে বলে শুনিনি। নিকাশির সমস্যা বহু পুরনো। আশপাশের জলা নিচু এলাকা ভরাট হয়ে বসতি গড়ে ওঠা এর অন্যতম কারণ। আপাতত মাছ বাজারের উন্নতি হওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগী হতে বলেছিলাম। ওঁরা এখনও কোনও যোগাযোগ করেননি।” মাছ বাজারের দায়িত্বে ব্যবসায়ী শ্যামল বর্মণ বলেন, “পুর প্রতিনিধির থেকে আমরা সে ভাবে সহযোগিতার আশ্বাস পাইনি।”
বেহাল নিকাশির বিষয়ে পুর প্রধান (সিপিএম) চারণ চক্রবর্তী বলেন, “সেন বাজার থেকে নতুন নিকাশি নালা শালপাতা বাগান হয়ে নরুলা ইনস্টিটিউটের পাশ দিয়ে বিটি রোডে পড়েছে। কাজ শেষ হলেও পলতা ওয়াটার ওয়ার্কসের দীর্ঘ মেয়াদি কাজের জন্য চালু করা যাচ্ছে না। খুলে গেলে অনেকটা সমস্যা মিটবে।” বাজার উন্নয়ন আটকে কেন? তিনি বলেন, “পুরসভার যাতে আয় বাড়ে সে সব দিক দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের সাময়িক স্থানান্তরের প্রশ্নও চলে আসছে। সেই কারণে সময় লাগছে।” |