উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
ছবি পাল্টায় না
যায় ডুবে যায়...
ল থইথই রাস্তা। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়ির একতলায় জল ঢুকে যায়। রাস্তার ধারে পানীয় জলের পাইপের উপর দিয়েই বয়ে যায় নোংরা জল। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পানিহাটি, কামারহাটি, বরাহনগর, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, এমনকী, খাস ব্যারাকপুর শহরের হাল এমনই। আকাশের মুখ ভার হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এই সব এলাকার লোকজন।
রাস্তার মধ্যে ম্যানহোল খুলে, পাম্প চালিয়ে জল বের করার চেষ্টা করা হলেও তাতে খুব একটা লাভ হয় না। বেহাল অবস্থা হয় হাসপাতালগুলিরও। গত কয়েক দিন আগের বৃষ্টিতেও দেখা গিয়েছে, পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ঢোকার মুখে এক কোমর জল। কামারহাটির সাগর দত্ত স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রবেশপথে জল। জল ভেঙে রোগীদের নিয়ে ঢুকতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়েছে রোগীর আত্মীয়দের। জল পেরিয়ে এক কিলোমিটার পথ যেতে রিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। এ ভাবে জলমগ্ন হওয়ায় সার্বিক ভাবে হাসপাতালের পরিষেবাও বিঘ্নিত হয় বলে অভিযোগ পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার মলয় দাসের। মলয়বাবুর কথায়: ‘‘হাসপাতালে ঢোকার মুখে প্রতি বার জল জমে। এ বারেও জমেছিল। রোগীরা নাকাল হন। আমরাও। বহির্বিভাগেও জল ঢুকে যায়। জলে পা ডুবিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। সর্বত্র অভিযোগ, অনুযোগ, প্রতিকারের দাবি জানিয়ে জানিয়ে আমরা ক্লান্ত।’’ পাশাপাশি, মলয়বাবু বললেন, “বৃষ্টি কমে গেলেও জমা জল থেকে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এলাকার মানুষজন।”
পানিহাটির আর এক প্রান্ত আগরপাড়ায় স্টেশন চত্বর ও বাইরের অঞ্চলও জলে ডুবে যায়। একটানা বৃষ্টি হলেই হাঁটু জল। কোনটা রাস্তা আর কোনটা নর্দমা, বোঝা দুষ্কর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার। পুরসভায় বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। এলাকার বাসিন্দা অসীম সাহা বলেন, ‘‘প্রতি বছর একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের এই এলাকা জলে ডুবে যায়। প্রশাসন প্রতি বার দায়সারা ভাবে কখনও ম্যানহোল খুলে বা খুব বেশি হলে পাম্প চালিয়ে এক-আধ বার জল বের করে দিয়ে হাত গুটিয়ে নেয়।’’
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে পানিহাটির পুরপ্রধান চারণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। তিনটি পাম্পও তৈরি রেখেছি। ভৌগোলিক ভাবে পানিহাটি-কামারহাটি অঞ্চল একটা বাটির মতো। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই এখানে জল জমে। বসতি তুলে তো আর নিকাশি ব্যবস্থা বানানো যায় না। ঘন জনবসতির মধ্য দিয়েই আমাদের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার কথা ভাবতে হচ্ছে। তার উপর বি টি রোড বরাবর কলকাতা পুরসভা জলের পাইপ বসাতে গিয়ে নিকাশি নালা আটকেছে। একটানা বৃষ্টি হলে সেখান থেকে জল পাম্প করে বের না করলে ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’
ব্যারাকপুর ঘোষপাড়া রোড আর কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে আগে থেকেই ভেঙে চুরমার হয়েছিল। এর উপর সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিতে রাস্তার বিরাট বিরাট গর্ত এখন কার্যত খানা-ডোবার চেহারা নিয়েছে। গর্তে পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, ‘‘প্রতি বার বৃষ্টিতে জল জমলেই আমাকে ফোন করে করে কেএমসি এবং কেএমডিএ-কে জানাতে হয়। তার পরে ওরা পাম্প এনে জল সরায়। এতেও বেশ খানিকটা সময় চলে যায়। তত ক্ষণ জলবন্দি হয়ে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা যে একটু বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে, সেই সমস্যা কাটাতে সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও দফতরগুলির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “আমি সংশ্লিষ্ট বাস্তুকারদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” এ ব্যাপারে কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই সব এলাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন এরিয়া-র (কেএমএ) অন্তর্গত। সেখানে যদি কোনও প্রকল্প কেএমডিএ চালায়, তার দায়দায়িত্ব আমাদের। তবে স্থানীয় স্তরে যে সমস্যা তা সমাধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পুরসভার।”
Previous Item

Kolkata

Next Item




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.