দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
দুর্ভোগ চলছেই

তিন চাকার মর্জি
ন্ধে হলেই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য নির্ভর করতে হয় অটোচালকদের মর্জির উপরে। গড়িয়া-সোনারপুর এবং গড়িয়া-বারুইপুর রুটে এটাই কার্যত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের কথায়: নিদির্ষ্ট রুট থাকলেও বহু অটোচালক সেই রুট মেনে গাড়ি চালাতে চান না। চালকেরা নিজেদের মতো করে তাঁদের গন্তব্য ঠিক করে নেন। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় এই দুই রুটের নিত্যযাত্রীদের।
গড়িয়া থেকে সোনারপুর এবং বারুইপুর যাওয়ার অটো পাওয়া যায় মেট্রো রেলের কবি নজরুল স্টেশন সংলগ্ন গড়িয়া ব্রিজের উপর থেকে। দুই রুটের যাত্রীদের ক্ষোভের প্রমাণ মেলে সন্ধের পরে এলাকায় পা দিলেই।
সোনারপুরের অধিকাংশ অটো যাবে হিন্দুস্থান মোড়, মহামায়াতলা এবং কামলগাজী পর্যন্ত। আর বারুইপুরের অটো যাবে কামালগাজী, হরিনাভি অথবা হরহরিতলা পর্যন্ত। বারুইপুর বা সোনারপুর কোন অটো যাবে তা কোনও অটোচালক বলতে পারছেন না। অসহায় যাত্রীরা বারুইপুর, সোনারপুরের অটোর সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার রণে ক্ষান্ত দিয়ে ঝুলে পড়ছেন ভিড় বাসে। কেউ আবার ‘কেন যাবে না’ প্রশ্ন তুলে অটোচালকের সঙ্গে শুরু করেছেন বচসা।
কিন্তু কেন এক শ্রেণির অটোচালকের এই মর্জি? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, সোজা ট্রিপ-এর চেয়ে ‘শর্ট ট্রিপ’-এ চালকদের বেশি লাভ হয়। তাই অধিকাংশ চালক দূরে যাওয়ার বদলে কাছাকাছি জায়গায় যেতে চান। সন্ধের পরে দূরে যাত্রী নিয়ে গেলে ফেরার সময় যাত্রী পাওয়ায় সমস্যা হয়। কিন্তু কাছাকাছি গেলে ফেরার সময়ে যাত্রী না পেলেও অসুবিধে হয় না। গ্যাস কিংবা তেলেরও সাশ্রয় হয়।
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
এই দুই রুটে নিত্যযাত্রীদের এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নেন সিটুর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক কমল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই দুই রুটে অটোর চালকদের সম্পর্কে এই অভিযোগ অনেক বার শুনেছি। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে গড়িয়া-বারুইপুর রুটের ইউনিয়ন এখন তৃণমূল নিয়ন্ত্রণ করে। তবে গড়িয়া-সোনারপুর রুটটি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই রুটে যাত্রীরা যাতে আর এই ধরনের সমস্যায় না পড়েন তার প্রতি আমরা নজর রাখব।”
এলাকায় ঘুরে জানা গেল, এই দুই রুটের নিত্যযাত্রীদের সন্ধের পরে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা নিয়ে বেশ কয়েক বার অশান্তিও হয়েছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বক্তব্য: দীর্ঘ দিন ধরে এই ভাবেই তাঁরা যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাত বাড়তে থাকলেই এই দুই রুটে অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যাও কমতে থাকে। অসহায় যাত্রীদের তখন অটোর উপরেই নির্ভর করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তখন নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, এই সব সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
গড়িয়া-বারুইপুর রুটের তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত বারুইপুর অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “অধিকাংশ জায়গায় এত দিন পর্যন্ত অটোর ইউনিয়ন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন বিভিন্ন জায়াগায় কিছু কাটা রুট করে রাখা হয়েছিল সিটু নেতৃত্বের মদতে। তাই যাত্রীদের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে গড়িয়া-বারুইপুর রুটে আমাদের ইউনিয়ন হয়েছে। যাত্রীদের এই সমস্যা নিয়ে আমরা চালকদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। আবার আলোচনায় বসব। আশা করি সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে আমাদের রুটে এই সমস্যার একটা সুরাহা হবে।”
 
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.