দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
অভাব পরিকাঠামোর
লক্ষ্য জাতীয় খেতাব
মা পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে আশিস ফুল বিক্রি করে। পাশাপাশি চলে হকির চর্চা। এ বার তারই করা এক মাত্র গোলে বারুইপুর হাইস্কুলকে হারিয়ে আন্তঃস্কুল জুনিয়র নেহরু হকিতে চ্যাম্পিয়ন হল বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দির। এ বার আশিস নস্করের অধিনায়কত্বেই দিল্লিতে নেহরু হকির মূল পর্বে খেলতে যাবে বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দির। সল্টলেকের সাইতে হকির কৃত্রিম টার্ফে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় অনূর্ধ্ব ১৫ এই রাজ্য হকি প্রতিযোগিতা। মোট ১৩টি স্কুল অংশ নেয়।
বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দিরের সম্পদ সিংহ, মানু সিংহ, সপ্তর্ষি দেবনাথ, শানু প্রধান, রাম সিংহরা স্কুলের মাঠেই প্রশিক্ষণ নেয়।
আন্তঃস্কুল জুনিয়র নেহরু হকিতে চ্যাম্পিয়ন বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দির। দাঁড়িয়ে
বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় আশিস নস্কর। ছবি: পিন্টু মণ্ডল
এই মাঠে বেহালা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের হকি প্রশিক্ষণ শিবির চলে। প্রশিক্ষণ দেন বিজয় অধিকারী। বিজয়বাবু বললেন, “ক্লাবের নিজস্ব কোনও মাঠ নেই। শান্তি সঙ্ঘের মাঠ, এয়ারপোর্টের মাঠ ও তারাতলার মাঠে আগে অনুশীলন চলত। এখন এই মাঠে অনুশীলন চালাচ্ছি। গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা হকি শিখতে আসছে। যেমন, বেহালা বালিকা বিদ্যাপীঠের দুই ছাত্রী সোনালি সিংহ ও রাখী বিশ্বাস ইতিমধ্যেই হকিতে নজর কেড়েছে। এক জনের বাবা স্থানীয় একটি আবাসনের কেয়ারটেকার। অন্য জনের বাবা রিকশা চালান।”
রাজ্যে হকির অবস্থা ভাল নয়। জাতীয় পর্যায়ে স্কুলটি সফল হলে রাজ্যে হকির প্রতি উৎসাহ বাড়বে বলে মনে করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরিকাঠামো ভাল নয়। অধিকাংশ খেলোয়াড়ের ভাল জার্সি নেই, ভাল স্টিক নেই, জুতোও শতছিন্ন। তবু বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন রয়েছে এই স্কুলের খুদেদের। অষ্টম শ্রেণির সম্পদ আর ষষ্ঠ শ্রেণির মানু দুই ভাই। দু’জনেই হকি খেলে। সেন্টার ফরোয়ার্ড সম্পদ বলে, ‘‘মা এক বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। দু’বছর আগে কেনা জুড়ো ছিঁড়ে গিয়েছে।” আশিসের কথায়: “অ্যাস্ট্রোটার্ফে অনুশীলনের সুযোগ নেই। স্কুলের মাঠটিও ভাল নয়।”
স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক অংশুভূষণ বর বলেন, “২০০৭-এ রাজ্যের সেরা হয়ে দিল্লিতে অনূর্ধ্ব ১৭ হকির মূল পর্বে খেলতে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম। এ বার ভাল ফল করতে চাই। রাজ্য হকি সংস্থার সচিব গুরবক্স সিংহের সঙ্গে কথা হয়েছে। সম্ভবত অক্টোবরে সাইয়ের অ্যাস্ট্রোটার্ফে অনুশীলনের ব্যবস্থা হবে। ছাত্রদের জুতো, জার্সির অসুবিধা থাকবে না। স্কুলই কিনে দেবে।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ ঘরের ছেলেরা পড়তে আসে। আমাদের সামর্থ্য কম। তবুও ওদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদেরই প্রাক্তন ছাত্র বিজয়বাবু ভালবাসে প্রশিক্ষণ দেন। এ বার ভাল ফলের আশা করছি।”
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.