দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
জটের যন্ত্রণা, ধরা পড়ার মোড়
ন্ধেবেলা অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় প্রায় চল্লিশ মিনিট অটোর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে উঠছিলেন বেহালা সখেরবাজারের বাসিন্দা কল্পনা রায়। একই ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন কেওড়াপুকুর বাজারের বাসিন্দা অরুণ মণ্ডল। বস্তুত, প্রতি দিনই কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে অটোর লম্বা লাইনে অসংখ্য নিত্যযাত্রীকে এ ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অবশ্য ছবিটা সকালেও একই রকম। কখনও আবার অটোর মধ্যে বসে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকা। সমস্যাটা শুধুমাত্র রাস্তার একটি মোড়ের জন্য। টালিগঞ্জ ট্রামডিপো থেকে করুণাময়ী ব্রিজ পার করেই শুরু হয়ে গিয়েছে মহাত্মা গাঁধী রোড। আর এই মহাত্মা গাঁধী রোডের উপর ধাড়াপাড়া মোড়ই হয়ে উঠেছে নিত্যযাত্রীদের আতঙ্কের বিষয়।
ডায়মন্ড হারবার রোডে মেট্রোর কাজ শুরু হয়েছে। ফলে তাড়াতাড়ি বেহালা পৌঁছনোর জন্য সকলেই এই শর্ট কাট রুটটি ব্যবহার করছেন। ফলে আগের তুলনায় যানজট বেড়েছে। মহাত্মা গাঁধী রোডে বেড়েছে গাড়ি ও অটোর চাপও। শুধু নিত্যযাত্রী নয়, অটোচালক থেকে শুরু করে বাসচালক, সকলের কাছেই দুর্বিষহ এই ধাড়াপাড়ার মোড়। টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মোড় থেকে একটি রাস্তা করুণাময়ী ব্রিজ পার হয়ে মিশেছে মহাত্মা গাঁধী রোডে। এই মহাত্মা গাঁধী রোডের উপরেই ধাড়াপাড়ার মোড়, যেখান থেকে আর একটি রাস্তা গিয়ে মিশেছে মতিলাল গুপ্ত রোড হয়ে বেহালা সখেরবাজার অর্থাৎ ডায়মন্ড হারবার রোডে। আর মহাত্মা গাঁধী রোডটি গিয়ে মিশেছে ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর ঠাকুরপুকুর মোড়ে। ফলে সকাল থেকে দিনভর রাস্তাটি ব্যস্ত থাকে।
অন্য দিকে, ধাড়াপাড়া মোড় থেকে অন্য রাস্তাটি মিশেছে মতিলাল গুপ্ত রোড হয়ে বেহালা সখেরবাজারে। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে অটোগুলি। চলে অজস্র গাড়িও। সরু রাস্তা দিয়ে দু’টি রুটের অবিরাম গাড়ি যাতায়াতের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধের পর থেকেই করুণাময়ী ব্রিজের মুখ থেকে শুরু হয়ে যায় গাড়ির লম্বা লাইন। সে কারণেই সন্ধের পর অটো মেলে না।
কবরডাঙা রুটের অটোচালক মাধব মণ্ডল বললেন, “যানজটের ফলে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। এক একটি ট্রিপে প্রায় দশ মিনিটের গন্তব্যস্থল পৌঁছতে লেগে যাচ্ছে আধ ঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিট। ফলে গ্যাস পুড়ছে অনেক বেশি।” এই কারণেই কি সন্ধের পর দু’টি রুটের অটো মেলে না? জানা গেল, অনেক অটোচালকই যানজটের ভয়ে সন্ধের পর অটো চালাতে গিয়ে বিরক্ত হন, তাই কম দূরত্বে অর্থাৎ হরিদেব, কেওড়াপুকুর বাজার পর্যন্ত যেতে চাইলেও, কবরডাঙা পর্যন্ত যেতে চান না। একই অবস্থা বেহালা সখেরবাজার ও চৌরাস্তার অটোর।
এক অটোচালক বললেন, “আমরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বলেছিলাম, ধাড়াপাড়া থেকে মতিলাল গুপ্ত রোডে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেটি ‘ওয়ান ওয়ে’ করা হোক। অন্য দিকে, মতিলাল গুপ্ত রোড থেকে মুচিপাড়া হয়ে অন্য যে রাস্তাটি সিরিটি হয়ে করুণাময়ী ব্রিজে পৌঁছেছে, সেটি দিয়ে অটো বা গাড়িগুলি ট্রামডিপো অভিমুখী করতে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ে সন্ধের সময় বাড়ি ফেরার অটো না পেয়ে। এমনিতেই এই রুটে বাসের সংখ্যা কম, কিন্তু পেলেও সমস্যা। যানজটে আটকে পড়লে দশ-কুড়ি মিনিটের রাস্তা পেরোতে সময় লাগে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা। বেশি সমস্যায় পড়েন বেহালা এবং কবরডাঙা রুটের বাসিন্দারাই। ধারাপাড়ার যানজট প্রসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) কঙ্কণপ্রসাদ বারুই বলেন, “ওই রাস্তা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় আমরা দেখছি।”
করুণাময়ী ব্রিজ থেকে ধারাপাড়া পর্যন্ত যানজটে বেশি সমস্যায় পড়েন সাধারণ যাত্রী থেকে পথচারী। মহাত্মা গাঁধী রোড এতটাই সরু যে আলাদা ফুটপাথ নেই। রাস্তা দিয়েই পথচারীদের হাঁটতে হয়। সব সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ধাড়াপাড়ার মোড় নিয়ে সংশ্লিষ্ট তৃণমূল কাউন্সিলর রতন শূর বলেন, “আমাকে অটোচালকেরা অনেক বার বলায় আমি পুলিশকে রাস্তা একমুখী করে দিতে বলেছিলাম। নিজে উদ্যোগী হয়ে বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে বিজ্ঞপ্তি না থাকলে এ ভাবে রাস্তা বন্ধ করা যায় না। ওই রাস্তা একমুখী না করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, “এই এলাকায় মানুষের সঙ্গে গাড়ির চাপও বাড়ছে। ফলে যানজট বাড়বেই। ধাড়াপাড়া থেকে বেহালা যাওয়ার রাস্তা ওয়ান ওয়ে করতে হবে। না হলে এ সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.