দুপুর আড়াইটে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস থেকে বিধান শিশু উদ্যানের পাশের রাস্তা দিয়ে মেয়ে তিন্নিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা সুমিতা দাস। কিছুটা যাওয়ার পরেই আচমকা উল্টো দিক থেকে একটি মোটরবাইকে করে দু’টি ছেলে এসে সামনে দাঁড়াল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর গলা থেকে হার ছিনতাই করে চম্পট দিল তারা। পরে উল্টোডাঙা থানায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ওই এলাকা মানিকতলা থানার আওতায়।
সেই ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারেননি সুমিতাদেবী। তিনি বলেন, “ওই রাস্তা বরাবরই ফাঁকা থাকে। কিন্তু শর্টকাটে ওই রাস্তা দিয়ে কাঁকুড়গাছি মেন রোডে যাওয়া যায় বলে অনেকেই ওই রাস্তা ব্যবহার করেন। সে দিন ওই ঘটনার পরে রাস্তায় কাউকে দেখতে পেলাম না।” |
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সুমিতাদেবীরই নয়, অনেকেরই। বিধান শিশু উদ্যানের পাশ দিয়ে বাইপাসে মিশেছে বিধান শিশু উদ্যান সরণি। এই রাস্তায় ছিনতাই, ইভটিজিং-এর ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে, অথচ পুলিশি টহলদারি কার্যত নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এই রাস্তার ধারেই বিধান নিবাসে সম্প্রতি এক ডাকাতির ঘটনায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। যে কোনও বড় ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তেমনই ডাকাতির ঘটনার পরে টহলদারি বেড়েছে এই রাস্তায়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক বার ঘুরে যাওয়ার অন্তত এক-দেড় ঘণ্টা বাদে ফের এলাকায় নজরদারি করে পুলিশ।
শহরের মধ্যে, অথচ প্রান্তিক এলাকা। বেশ কয়েকটি আবাসন, তার মধ্যে রয়েছে পুলিশ আবাসনও। পাশেই ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস, এক পাশে বিধান শিশু উদ্যান। কাছেই উল্টোডাঙা-হাডকো মোড়। অথচ, দিনে বা রাতে নিরাপত্তার অভাব যথেষ্ট বলে বাসিন্দাদের দাবি। কারণ, এই আবাসনের ধার দিয়ে চলাচলের অন্যতম প্রধান রাস্তা বিধান শিশু উদ্যান সরণিতে পুলিশি নজরদারি কার্যত নেই বলেই অভিযোগ এলাকা মানুষের।
এ দিকে বিধান নিবাসের ধার দিয়ে বিধান শিশু উদ্যান সরণি সোজা বাইপাসে গিয়ে মিশেছে। সেখানে উড়ালপুল তৈরির জন্য এই রাস্তা দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। উড়ালপুল চালু হওয়ার ছ’মাস পার করেও কিন্তু এই রাস্তা খুলে দেওয়া হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা চালু থাকলে গাড়ি চলাচল করে, লোক চলাচলও বাড়ে। ফলে কিছুটা স্বস্তি থাকে। কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে বাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমের কাজ হবে। সেই প্রকল্পের মধ্যেই ওই রাস্তার বিষয়টি আছে। টেন্ডার-সহ অন্য প্রস্তুতি চলছে।” |
এই আবাসনের ধারেই আছে পুলিশ আবাসন। সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এই রাস্তা নিঝুম। বিধান শিশু উদ্যানের চার দিকে টহলদারি সে ভাবে থাকে না। রাত বাড়লে ভয় আরও বাড়ে। ছিনতাই, চুরি মাঝেমধ্যে হয়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পর্যাপ্ত আলোর অভাব আছে এলাকায়। এই রাস্তার ধারে বিশাল বিশাল গাছ রয়েছে। আলো লাগানো হলেও গাছের জন্য রাস্তা অন্ধকার থাকে। কিন্তু গাছ নিয়মিত ছাঁটাই করা হয় না বলেই তাঁদের অভিযোগ।
বিধান নিবাসের বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “আমাদের আবাসনে দু’টি গেট আছে। এক দিক দিয়ে গাড়ি ঢুকে অন্য গেট দিয়ে বেরোয়। সেখান দিয়ে খানিকটা গেলেই বাইপাস। কিন্তু ওই রাস্তা অনেক দিন বন্ধ। আবাসনের পাশের রাস্তায় পুলিশের টহলদারি থাকে না বললেই হয়। আলোরও অভাব আছে।”
এই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। বিধায়ক পরেশ পাল বলেন, “ওই এলাকায় আলোর বেশ অভাব। ওই রকম অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার সুযোগ নিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই কিংবা ইভটিজিং-এর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ পেলাম। স্থানীয় কাউন্সিলর কী করেন?” অভিযোগের জবাবে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “বাজে কথা। আলো ঠিকই আছে। সমস্যা হল, রাস্তার ধারের গাছ নিয়ে। গাছ ছাঁটা নিয়ে কলকাতা পুরসভার কর্মসূচির কোনও মাথামুণ্ড নেই। পুজোর আগে গাছ ছাঁটার কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে এই এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছি। কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দ্রুত গাছ ছাঁটতে হবে। পাশাপাশি, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সমস্যা আছে, তবে পুলিশকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।” এ দিকে কলকাতার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ইএসডি) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “টহলদারি বাড়ানো প্রয়োজন। সে বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। ওই এলাকায় কোনও পুলিশ কিয়স্ক বসানো যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা চলছে। মোটরসাইকেলে টহলদারি বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।” |