ছ’শো শয্যাবিশিষ্ট বারাসত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা হাসপাতাল। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সব ওয়ার্ড মিলিয়ে তিনশো থেকে সাড়ে চারশো রোগী এখানে নিয়মিত ভর্তি থাকেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, তাঁদের থাকার জন্য এখানে কোনও বিনামূল্যের সরকারি প্রতীক্ষালয় নেই। তাই রোগীর স্বজনদের রাত কাটাতে হয় হাসপাতাল সংলগ্ন খোলা মাঠে। রোগীর পরিবারের লোকজনদের জন্য নির্মিত প্রতীক্ষালয় বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশ চৌকি হিসাবে।
বহু দূরের রোগীদের পক্ষে রোজ বাড়ি থেকে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও গুরুতর অসুস্থ রোগীর পরিজনেরা সাধারণত রোগীর ওয়ার্ডের যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকতে চান। কিন্তু হাসপাতালে বিনামূল্যের কোনও সরকারি প্রতীক্ষালয় না থাকায় তাঁদের চূড়ান্ত দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। |
তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ নির্মিত একটি প্রতীক্ষালয় রয়েছে হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে। এখানে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। ওই প্রতীক্ষালয়ে শয্যা রয়েছে ১৬টি। প্রতীক্ষালয় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। প্রতীক্ষালয় থেকে উপার্জিত অর্থ পান তাঁরাই, কিন্তু ওই প্রতীক্ষালয়ের জল ও বিদ্যুতের খরচ বহন করতে হয় হাসপাতালকেই।
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, যত মানুষকে হাসপাতাল চত্বরে রাত কাটাতে হয়, ভাড়া দিলেও তাঁদের সবার থাকার জায়গা ওই প্রতীক্ষালয়ে হবে না। তা ছাড়া, দরিদ্র পরিবারের অনেকের পক্ষে ভাড়া দিয়ে থাকা সব সময় সম্ভব হয় না। তাই রাত কাটাতে হয় হাসপাতাল সংলগ্ন খোলা মাঠে। রোদ আর বৃষ্টিতে গাছতলা আর হাসপাতাল ভবনের আনাচ-কানাচে ঠাঁই নিতে হয়। চাকলা থেকে আসা কবিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা কয়েক দিন রয়েছি। হয়তো আরও দিন কয়েক থাকতে হবে। প্রতীক্ষালয়ে থাকার খরচ বাঁচিয়ে তা দিয়ে রোগীর ওষুধ কিনতে পারব। তাই মাঠেই থাকছি। বৃষ্টি হলে কী হবে জানি না।” |
অন্য দিকে, হাসপাতাল চত্বরের মধ্য দিয়ে রাস্তা রয়েছে সংলগ্ন বাজার, বিজয় নগর, বিধান পার্ক প্রভৃতি এলাকায়। হাসপাতাল চত্বর ঘেরা না থাকায় গভীর রাত পর্যন্ত বাইরের লোকজনেরও যাতায়াত চলে হাসপাতাল চত্বরের মধ্য দিয়ে। বেড়াচাঁপার বাসিন্দা শঙ্কর পাড়ুই বললেন, “ছেলে ভর্তি। তাই দিন পাঁচেক হল এই মাঠেই থাকছি। এক দিন সকালে উঠে দেখি জল খাওয়ার গ্লাস চুরি হয়ে গিয়েছে।”
বারাসত জেলা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সংগঠনের সম্পাদক অশোককুমার পালিত বলেন, “প্রশাসনের গাফিলতিতে হাসপাতাল চত্বরে কার্যত অরাজকতা চলে। হাসপাতালের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ চৌকির ব্যবস্থা থাকলেও অবৈধ দোকানপাটে ভরে গিয়েছে হাসপাতাল চত্বর।” হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য অল্প খরচার প্রতীক্ষালয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। বাইরে যাঁরা থাকেন তাঁরা ওখানে যেতে চান না বলেই থাকেন। নিখরচায় থাকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে নেই। পরবর্তীকালে পুলিশ ব্যারাক তৈরি হলে নিখরচায় থাকার ব্যবস্থা হবে। হাসপাতাল চত্বরে অসামাজিক কাজ ও অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযান হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই সব আবার শুরু হয়ে যায়।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীল বললেন, “রোগীর পরিজনদের থাকার ব্যবস্থা নেই এমন অভিযোগ ঠিক নয়। এটা ঠিক যে পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতাল পুরো ঘিরে দেওয়া সম্ভব নয়।” |