|
|
|
|
এত কঠিন প্রশ্নপত্র ভারত নিজেরাই তৈরি করেছে |
দীপ দাশগুপ্ত |
আমি ধোনি হলে নির্ঘাত মাথায় হাত দিয়ে বসতাম। টেস্টের বাকি মাত্র চার দিন, অথচ সামনে গোছা গোছা প্রশ্নের ঝুড়ি। বীরু কি আদৌ ফিট? নর্দাম্পটনশায়ারের সঙ্গে প্র্যাক্টিস ম্যাচে ও আট করেছে শুনলাম। যথেষ্ট? গম্ভীরের চোটের কী অবস্থা? ও কি এজবাস্টনে ওপেনার? শুক্রবার নর্দাম্পটন ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া মুকুন্দকে বাদ দেওয়া যাবে? বোলিং নিয়ে যত কম বলা যায়, তত ভাল। জাহির খেলবে কি না বলা যাচ্ছে না। হরভজন নেই। ইংল্যান্ডের কুড়িটা উইকেট কে তুলবে? ইশান্ত, শ্রীসন্থ, প্রবীণ কুমাররা বড়জোর মন্দের ভাল, কিন্তু কুড়ি উইকেট তোলার মতো ‘খুব ভাল’ নয়।
কে বলবে এই টিমটাই টেস্টের এক নম্বর দল! ক্যাপ্টেন ধোনি এবং ওর এই দলটাকে এতটা দিশেহারা আগে কখনও দেখিয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা টেস্টের চার দিন আগেও বলা যাচ্ছে না ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ কী হবে। আসলে এই সিরিজটার জন্য প্রস্তুতি এত কম হয়েছে যে দু’দুটো টেস্ট খেলে ওঠার পরেও কাঁড়ি কাঁড়ি প্রশ্ন থাকছে। উল্টো দিকে ইংল্যান্ডকে দেখুন। জুলাইয়ের শেষটা ইংল্যান্ডে ‘সেকেন্ড হাফ অব দ্য সামার’। এই সময়টায় ও-দেশের পিচে এত মুভমেন্ট কিছুটা অপ্রত্যাশিত। বোঝাই যাচ্ছে স্ট্রসরা এই সিরিজের কথা মাথায় রেখে পিচগুলো তৈরি করেছে। এক নম্বর হওয়ার সুযোগটা আসছে বুঝে হোমওয়ার্কে কোথাও কোনও রকম ঘাটতি রাখেনি। যাকে বলে আঁটঘাট বেঁধে নামা। ভারত তা হলে কী করছিল? বিদেশে লম্বা সফরে গেলে সেখানকার উইকেট সিরিজের সময় কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে হোমওয়ার্ক এখন সব টিমই করে। ভারতও করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হল, ক্রীড়াসূচিটা এমন যে, সেই সুযোগটাই পায়নি ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে টিম ওখানে গিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু তার পরেও তো প্রশ্ন থাকছে। গম্ভীরকে তো ইংল্যান্ডে রিহ্যাবে পাঠানো যেত। জাহির খান কাউন্টি ক্রিকেট খেলে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে পারত না? জাহির এমনই এক জন বোলার, যে যত বল করবে তত নিজের ফিটনেস ফিরে পাবে। কেন ও নিজে ইংল্যান্ডে স্থানীয় ক্রিকেট খেলতে গেল না?
সচিন মাসখানেক ধরে ইংল্যান্ডে ছিল ঠিকই। ওর সমস্যাটা একেবারে অন্য জায়গায়। যে লোকটা ৯৯টা সেঞ্চুরি করেছে তার কাছে আর একটা শতরান কি খুব বড় ব্যাপার? আজ না হোক, কাল করবে। এই নিয়ে আমরাই সচিনের উপর অহেতুক চাপ তৈরি করছি। মিডিয়া এত বেশি হাইপ তৈরি করেছে যে এর প্রভাব সচিনের ব্যাটিংয়ে পড়ছে। লর্ডসের দ্বিতীয় ইনিংসটার কথা ধরা যাক। কখনও সচিনকে অত কুঁকড়ে থেকে খেলতে দেখিনি। যেন একটা খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। এজবাস্টনে ওর একেবারে খোলা মনে ব্যাটিংটা করা দরকার। আর যত সেটা করবে, তত লাভ টিমের।
সচিন নয়, সবচেয়ে বেশি চাপে কিন্তু ধোনি। ও হল ব্যাটিং-কিপিং-অধিনায়কত্ব মিলিয়ে একটা প্যাকেজ। এত দিন এই তিনটের মধ্যে একটা কিছু খারাপ হলে বাকি দুটো দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিত। এই সফরে তিনটের কোনওটাই ক্লিক করছে না বলেই এত ঝামেলা। এত ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন্সি করতে ওকে আগে দেখিনি। সিরিজ যেখানে দাঁড়িয়ে, এজবাস্টনে হয় এসপার, নয় ওসপার। খেলাধুলোয় এই রকম পরীক্ষার সামনে সবাইকেই দাঁড়াতে হয়। আর যে চ্যাম্পিয়ন, সে ঠিক নিজেকে প্রমাণ করে বেরিয়ে আসে। সামনে কঠিন প্রশ্নপত্র, এক নম্বরের মুকুট ধরে রাখার যুদ্ধ। এক নম্বর টিমের ইগো ঠিক কতটা, তার পরীক্ষাই কিন্তু এজবাস্টনে ধোনি অ্যান্ড কোংকে দিতে হবে। |
|
|
|
|
|