|
|
|
|
১০ই শুনানি ভূমি দফতরে |
জমি-জট কাটলে তবেই জিন্দল প্রকল্প নিয়ে কথা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জমি নিয়ে সমস্ত জট খোলার পরেই জিন্দলদের সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় বসবে রাজ্য সরকার। জিন্দল প্রকল্পের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, জমি সংক্রান্ত যাবতীয় আইন মেনেই প্রকল্পের কাজ এগোতে হবে।
শুক্রবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে শালবনিতে জিন্দল প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় বসেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দিনী চক্রবর্তী, ভূমি সংস্কার কমিশনার আর ডি মিনা এবং জেএসডব্লু বেঙ্গলের কর্তা বিশ্বদীপ গুপ্ত। বৈঠক শেষে পার্থবাবু বলেন, “জমি নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছে। আগামী ১০ অগস্ট ওই দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। বিষয়টির নিষ্পত্তি হলেই পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় বসবে সরকার।”
২০০৫ সালে বিগত রাজ্য সরকারের সঙ্গে মউ সই হলেও জমির লিজ চুক্তি হয়নি। জমির ঊর্দ্ধসীমা আইন অনুযায়ী শিল্পের জন্য বাড়তি জমি রাখার প্রয়োজনীয় অনুমোদনও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, ২৫ একরের বেশি জমি রাখতে ১৪ ওয়াই ধারায় আবেদন করতে হয়। এবং এই অনুমোদন ছাড়া লিজ চুক্তি হয় না। তাই এই জটেই আপাতত জিন্দল প্রকল্প আটকে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। সংস্থা সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে প্রথম বার ১৪ ওয়াই ধারায় ওই ছাড়পত্র পাওয়ার আবেদন জানায় তারা। কোনও সাড়া না পাওয়ায় ফের ২০১০ সালে এই আবেদন করে তারা। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মতে, ওই ছাড়পত্র না নিয়ে জমি হাতে নেওয়া বা কাজ শুরু করাটাই আইনি ভাষায় ভুল। শালবনি প্রকল্পের জমিতে ইতিমধ্যে পাঁচিল দেওয়ার কাজ হয়েছে।
জিন্দল কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৪ ওয়াই সংক্রান্ত অনুমোদন ছাড়া বাকি সব ছাড়পত্র তাদের রয়েছে। তবে তাদের আশা, এই সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে। আগামী ১০ অগস্ট ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ডাকা শুনানিতে হাজির হবে সংস্থা। সেই শুনানিতেই সমাধান সূত্র বেরোবে বলে মনে করছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। বিশ্বদীপ গুপ্ত বলেন, “বর্ষা শেষে অক্টোবর মাসেই কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে। প্রকল্পের জন্য টাকা জোগাড়ের প্রক্রিয়া শেষ। জমির দলিল হাতে এলেই টাকা পাওয়া যাবে। ইস্পাত কারখানা ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ একসঙ্গেই শুরু হবে।” এই বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ অর্থাৎ নিজেদের ব্যবহারের জন্যই তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জিন্দলদের এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন মোট ৪৩৩৪ একর জমি। এর মধ্যে ৩০৩৫ একর খাস জমি। ৭৯৯.৯৭ একর জমি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর থেকে নিয়ে সংস্থাকে দিয়েছে রাজ্য। ১৮৯.৬২ একর জমির পাট্টা মালিকদের থেকে কিনে নেয় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। ২০১০ সালের জুন মাসে সেই জমি সংস্থাকে দেয় নিগম। সংস্থা সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ধাপে ধাপে যে জমি জিন্দলদের হাতে তুলে দিয়েছিল, তার মধ্যে ১৩৮ একর বনজমি ছিল। পরিবেশগত কারণে তা ফেরত নিয়ে তার বদলে শেষ কিস্তির জমি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ ছাড়া, ২৯৪.৬৪ একর জমি সরাসরি কিনে নেয় সংস্থা। ১৪.৬৬ একর জমি এখনও কেনা বাকি রয়েছে।
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র সইয়ের পরে সজ্জন জিন্দল জানিয়েছিলেন সব মিলিয়ে এক কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন হবে এই কারখানায়। এ জন্য প্রায় পাঁচ হাজার একর জমি প্রয়োজন হবে। তবে প্রথম পর্যায়ে উৎপাদন হবে ৩০ লক্ষ টন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় দশ হাজার। জমি পাওয়ার পর কাজ শেষ হতে ৩৬ মাস সময় লাগবে। এ ছাড়া সেখানে ৩০০ মেগাওয়াটের নিজস্ব একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পও গড়ার কথা।
তবে এই প্রকল্প বারে বারে বাধার মুখে পড়েছে। ২০০৮ সালের ২রা নভেম্বর প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শিলান্যাসের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে প্রকল্পের অদূরেই মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা। সংস্থা সূত্রে জানানো হয়, এর পরে ২০০৯ সালে মন্দার কারণে তৈরি হয় আর্থিক সমস্যা। মন্দা ও ইস্পাতের পড়তি চাহিদার কারণে এই প্রকল্পের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। |
|
|
|
|
|