|
|
|
|
শিবপুরে সেতুর উপরে ‘হামলা’য় জখম যুবক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সেতুর উপর থেকে আর্তনাদ শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছিলেন পাড়ার লোকেরা। দেখেন, এক যুবক দু’হাতে গলা চেপে রাস্তায় শুয়ে ছটফট করছে। গলা, হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। আহত ব্যক্তি জানান, তাঁকে ছুরি মেরে মোটরবাইক, টাকা-পয়সা, মোবাইল ছিনিয়ে পালিয়েছে পাঁচ দুষ্কৃতী, যাদের মধ্যে তিন জন তাঁর পরিচিত। সঙ্গে সঙ্গেই থানায় ফোন করেন উদ্ধারকারীরা। অভিযোগ, পুলিশ আসে দেড় ঘণ্টা পরে। রক্তাক্ত যুবকের রাস্তায় পড়ে থাকার খবর পেয়েও কেন তারা দেরিতে এল, তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। বরং পুলিশের তরফে সন্ধ্যায় পুরো ঘটনাটিকেই এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত যুবকের কাণ্ড বলে দাবি করা হয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। |
|
হাসপাতালে কৌশিক। নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন আর্তনাদ শুনে যাঁরা সেতুর উপরে ছুটে গিয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই স্থানীয় ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা। উদ্ধারকারীদের অভিযোগ, শিবপুর থানায় ফোন করার পরে প্রায় এক ঘণ্টা ঘটনাস্থলে অপেক্ষার পরেও সেতুর নীচের ফাঁড়ি থেকে কেউ আসেননি। এমনকী ঘটনার সময়ে ওই রাস্তায় কোনও ট্রাফিক পুলিশেরও দেখা মেলেনি। অগত্যা তাঁরাই ট্যাক্সি ভাড়া করে আহত যুবকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর দেন তাঁর বাড়িতেও। পুলিশ আসে তারও প্রায় আধঘণ্টা পরে।
স্থানীয় বাসিন্দা অলোক গুপ্ত বলেন, “থানায় জানানোর পরেও কেন অতক্ষণ পুলিশ এল না, বুঝতে পারলাম না। তা বলে তো জখম যুবকটিকে রাস্তায় ফেলে রাখতে পারি না।” পুলিশ জানায়, আহত ওই যুবকের নাম কৌশিক বসু। নরসিংহ দত্ত কলেজের বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়াকে দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গলায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন কৌশিক। তিনি বলেন, “ওদের তিন জনকে আমি চিনি। ওরা জগাছাতেই থাকে। ওদের নাম বান্টি, শৌভিক ও মনোজিৎ। বাকি দু’জনকে অবশ্য চিনি না।” পুলিশের কাছে ওই জখম যুবক অভিযোগ করেছেন, এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ জগাছার বাড়ি থেকে তিনি মোটরবাইকে সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধরে শালিমারে এক বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
আন্দুল অ্যাপ্রোচ রোডের ফুটপাথে বসে পাঁচ যুবক মদ্যপান করছিল। মোটরবাইক নিয়ে কাছাকাছি পৌঁছতেই ওই যুবকেরা তাঁর পথ আটকায়। আচমকা এক জন তাঁর মাথায় মদের বোতল দিয়ে সজোরে আঘাত করলে তিনি মোটরবাইক থেকে রাস্তায় পড়ে যান। এর পরে ওই যুবকেরা তাঁর টাকা-পয়সা, মোবাইল ও ঘড়ি কেড়ে নেয়। তাঁর গলায় ছুরিও চালিয়ে দেয়। আর্তনাদ করে উঠতেই ছিনতাইকারীরা তাঁর মোটরবাইক নিয়ে আন্দুলের দিকে পালিয়ে যায় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান কৌশিক।
কিন্তু দুপুরের ওই ঘটনার পর থেকে আক্রান্ত ওই যুবক ছিনতাই হয়েছে বলে দাবি করলেও দিনের শেষে পুলিশ যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে বিস্তর ফারাক। কারণ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে কোনও ছিনতাইয়ের ঘটনাই ঘটেনি। ওই যুবক সম্ভবত ঘটনাটি বানিয়ে বলছেন।
কিন্তু কেন বানিয়ে বলবেন কৌশিক? জেলা পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ছেলেটির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ওই যুবক মানসিক অবসাদে ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাই ছিনতাইয়ের অভিযোগ পুরোপুরি সত্য, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।” |
|
|
|
|
|