|
|
|
|
অপহরণের গল্প ফেঁদেই জালে |
স্ত্রীর সামনেই স্বামীকে সপাটে চড় কষালেন স্ত্রী |
শমীক ঘোষ • কলকাতা |
শুক্রবার সকাল ন’টা। স্ত্রীর সঙ্গে গালগল্প করছেন বছর পঁয়তাল্লিশের মানুষটি। হঠাৎ ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এক যুবতী।
প্রথমেই বিরাশি সিক্কার এক থাপ্পড়। তার পর কিল-চড় তো আছেই।
স্বামীকে বেমক্কা মার খেতে দেখে ছুটে এলেন স্ত্রী। “আমার স্বামীর গায়ে হাত তুলছেন কেন?”
রাগে জ্বলতে জ্বলতে বছর ছাব্বিশের মেয়েটির উত্তর, “এর কীর্তি জানেন! নাম ভাঁড়িয়ে গত বছর ও বিয়ে করেছে আমাকে!” |
|
তিন জনকে জেরা করে চোখ কপালে পুলিশেরও! এ তো বিলকুল গোবিন্দা-করিশ্মা-তব্বু অভিনীত ‘সাজন চলে সসুরাল’-এর চিত্রনাট্য। সেখানে না হয় গোবিন্দা জানতেন, করিশ্মা মারা গিয়েছেন! তার পর তব্বুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে। পরে করিশ্মাকে খুঁজে পেয়ে কী করবেন, ঠিক করতে পারেননি! দু’জায়গায় দু’টি সংসার পেতে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছিলেন!
গত সাত মাস ধরে এই কীর্তি চালিয়ে যাচ্ছিলেন সুরজিৎ নন্দীও। হাওড়ার চুনাভাটি রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দাটি দুই স্ত্রীকেই বলেছিলেন, তিনি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মী। মাঝে মাঝেই তাঁকে কাজের সূত্রে বাইরে যেতে হয়। বাইরে যাওয়ার নাম করেই দু’টি সংসারে দিব্যি স্বামীগিরি করে যাচ্ছিলেন তিনি! পুলিশ অবশ্য জেনেছে, সুরজিৎ আসলে কোনও চাকরিই করেন না!
২০০২ সালে সুরজিতের সঙ্গে বিয়ে হয় সুনীতা নন্দীর। হাওড়ার বাড়িতেই তাঁদের সংসার। এর মধ্যে গত বছর সুরজিত বিয়ে করেন শ্রাবণী মিত্রকে। পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে রেহান আহমেদ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন সুরজিৎ। গত বছর ডানলপ এলাকার একটি মসজিদে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রাবণীকে। শ্রাবণী ধর্ম পরিবর্তন করে নাম নেন, রেশমি আহমেদ। তাঁরা দু’জনে ডানলপ এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। পুলিশের সন্দেহ, কর্মরতা শ্রাবণীর আয় এবং তাঁর দু’টি পৈতৃক ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়েই বিয়েটা করেছিলেন সুরজিৎ। শ্রাবণী জানতেন, অফিসের কাজে সুরজিৎকে মাঝে-মধ্যে বাইরে যেতে হয়। আদতে সুরজিৎ তখন হাওড়ার বাড়িতে প্রথম পক্ষের স্ত্রী সুনীতার সঙ্গে কাটিয়ে আসতেন। সুনীতাও জানতেন তাঁর স্বামী বাইরে কাজ করেন। তিনিও তাই সন্দেহ করেননি। |
সুরজিৎ নন্দী
|
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না! পুলিশ জানায়, বেকার সুরজিৎ মাঝেমধ্যেই নানা গল্প ফেঁদে টাকা নিতেন শ্রাবণীর কাছ থেকে। সেটাও চলছিল ভালই। কিন্তু সুরজিৎ গণ্ডগোলটা করে ফেললেন অপহরণের গল্প ফাঁদতে গিয়ে! কী রকম? কিছু দিন আগে শ্রাবণীকে নিয়ে সুরজিৎ নবদ্বীপের একটি অতিথিশালায় ওঠেন। তার পর পাওনাদারেরা খোঁজ করছে বলে অজুহাত দেখিয়ে ওই অতিথিশালা থেকে অন্যত্র গা-ঢাকা দেন। শ্রাবণী কিন্তু নবদ্বীপেই থেকে গিয়েছিলেন। ৩১ জুলাই সুরজিৎ তাঁর মোবাইল থেকে এসএমএস পাঠান। তাতে লেখা, ‘আমাকে অপহরণ করা |
|
হয়েছে। ওরা মুক্তিপণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা চাইছে। কবে, কোথায় ওই টাকা দিতে হবে, তা পরে জানাচ্ছি।’ এসএমএস পেয়ে স্বভাবতই ভয় পেয়ে যান রেশমি। সটান নবদ্বীপ থানায় গিয়ে ঘটনাটা জানান তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের একটি মামলাও দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ দেখে পুলিশ জানতে পারে, সুরজিৎ রয়েছেন হাওড়ার নাজিরগঞ্জ থানার চুনাভাটি এলাকায়। শ্রীরাধে-চন্দ্রাবলীর কাহিনি এর পরই দ্রুত পৌঁছয় ক্লাইম্যাক্সে। পুলিশ শ্রাবণীকে জানায়, সুরজিৎ চুনাভাটিতে রয়েছেন। এর মধ্যেই অন্য একটি সূত্র ধরে চুনাভাটিতে সুরজিতের ঠিকানা জোগাড় করেন শ্রাবণীও। শুক্রবার সকালে ঠিকানা খুঁজে তিনি হাজির হন রামকৃষ্ণপল্লির বাড়িতে। সেখানে সুরজিতকে আবিষ্কার করে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। স্তম্ভিত সুনীতাও। গোলমাল শুনে এসে পড়েন পাড়াপড়শিরা। খবর যায় নাজিরগঞ্জ থানায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যায় পুলিশ।
পুলিশের কাছে প্রথমে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শ্রাবণী। কিন্তু ঘটনাটি অন্য দিকে মোড় নেওয়ায় মামলাটি আর অপহরণের থাকছে না। সুরজিৎকে যে অপহরণ করা হয়নি, সেটা আদালতে জানাবে নদিয়া জেলার পুলিশ। আদালতে হাজির করাতে সুরজিৎকে নবদ্বীপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শ্রাবণী সুরজিতের বিরুদ্ধে প্রতরণার মামলা দায়ের করলে, তাঁর বিরুদ্ধে নতুন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|