অসমের ‘সার্বভৌমত্ব’ চেয়ে দীর্ঘ ৩২ বছর রক্তাক্ত লড়াই চালানোর পরে, অবশেষে সেই দাবি থেকে সরে এল আলফা। শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা হিসাবে আলফা নেতৃত্ব আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের হাতে ১২ দফার যে দাবি-সনদ তুলে দিয়েছে, তাতে বিচ্ছিন্নতার দাবি রাখা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরে অসমের জঙ্গি সংগঠনটির সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া বলেন, “সার্বভৌম শব্দটিকে অন্য ভাবে দেখতে হবে। অসমের জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে অসমীয়দের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে যদি তা অর্জন করা যায়, ক্ষতি কী?” আলফার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শশধর চৌধুরীও বলেন, তাঁরা অসমের হাতে আরও ক্ষমতা চান, তবে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়।
তবে, সার্বভৌমত্বের দাবি ছেড়ে দেওয়ায় এই আলোচনা প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন আলফার সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়া। ‘স্বাধীন, সার্বভৌম অসম’ গড়ার লক্ষ্যে অনুগতদের নিয়ে ‘লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। শান্তি প্রক্রিয়ার নামে রাজখোয়া-শশধররা ভারত সরকারের কাছে বিকিয়ে গিয়েছেন বলেও অজ্ঞাত জায়গা থেকে ই-মেল বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন পরেশ। তবে, পরেশের বক্তব্যকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে জানিয়ে রাজখোয়া বলেছেন, আলফা নেতৃত্ব এই মত স্বীকার করেন না।
আজকের বৈঠকে আলফা নেতৃত্ব এবং চিদম্বরম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। দাবি সনদে যে বিষয়গুলির উল্লেখ রয়েছে সেগুলি হল: অসমের জাতি বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করা, আলফার ‘সংগ্রাম’কে মর্যাদা দেওয়া, নিখোঁজ আলফা নেতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ, খনিজ সম্পদের উপরে অসমীয়দের অধিকার রক্ষা, বিশেষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্ত সিল করা, কৃষি-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজা, শিল্পের বিকাশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন এবং আলফা সদস্যদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। স্বাধীন অসমের স্বপ্ন ছেড়ে এ বার উন্নত অসম গড়ার লক্ষ্যেই এগোতে চাইছেন আলফা নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, নতুন অসমে মানুষের হাতে থাকবে আরও অনেক বেশি ক্ষমতা। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের জন্যও চিদম্বরমকে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজখোয়া। শশধর চৌধুরীর কথায়, “কেন্দ্রের কাছ থেকে আমরা আজ এই আশ্বাসও পেয়েছি যে দরকার হলে সংবিধান সংশোধন করা হবে।” মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, “প্রয়োজন হলে আইন বদলানো হবে। তবে প্রাথমিক লক্ষ্য হবে সংবিধানের আওতার মধ্যেই শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা।” বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বুধবার জানিয়েছিলেন, রাজশাহির জেলে বন্দি আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ভারতে ফেরত পাঠাতে তাঁদের আপত্তি নেই। শশধর চৌধুরী বলেন, “কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে আসছেন চেটিয়া। তিনি এই শান্তি প্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এই শান্তি উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে চেটিয়ার।” |