কমনওয়েলথ গেমস পরিচালনায় টাকা নয়ছয়ের ব্যাপারে এ বার প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও (পিএমও) টেনে আনল সিএজি রিপোর্ট। দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধেও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক জন মন্ত্রীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও গেমস পরিচালনের সর্বোচ্চ দায়িত্ব সুরেশ কলমডীকেই দেওয়া হয় পিএমও-র সুপারিশে। এবং পরে বিপুল টাকা অপচয় ও নয়ছয়ের ঘটনা ঘটে।
২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমস পরিচালনায় প্রচুর ‘অনিয়ম’ ও ‘পক্ষপাতিত্ব’ ঘটেছিল বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। বিশেষ করে গেমস ভিলেজ নির্মাণ, পরিকাঠামো গড়ে তোলা, দিল্লির সৌন্দর্যায়ন, সম্প্রচারের স্বত্ত্ব বিক্রির মতো বিপুল টাকার প্রকল্পে অনেককে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাজারের চালু দরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশিতে রাস্তা তৈরি, আলো লাগানোর কাজ করানো হয়েছে। সরকারি অডিটার স্পষ্ট জানিয়েছেন, গেমস পরিচালনায় ছোট কমিটিগুলির মধ্যে সমন্বয়ের কোনও ব্যাপারই ছিল না। কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে যার খুশি মতো টাকা খরচ করেছে এবং নির্দিষ্ট হিসেব দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই বোধ করেনি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে কলমডীর নাম গেমস পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পিএমও থেকে প্রস্তাবিত হওয়ার পর তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুনীল দত্ত তীব্র আপত্তি জানান। এর পর ২০০৭ সালে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী মণিশঙ্কর আইয়ার, ক্রীড়াসচিব এস কে অরোরা এবং বেশ কয়েক জন মন্ত্রীও অভিযোগ জানান। বলেন, এত বড় একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান পরিচালনায় খোদ ক্রীড়া মন্ত্রকেরই কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু খোদ পিএমও-র সায় থাকায় অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। |
রিপোর্ট জানাচ্ছে, পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে টাকা যথেচ্ছ ভাবে ‘অপচয়’ করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সরকারের বিরুদ্ধেও। যেমন, কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ৪.৮ কোটি টাকা। যা প্রায় অকল্পনীয়। বেশি দরে রাস্তায় আলো লাগানোর ক্ষতি হয়েছে ৩১.০৭ কোটি টাকা। গেমস আয়োজনের কাজে ব্যবহারের জন্য টেট্রা মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থাকে সাত বছরের জন্য ৯৯.৮১ কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করা হয়েছে সিএজি রিপোর্টে। আবার, গেমস সম্প্রচারের জন্য জুম কমিউনিকেশনকে ১৭৭.৩০ কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ২৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে প্রসার ভারতীর। কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে সিএজি রিপোর্ট আসার পরেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ইস্তফার দাবিতে সরব হল বিজেপি। কাঠগড়ায় দাঁড় করাল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ভূমিকাও তদন্তের দাবিও জানিয়েছে বিজেপি। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, “আগামী সোমবার সংসদের অধিবেশনের আগে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসে স্থির করবেন, এই বিষয়ে দলের কৌশল কী হবে। কতটা আক্রমণাত্মক হবে বিজেপি।”
কৌশল চূড়ান্ত করার আগেই আজ বিজেপির মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “সিএজি রিপোর্টে স্পষ্ট কমনওয়েলথে বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে। দিল্লি সরকারের দুর্নীতিও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাই অবিলম্বে শীলা দীক্ষিতের ইস্তফা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী দফতরও এই দুর্নীতিতে সামিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ভূমিকাও তদন্ত করা উচিত।” |