রাজনৈতিক সর্বসম্মতির অভাবের কারণ দেখিয়েই পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখল কেন্দ্র। লোকসভায় এক দৃষ্টি আকর্ষণ প্রস্তাবের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পৃথক রাজ্য গঠনের প্রশ্নে অন্ধ্রপ্রদেশে রাজনৈতিক সর্বসম্মতি গড়ে উঠলে তবেই কেন্দ্র এ বিষয়ে সর্বদল বৈঠক ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারে। তা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা নেই। তবে পৃথক রাজ্যের প্রশ্নে কংগ্রেসও যে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি, তা-ও আজ স্বীকার করে নিয়েছেন চিদম্বরম।
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ১৩ জন কংগ্রেস সাংসদ ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকারের কাছে তাঁদের ইস্তফা দিয়েছেন। তবে তাঁদের ইস্তফা এখনও গৃহীত হয়নি। কিন্তু তেলেঙ্গানা পর্ব যে রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। কংগ্রেসের সমস্যা আরও বাড়াতেই আজ লোকসভায় পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ প্রস্তাব আনেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ।
সুষমার বক্তব্য, অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে তেলেঙ্গানার মানুষের এই দাবি রয়েছে। এমনকী দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও সে কথা বুঝেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়ে ভোটে সুবিধা নিলেও, শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছে। এমনকী ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, পৃথক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া এবার শুরু হবে। এই বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ কমিটির রিপোর্ট নিয়েও কেন্দ্রের সমালোচনা করেন বিজেপি নেত্রী। বলেন, কমিটি কেন্দ্রকে একটি গোপন রিপোর্টও দিয়েছে। রিপোর্টটি সরকার প্রকাশ করেনি। শ্রীকৃষ্ণ কমিটির নয়, রিপোর্টটি যেন কংগ্রেস হাইকমান্ডের। চিদম্বরমও পাল্টা কৌশলে বিজেপি-কে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করেন। তাঁর কথায়, ২০০২ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছিলেন, রাজনৈতিক সর্বসম্মতি না
থাকায় পৃথক রাজ্য গঠন করা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই বিজেপিই এখন ভোল পাল্টেছে।
বিতর্কে অংশ নিয়ে নাম না করে বিজেপি-র ভূমিকার সমালোচনা করেন সি পি আই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তও। তিনি বলেন, পৃথক রাজ্যের বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা কেউ না করলেই ভালো। সেই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, সি পি আই পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করে।
এর পরেই চিদম্বরম স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, অন্ধ্রপ্রদেশের আটটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি দল এখনও পর্যন্ত পৃথক রাজ্য গঠনের দাবির বিষয়ে তাদের মত জানিয়েছে। টি আর এস, বিজেপি এবং সি পি আই পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করছে। সি পি এম বিরোধিতা করছে। কিন্তু কংগ্রেস, তেলগু দেশম, ওয়াই এস আর কংগ্রেস এবং এম আই এম তাদের অবস্থান জানায়নি।
চুম্বকে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবির বিষয়টি ঝুলেই রইল শুধু নয়, আপাতত কেন্দ্র দায় ঝেড়ে ফেলতেও সচেষ্ট। |