রাজনীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে সৌজন্য?
নাকি সৌজন্য দেখানোর মধ্যেও রাজনীতিটা থেকেই যায়?
সংসদের অলিন্দে আজ এই প্রশ্নটা উঠেছে সনিয়া গাঁধীর শারীরিক অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে গত কাল থেকে যে ভাবে দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সহানুভূতি আর শুভেচ্ছার বার্তা উপচে পড়ছে দশ জনপথে।
কংগ্রেস সভানেত্রীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে ফোন করে আজ সনিয়া গাঁধীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পটেলকে মমতা বলেন, “ঈশ্বরের কাছে সনিয়াজির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।” শুধু তাই নয়, রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, আহমেদ পটেল ও কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। যাতে কংগ্রেস সভানেত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান।
স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল নেত্রীর ফোন পেয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব খুশি। বস্তুত কংগ্রেসের অনেক শীর্ষ নেতাই মমতাকে কংগ্রেস পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন। তা ছাড়া, পৃথক দল গড়লেও গাঁধী পরিবারের সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন মমতা। সনিয়া গাঁধীও মমতার প্রতি সহানুভূতিশীল। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, সেই সম্পর্কের জায়গা থেকে মমতা আজ আহমেদকে ফোন করেছেন ঠিকই। কিন্তু এ-ও ঠিক, পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজকে কেন্দ্র কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, আজকের ফোন তা লঘু করতে অনুঘটকের কাজ করবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কেন্দ্রে কংগ্রেসের শরিক। চরম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও গত কাল থেকে কংগ্রেস সভানেত্রীকে একের পর এক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সেই তালিকায় প্রথম নামটি অবশ্যই নরেন্দ্র মোদীর। টুইট করে তিনিই সবার আগে লিখেছেন, “উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।” ২০০৭ সালে গুজরাত নির্বাচনের সময় থেকেই দু’জনের সম্পর্ক বেশ তিক্ত। কিন্তু গত কাল মোদীর টুইটের পরে রাজনীতিতে সৌজন্যের বিষয়টি একেবারে অন্য মাত্রা পেয়েছে। বস্তুত বিজেপি নেতারা ঘরোয়া মহলে এ নিয়ে আজ আলোচনাও করেছেন। মায়াবতী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, চন্দ্রবাবু নায়ডু, জয়ললিতা-সহ প্রায় সকলেই সনিয়া গাঁধীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সনিয়া গাঁধীর অসুস্থতার বিষয়টি আজ উঠে এসেছে সংসদের আলোচনাতেও। লোকসভায় পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রশ্নে বিতর্কে অংশ নিয়ে তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ সর্বে সত্যনারায়ণ বলেন, “পৃথক রাজ্য নিয়ে সমস্যা মিটে যাবে। সনিয়া গাঁধী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলে তিনিই দিশা দেবেন। ঈশ্বর তাঁকে সুস্থ
করে তুলুন।”
পিছিয়ে থাকেননি আন্না হাজারেও। তাঁর কথায়, “লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি সনিয়া গাঁধীকে শ্রদ্ধা করি। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।” |